গভীর হচ্ছে ভোডাফোন-আইডিয়ার সঙ্কট। —ফাইল চিত্র
কী হতে চলেছে ভোডাফোন-আইডিয়ার পরিণতি? আপাতত এই প্রশ্ন ঘিরে তোলপাড় শিল্পমহল। সোমবার ২৫০০ কোটি টাকা মেটালেও সরকার এবং ব্যাঙ্কের কাছে যে বিপুল ঋণের বোঝা ঘাড়ে চেপে রয়েছে, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো কার্যত কঠিন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। আর সেটা হলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব পড়বে, বলছেন অর্থনীতি ও বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞরা।
সেই প্রভাব কেমন? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের উপর নেতিবাচক প্রভাব তো পড়বেই, দেশীয় অর্থনীতিতেও তার সুদুরপ্রসারী প্রভাব পড়ার আশঙ্কা। এমনিতেই চাকরির বাজারে ব্যাপক মন্দা। তার উপর সারা দেশে ভোডাফোন-আইডিয়ার প্রত্যক্ষ ভাবে কর্মরত প্রায় ১৩ হাজার কর্মীর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে পারে। পাশাপাশি টেলি কমিউনিকেশন শিল্পে জিও এবং ভারতী এয়ারটেল ছাড়া আর কোনও বিকল্প হাতে থাকবে না গ্রাহকদের। ফলে মাশুল বৃদ্ধির আশঙ্কাও রয়েছে।
ব্রিটেনের ভোডাফোন গ্রুপ এবং ভারতের আইডিয়া সেলুলারের যৌথ উদ্যোগে টেলি পরিষেবা সংস্থা ভোডাফোন-আইডিয়ার মোট বকেয়া ছিল প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। তার মধ্যে সোমবার ২৫০০ কোটি টাকা মিটিয়েছে এই সংস্থা। এই সপ্তাহের মধ্যে আরও ১০০০ কোটি টাকা মেটানো হবে বলে জানিয়েছে সংস্থা। কিন্তু তার পরেও বকেয়া থাকবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এর সঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে দেনা।
আরও পড়ুন: ‘নীতীশকে তো কেউ প্রশ্নই করে না’, বিতর্কে আহ্বান করে বললেন প্রশান্ত কিশোর
মোতিলাল অসওয়াল সংস্থার রিসার্চ অ্যানালিস্ট আলিআসগর শাকিরের মতে, ‘‘বিপুল অঙ্কের এই দেনা ভোডাফোন-আইডিয়া মেটাতে না পারলে ভারতীয় অর্থনীতিতে প্রায় ৪০ বেসিস পয়েন্ট আর্থিক ঘাটতি হবে।’’ যার ফলে ধুঁকতে থাকা অর্থনীতি ও বৃদ্ধির হার আরও নিম্নমুখী হতে পারে বলে মত অর্থনীতিবিদদের।
কিন্তু তার চেয়েও বেশি প্রভাব পড়বে বিদেশি বিনিয়োগে। অর্থনীতির ঝিমুনির জেরে এমনিতেই বিদেশি বিনিয়োগে ভাটার টান। নতুন বিনিয়োগ প্রায় কিছুই আসছে না। তার উপর সরকারি ঋণের জন্য ভোডাফোন-আইডিয়াকে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলতে হলে আন্তর্জাতিক শিল্পমহলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। ভারতে বিনিয়োগে উৎসাহ হারাবেন বিদেশি শিল্পপতিরা।
আরও পড়ুন: বিদ্রোহ, কেলেঙ্কারি সব ছাপিয়ে তাপসের জন্য রয়ে গেল চোখের জল
এই সব অশনি সঙ্কেত অজানা নয় কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট মহলেরও। তাই বিকল্প বন্দোবস্তের ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে টেলি-যোগাযোগ মন্ত্রকে। মন্ত্রক সূত্রে খবর, আগামী ১৭ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে শুনানির আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে মন্ত্রক। এমন পরিকল্পনার চিন্তাভাবনা চলছে, যাতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকাও ভঙ্গ না করেও ভোডাফোন-আইডিয়াকে টিকিয়ে রাখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পদস্থ কর্তা বলেন, টেলিকম ক্ষেত্রে যা ঘটছে এবং শিল্প-বিনিয়োগ ক্ষেত্রে তার কী প্রভাব পড়তে পারে, সরকার সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল। অন্য এক কর্তা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী শুনানির আগেই পুনরুজ্জীবন প্যাকেজের একটি রূপরেখা তৈরির চেষ্টা চলছে। বিষয়টি চূড়ান্ত করতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন টেলি যোগাযোগ মন্ত্রকের কর্তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy