কেউ ৮৪ লক্ষের মার্সিজিজ় বিক্রি করছেন মাত্র আড়াই লক্ষ টাকায়। কেউ আবার রেঞ্জ রোভার বিক্রি করে দিচ্ছেন জলের দরে। অবিশ্বাস্য মনে হলেও বিগত কয়েক দিন ধরে রাজধানী দিল্লি জুড়ে দেখা গিয়েছে এমন একাধিক ঘটনা। আর এর নেপথ্যে রয়েছে দূষণ রুখতে দিল্লি সরকারের চালু করা নয়া নিয়ম। সেই নিয়ম অনুযায়ী, ১০ বছরের বেশি পুরোনো ডিজ়েল এবং ১৫ বছরের বেশি পুরোনো পেট্রলচালিত গাড়িগুলিকে আর জ্বালানি সরবরাহ করবে না পেট্রল পাম্পগুলি। রাজধানী এবং সংলগ্ন এলাকায় দূষণ রোধ করার লক্ষ্যেই এই নিয়ম চালু করেছে সরকার। ১ জুলাই থেকে নিয়মটি কার্যকর হয়েছে। ফলে ১০ বছর আগে কেনা বহুমূল্য ডিজ়েল গাড়িও সস্তায় বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে।
আরও পড়ুন:
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দিল্লির ‘কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট (সিএকিউএম)’-এর তরফে নির্দেশিকা জারি করার পরেই বরুণ ভিজের মতো দিল্লির বাসিন্দাদের মধ্যে গাড়ি বিক্রির ধুম পড়ে গিয়েছে। ২০১৫ সালে অনেক শখ করে একটি বিলাসবহুল মার্সিডিজ়-বেঞ্জ এমএল৩৫০ গাড়ি কিনেছিলেন বরুণ। সেই সময় গাড়িটি তিনি কিনেছিলেন ৮৪ লক্ষ টাকায়। কিন্তু দিল্লি সরকারের নতুন নিয়মের পর শখ করে কেনা সেই গাড়ি এখন মূল্যহীন। জ্বালানি ভরা যাবে না, তাই গাড়িটি বরুণ মাত্র আড়াই লক্ষ টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন বলে খবর।
আরও পড়ুন:
সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বরুণ জানিয়েছেন, গত ১০ বছর ধরে তাঁর জীবন এবং পরিবারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছিল গাড়়িটি। তাঁর কথায়, ‘‘এই গাড়ির সঙ্গে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে। প্রতি সপ্তাহান্তে সাত থেকে আট ঘণ্টা গাড়ি চালাতাম। গাড়িটি ১০ বছর ধরে আমাদের জীবনের একটি অংশ।’’ বরুণ এ-ও জানিয়েছেন, মার্সিডিজ় গাড়িটি ভাল অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি না ভরা হলে সেটি কার্যত খেলনা গাড়িতে পরিণত হবে। আর তাই ১.৩৫ লক্ষ কিলোমিটার চালানো সত্ত্বেও গাড়িটি বিক্রি করে দিচ্ছেন তিনি। বরুণ বলেন, ‘‘বাধ্য হয়ে আমাকে গাড়়ি বিক্রি করতে হল। কেউ ২.৫ লক্ষ টাকাতেও গাড়িটি কিনতে প্রস্তুত ছিল না। কল্পনা করুন ৮৪ লক্ষের গাড়ি আড়াই লক্ষ টাকায় বিক্রি! এটা হতে পারে? কিন্তু কোনও উপায় ছিল না।’’
আরও পড়ুন:
শুধু বরুণ নন, দিল্লিনিবাসী রিতেশ নামে এক ব্যক্তিও জানিয়েছেন যে তিনি ৭৫ হাজার কিলোমিটার চলা রেঞ্জ রোভার গাড়ি জলের দরে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এই তালিকায় রয়েছেন আরও অনেকেই।
দিল্লি সরকারের নয়া নিয়ম রাজধানীতে ক্রমবর্ধমান দূষণ মোকাবিলা করার উদ্দেশ্যে তৈরি হলেও তা সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি করেছে। অনেকের দাবি, তাঁরা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি মানসিক যন্ত্রণার সম্মুখীনও হচ্ছেন।