Advertisement
E-Paper

ক্রেতার মন জয়ে অস্ত্র এ বার সমাজকল্যাণও

বিজ্ঞাপন, বিপণন এবং ওই দু’য়ের হাত ধরে ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা। এই পথে হেঁটে ক্রেতাদের মন জয়ের লড়াই জিততে কর্পোরেট দুনিয়ার বরাবরের পছন্দের ‘থিম’ দুর্গা পুজো।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৩৮
ছবি: গৌতম প্রামাণিক

ছবি: গৌতম প্রামাণিক

বিজ্ঞাপন, বিপণন এবং ওই দু’য়ের হাত ধরে ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা। এই পথে হেঁটে ক্রেতাদের মন জয়ের লড়াই জিততে কর্পোরেট দুনিয়ার বরাবরের পছন্দের ‘থিম’ দুর্গা পুজো। এ বার উৎসবের এই মরসুমে নিজেদের ব্র্যান্ড-নাম ক্রেতাদের মনে আরও পোক্ত করে গেঁথে দিতে সামাজিক দায়বদ্ধতার (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি বা সিএসআর) কর্মসূচিকেও হাতিয়ার করছে তারা।

বিভিন্ন সংস্থার বিপণন কৌশল জরিপ করে দেখলে বোঝা যাচ্ছে যে, তাদের বিজ্ঞাপনী বাজেটের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিচ্ছে সিএসআর খাতে বরাদ্দ। পুজো প্যান্ডেলে ব্যানার, হোর্ডিং, ভিআইপি পাস আর পুরস্কার দেওয়ার প্রথাগত প্রচার কৌশল থেকে কিছুটা সরে এসে সমাজকল্যাণ মূলক নানা প্রকল্পে নিজেদের নাম জড়ানোয় জোর দিচ্ছে ছোট-বড় অনেক সংস্থা। স্বতন্ত্র হতে চাইছে গতানুগতিক বিপণনের ভিড় থেকে। এবং এই তালিকায় রয়েছে পি সি চন্দ্র গোষ্ঠী, সেঞ্চুরি প্লাই, হাইটেক মোবাইল-সহ বিভিন্ন সংস্থা।

যেমন, বাংলার উঠোন টপকে পুজোকে আরও ব্যাপক ভাবে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে উদ্যোগী হয়েছে পি সি চন্দ্র গোষ্ঠী। চলতি বছরের গোড়া থেকে চারটি দেশে (সুইৎজারল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালি) পুজো নিয়ে রীতিমতো রোড শো করেছে তারা। এর অঙ্গ হিসেবে এ বার কলকাতায় পুজো দেখতে আসছেন ৮০ জন বিদেশি সাংবাদিকের দল। যাঁদের মাধ্যমে বিশ্বের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পারে বাঙালির সেরা উৎসব। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, এই কর্মসূচির জন্য প্রায় আধ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই খরচ করেছে সংস্থা।

বিপণন কর্তা অমিত জৈন বলেন, ‘‘পুজো কয়েক হাজার কোটি টাকার উৎসব। জাঁকজমক ও ভিড়ের নিরিখে তা যে কোনও সময় পাল্লা দিতে পারে ব্রাজিলের রিও কার্নিভালের সঙ্গে। কিন্তু আন্তর্জাতিক আঙিনায় রিওর কার্নিভালের যা পরিচিতি, তার তুলনায় বাংলার পুজো প্রায় অচেনা। তাই এখানে পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কাজের কাজ বিশেষ হয়নি।’’ পি সি চন্দ্র গোষ্ঠী মনে করে, বিশ্বের দরবারে পুজোর সঠিক বিপণন হলে, তা পর্যটনের বড় আকর্ষণ হয়ে উঠতে পারে। তা ছাড়া, এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন বহু হস্তশিল্পী, প্যান্ডেল নির্মাতা, মূর্তির কারিগর, ঢাকি, আরও অনেকে। পুজোর পরিচিতি বাড়লে, এঁরা উপকৃত হবেন। আর সেই কারণেই একে সিএসআরের তকমা দিচ্ছে পি সি চন্দ্র গোষ্ঠী।

সেঞ্চুরি প্লাই আবার মন দিয়েছে পুজোর সঙ্গে যুক্ত কারিগরদের বেহাল দশায়। বিভিন্ন পুজো কমিটির কাছে সেরা কাঠমিস্ত্রির নাম চেয়েছিল তারা। ২০০ জনের নাম জমা পড়ে। তার মধ্যে বেছে নেওয়া হয়েছে তিন জনকে। এঁদের কারও সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত, কারও বা ঘর ভেসে যায় প্রতি বর্ষায়। কেউ আবার প্রাণপাত করছেন তিনটি কন্যা সন্তানকে শিক্ষিত করে তোলার জন্য। এঁরা প্রত্যেকেই সংসার জীবনে লড়াই করছেন নিরন্তর। কিন্তু হাতের নিপুণ কাজ দেখে তা বোঝার জো নেই। এই ‘তিন নায়ক’-এর জীবন নিয়ে ছোট ফিল্ম তৈরি করেছে সেঞ্চুরি প্লাই।
ইউ টিউবে তা দেখা যাবে। আর সেখানে আমজনতার দেওয়া ‘লাইক’-এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়বে ওই তিন জনের জন্য আর্থিক সহায়তার অঙ্ক। সার্বিক ভাবে সচেতনতা বাড়বে কারিগরদের সম্পর্কেও।

সংস্থার বিপণন কর্তা অমিত গোপের দাবি, ‘‘এমনিতে পুজো নিয়ে হাজারো বিজ্ঞাপনের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু সেখানে সমাজকল্যাণ প্রকল্প মানুষের নজর কাড়ে। তাতে সংস্থার যেমন লাভ, তেমনই প্রলেপ দেওয়া যায় কিছু মানুষের জীবনের ক্ষতেও।’’

একই দাবি মোবাইল নির্মাতা সংস্থা হাইটেক কর্তৃপক্ষের। এই পুজোয় বিভিন্ন জায়গায় ‘সেফ সেল্‌ফি’ নামে কর্মসূচি চালাচ্ছেন তাঁরা। ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে শুধু নিজস্বী (সেল্‌ফি) তুলতে গিয়ে মারা গিয়েছেন ২৪ জন। এর মধ্যে ১১টি মৃত্যু ঘটেছে ভারতেই। উৎসবের মরসুমকে তাই তার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধির সুযোগ হিসেবে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইটেক।

gargi guhathakurata corporate sectors social welfare pc chandra group durga puja durga puja road show
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy