Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

জালিয়াতিতে জ়িরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট

ব্যাঙ্ককর্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণত জালিয়াতির প্রতিটি ধাপে আলাদা চক্র কাজ করে। এ ক্ষেত্রে টাকা সরানোর জন্য দু’টি পদ্ধতি ব্যবহার হয়।

তথ্য চুরি করতে এটিএম মেশিনে বসানো হয়েছে নকল কি-প্যাড।

তথ্য চুরি করতে এটিএম মেশিনে বসানো হয়েছে নকল কি-প্যাড।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:৩৩
Share: Save:

একের পর এটিএম প্রতারণার ঘটনা নিয়ে এখন উত্তাল রাজ্য। ব্যাঙ্কিং মহল সূত্রের খবর, এই প্রতারণায় অন্যের অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। অনেক সময়ে জেনে বা না-জেনেও জড়িয়ে পড়ছেন বিশেষত গ্রামের সাধারণ মানুষের একাংশ, যাঁদের জ়িরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্ট আছে।

ব্যাঙ্ককর্তারা জানাচ্ছেন, সাধারণত জালিয়াতির প্রতিটি ধাপে আলাদা চক্র কাজ করে। এ ক্ষেত্রে টাকা সরানোর জন্য দু’টি পদ্ধতি ব্যবহার হয়। এক, নকল এটিএম (ক্লোন) কার্ডের মাধ্যমে সরাসরি এটিএম থেকেই টাকা তোলা বা অন্য কোনও গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ নেওয়া। ব্যাঙ্কিং মহলের মতে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে যাঁদের ‘জ়িরো ব্যালান্স’ অ্যাকাউন্ট আছে, সেই সব গ্রাহকই প্রতারকদের লক্ষ্য। তাঁদের অ্যাকাউন্ট ‘ভাড়া’ নিয়ে প্রতারিত গ্রাহকের টাকা সেখানে পাঠানো হয় ও সঙ্গে সঙ্গেই তা তুলে নেওয়া হয়। সে জন্য সমস্ত ব্যাঙ্ক গ্রাহককেই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ব্যাঙ্ককর্তারা।

প্রশ্ন হল, এই প্রতারণা ঠেকাতে ব্যাঙ্কগুলি কী ব্যবস্থা নিচ্ছে? এক ব্যাঙ্ককর্তা বলেন, ‘‘ডেবিট কার্ড (নকল হলেও) ও পিন ব্যবহার করে এটিএম থেকে টাকা তোলা বা সরানো হলে তা রোখার জন্য আগাম ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, ওই লেনদেন গ্রাহক নিজে করছেন, নাকি প্রতারক করছে, তা বোঝা সম্ভব নয়।’’ তবে একই সঙ্গে তিনি জানান, প্রতিটি ব্যাঙ্কেরই ‘প্রোঅ্যাকটিভ রিস্ক মনিটরিং’ ব্যবস্থা রয়েছে। কোনও অ্যাকাউন্ট থেকে অল্প সময়ের মধ্যে ঘন ঘন টাকা তোলা হলে ওই ব্যবস্থায় তা ধরা পড়ে। তখন দ্রুত অ্যাকাউন্ট বন্ধ বা ব্লক করা হয়। জানানো হয় গ্রাহককেও। কিন্তু ওই টাকা কোন অ্যাকউন্টে জমা পড়ছে, তা দ্রুত চিহ্নিত করার মতো ব্যবস্থা চালু করা এখনও সম্ভব হয়নি।

প্রতারণার তিন ধাপ

প্রথম
• এটিএমে স্কিমার, ক্যামেরা বা নকল কি-প্যাড বসিয়ে ডেবিট কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তার মধ্যে থাকে নম্বর, পিন ইত্যাদি তথ্য।
• সেই তথ্য বিক্রি করা হয় অন্য এক দলের কাছে। তা হাতে হাতে বিক্রি অথবা বেআইনি নেট (ডার্ক ওয়েব) মারফত নিলাম করা হতে পারে।
• নেটে তথ্য বেচতে সাধারণত এ জন্য বিটকয়েনের মতো ডিজিটাল মুদ্রায় লেনদেন হয়। ব্যবহার করা হয় বেআইনি ওয়েবসাইট।

দ্বিতীয়
• বিক্রি হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয় নকল (ক্লোন) ডেবিট কার্ড।

তৃতীয়
সেই ক্লোন করা কার্ডের মাধ্যমে টাকা সরানো হয়। দু’ভাবে এই কাজ হয়—
• এক, সরাসরি এটিএম থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়।
• দুই, কার্ডের মাধ্যমে এটিএম থেকেই পিন ব্যবহার করে অন্য অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হয়। এ জন্য সাধারণত গ্রামাঞ্চলের মানুষের জ়িরো ব্যালান্স অ্যাকাউন্টগুলি ব্যবহার
করে প্রতারকেরা।

তবে স্টেট ব্যাঙ্কের এমডি অরিজিৎ বসুর দাবি, ‘‘চিপ যুক্ত নতুন এটিএম কার্ড এসেছে। এতে স্কিমিং, ক্লোনিংয়ের মতো প্রতারণা করা কঠিন।’’ তা ছাড়া, এখন ডেবিট কার্ড দিয়ে এটিএম থেকে টাকা পাঠাতে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) লাগে না। তবে তা শীঘ্রই চালু হবে বলে ব্যাঙ্কিং সূত্রের খবর। ব্যাঙ্কিং মহলের অনেকের আবার মত, এটিএমে টাকা তোলার ক্ষেত্রেও ওটিপি ব্যবস্থা কার্যকর হলে গ্রাহক সঙ্গে সঙ্গেই খবর পাবেন। পুলিশে জানাতে ও কার্ড ব্লক করতে পারবেন। হয়তো রোখা যাবে টাকা হাতানো।

প্রতিটি এটিএমে অ্যান্টি স্কিমিং ডিভাইস লাগানোর জন্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নির্দেশ দিলেও অধিকাংশ এটিএমে এখনও তা লাগানো হয়নি বলে অভিযোগ ব্যাঙ্ক অফিসারদের সংগঠন আইবকের রাজ্য সম্পাদক সঞ্জয় দাসের। ব্যাঙ্ক কর্মীদের সংগঠন এআইবিইএ-র সভাপতি রাজেন নাগরের দাবি, রক্ষীহীন এটিএমেই প্রতারণা বেশি হচ্ছে। এই দুই ব্যবস্থা দ্রুত কার্যকর হলে জালিয়াতি কিছুটা কমানো যাবে বলে তাঁদের মত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ATM Fraud Bank Fraud Skimming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE