এক দিকে ভারতের সঙ্গে দ্রুত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সারার বার্তা দিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জানালেন, দু’দেশ চুক্তির খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। অন্য দিকে মোদী সরকারের অস্বস্তি বাড়িয়ে এটাও দাবি করলেন, পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা আগামী সপ্তাহে আমেরিকা আসতে পারেন। তবে শুক্রবার তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ফের আমেরিকার প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি, ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষে জড়ানো চলবে না। তাতে বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা দিশা হারাতে পারে। এই প্রসঙ্গে কার্যত হুমকির সুরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘ওরা পরস্পরের সঙ্গে যুদ্ধ করলে আমার কারও সঙ্গেই চুক্তি করার কোনও আগ্রহ থাকবে না।’’ এ দিন এই সবের পাশাপাশি ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষবিরতির কৃতিত্বও ফের দাবি করেছেন ট্রাম্প। ফের বলেছেন, শুল্ক তথা বাণিজ্য চুক্তিই ছিল এই ক্ষেত্রে তাঁর প্রধান হাতিয়ার।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক থেকে ভারতীয় পণ্যকে মুক্ত করতে দ্রুত অন্তত অন্তর্বর্তী চুক্তি সম্পন্ন করতে মরিয়া নয়াদিল্লি। ফলে পদক্ষেপ করা হচ্ছে ভেবেচিন্তেই। এ দিন অবশ্য ভারতের সঙ্গে দ্রুত চুক্তির বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক দ্বিগুণ করার হুমকিও দিয়েছেন ট্রাম্প। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে গত ফেব্রুয়ারিতে এই দুই পণ্যে ২৫% আমদানি শুল্ক চাপিয়েছিলেন তিনি। শুক্রবার বলেছেন, এই হারকে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার কথা। ফলে নতুন করে শুল্ক প্রশ্নে উদ্বেগ বেড়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে। ট্রাম্প জানান, আমদানি করা ইস্পাতে শুল্ক দ্বিগুণ করে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাবেন তিনি। পরে সমাজমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তাঁর হুমকি, একই হারে শুল্ক চাপবে অ্যালুমিনিয়ামেও। বুধবার থেকে নতুন হার কার্যকর হবে।
সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, এই সপ্তাহে আমেরিকার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালতের নির্দেশে শুল্ক স্থগিতের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা উধাও হয়েছে আপিল আদালতের রায়ে। সঙ্গে বেড়েছে মোদী সরকারের অস্বস্তিও। এ বার ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক দ্বিগুণ হলে সমস্যা আরও বাড়বে ভারতের। বিশেষত ওয়াশিংটনের সঙ্গে যখন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে নয়াদিল্লি। পরের সপ্তাহেই ভারতে আসার কথা আমেরিকার প্রশাসনিক কর্তাদের। উপদেষ্টা জিটিআরআই-এর বক্তব্য, এই অবস্থায় শুল্ক এত বাড়লে দেশীয় শিল্প আরও বেশি সমস্যায় পড়তে পারে। ভারত ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ২৫% শুল্ক চাপানো নিয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় অভিযোগ করেছে। উপদেষ্টার মতে, সত্যি শুল্ক দ্বিগুণ হলে নয়াদিল্লির থেকে পাল্টা জবাব আশা করবেন এ দেশের অনেক মহলই। তার উপর রয়েছে সংঘর্ষের যুক্তিতে বাণিজ্য চুক্তি বাতিলের হুমকি। সব মিলিয়ে আগামী দিনে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায়, তাতে নজর সকলের।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)