কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যন
অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য উপদেষ্টার পদ থেকে যে সুব্রহ্মণ্যন বিদায় নিয়েছেন, নিজের বইয়ে নোটবন্দিকে ‘নিষ্ঠুর ধাক্কা’ বলেছেন তিনি। আর তাঁর জায়গায় যে সুব্রহ্মণ্যনকে আনার কথা শুক্রবার ঘোষণা হল, তাঁর চোখে নোট বাতিল ‘বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত’। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার পদে অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যনের উত্তরসূরি হিসেবে কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যনকে বেছে নিল কেন্দ্র।
হায়দরাবাদের ইন্ডিয়ান স্কুল অব বিজনেসের (আইএসবি) অধ্যাপক কৃষ্ণমূর্তিকে পড়াশোনার জগৎ চেনে অর্থনীতি, ব্যাঙ্কিং, সংস্থা পরিচালনা ইত্যাদির প্রথম সারির বিশেষজ্ঞ হিসেবে। আইআইটি, আইআইএম হয়ে মার্কিন মুলুকে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের বুথ স্কুল অব বিজনেস— তাঁর পড়াশোনাও আগাগোড়া ‘কূলিন’ প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু এই কৃষ্ণমূর্তিই দু’বছর আগে নোট বাতিলের ঘোষণার ঠিক পরেই বলেছিলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এ এক বৈপ্লবিক সিদ্ধান্ত। শুধু তা-ই নয়, নিবন্ধ লিখেছিলেন এই প্রশ্ন তুলে যে, নোটবন্দির পরে কালো টাকা আর কালো থাকবে কি? তাঁর যুক্তি ছিল, এর ফলে নগদে লেনদেন কমবে। অবশ্যই কর ফাঁকির সুযোগও। এই কৃষ্ণমূর্তিকেই এ দিন ভোটের আগে অর্থনীতি চাঙ্গা করার মন্ত্রণাদাতা হিসেবে বেছে নিল মোদী সরকার।
কাকতালীয় ভাবে যে দিন কেন্দ্র এই ঘোষণা করছে, সে দিনই মুম্বইয়ে নিজের বই প্রকাশ করেছেন অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন। সংবাদমাধ্যমে যার কিছু অংশ প্রকাশিত হওয়ার পরে বিতর্ক হয়েছে বিস্তর। কারণ ওই সমস্ত প্রকাশিত অংশ অনুযায়ী জুলাইয়ে বিদায় নেওয়া অরবিন্দ লিখেছেন, নোটবন্দি নির্মম ধাক্কা। এর ফলে জোর ধাক্কা খেয়েছিল অর্থনীতি। বিশেষত অসংগঠিত ক্ষেত্র।
সরকারি সূত্রের খবর, অরবিন্দের মন্তব্যে বিরোধীরা হাতিয়ার পেয়ে যাওয়ায় অসন্তুষ্ট হন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দফতর থেকে যোগাযোগ করা হয় অরুণ জেটলির অর্থ মন্ত্রকে। জেটলি এতে অস্বস্তিতে পড়েন। এই কারণে আরও বেশি যে, বইয়ের প্রচ্ছদে অরবিন্দের সঙ্গে ছবি আছে তাঁরও। অনেকের প্রশ্ন, এই অস্বস্তি এড়াতেই কি আনা হচ্ছে নোট বাতিলের ‘সমর্থক’ অর্থনীতিবিদকে?
কৃষ্ণমূর্তি শুধু নোট বাতিলের ফলে দুর্নীতি দূর হবে বলেননি। এতে সাধারণ মানুষের হেনস্থার অভিযোগ ওঠার পরে তিনি আর এক নিবন্ধে বলেন, গরিব মানুষের এতে বিশেষ সমস্যা হচ্ছে না। তাঁদের ব্যাঙ্ক-এটিএমের লাইনেও দাঁড়াতে হচ্ছে না। কারণ, তাঁদের ঘরে তো বিশেষ নগদ টাকাই ছিল না। তাঁর মতে, যাঁরা লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন, তাঁরা মূলত ধনী অথবা ধনীদের হয়ে পুরনো নোট বদলে নিতে আসা এজেন্ট!
মতের অমিল থাকলেও, অরবিন্দ মুখ্য উপদেষ্টা থাকাকালীন কৃষ্ণমূর্তি তাঁর সঙ্গে কাজ করেছিলেন ২০১৫ সালের আর্থিক সমীক্ষা তৈরিতে। কলকাতার সঙ্গে তাঁর যোগ বলতে বন্ধন ব্যাঙ্কের বোর্ড ও এই শহরের আইআইএমে পড়াশোনা।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর থাকাকালীন সঙ্ঘ পরিবারের নিশানা হয়েছিলেন পিএইচডিতে কৃষ্ণমূর্তির শিক্ষক রাজন। তাঁকে তোপ দেগেছিলেন স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের অর্থনীতিবিদরাও। এ বার ‘ছাত্র’ কৃষ্ণমূর্তি এই সমস্ত চাপ কী ভাবে সামলান, তা-ও দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy