রোজকার প্রয়োজনীয় পণ্য, খাবার, যাতায়াত, চিকিৎসা-সহ জীবনযাপনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির কোপে কমছে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয়। শুকিয়ে আসছে সঞ্চয়। এই পরিস্থিতিতে গত অর্থবর্ষের থেকে বেশি সুদের দাবি উঠেছিল আগেই। তবে তা শেষ পর্যন্ত টেকেনি। গত অর্থবর্ষের (২০২৩-২৪) ৮.২৫ শতাংশেই অপরিবর্তিত রইল চলতি অর্থবর্ষে কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) গ্রাহকের জমা টাকার উপর সুদের হার। শুক্রবার কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক বিবৃতি জারি করে জানিয়েছে, শ্রমমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডব্যের নেতৃত্বে এ দিন নয়াদিল্লিতে অছি পরিষদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সুদ স্থির থাকলেও, পিএফের আওতায় কর্মীদের বিমা প্রকল্প ইডিএলআই (ইমপ্লয়িজ় ডিপোজ়িট লিঙ্কড ইনশিয়োরেন্স)-এ যোগ করা হয়েছে বেশ কিছু সুবিধা (সঙ্গের সারণিতে)।
অছি পরিষদের সদস্য এবং টিইউসিসি-র জেনারেল সেক্রেটারি এস পি তিওয়ারি বলেন, ‘‘আমরা কমপক্ষে ৮.৩০% সুদ চেয়েছিলাম। পিএফ তহবিল লগ্নি করে যা আয় হয়েছে তার থেকে ৮.২৫% সুদ দেওয়ার পরেও ৫৮০০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকবে এ বার। ৮.৩০% দিলে থাকত ৪৫০০ কোটি। কিন্তু মন্ত্রীর দাবি, দু’টি কারণে সুদ বাড়ানো হয়নি। একে তো শেয়ার বাজার পড়ছে। ফলে তহবিলের যে অংশ সেখানে খাটে, সেখান থেকে আয় কমবে। তার উপর এমন কিছু সংস্থার ঋণপত্রে পিএফ তহবিলের একাংশ লগ্নি হয়েছে, যেগুলি আর্থিক সঙ্কটে ডুবে দেউলিয়া আদালতে গিয়েছে। সেই লগ্নি থেকে ১৫০০ কোটি টাকার মতো লোকসান হতে পারে।’’
সর্বত্র কমতে থাকা সুদের হার এবং শেয়ার বাজারের অনিশ্চয়তাকে সুদ অপরিবর্তিত রাখার কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন মন্ত্রী, দাবি অছি পরিষদের সদস্য সিটুর প্রতিনিধি আর কারুমালয়নেরও। তাঁর কথায়, ‘‘মন্ত্রীর যুক্তি, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলেও যাতে আগামী অর্থবর্ষে ন্যূনতম ৮.২৫% সুদ দেওয়া যায়, তার জন্য হাতে কিছুটা উদ্বৃত্ত তহবিল রাখতে চায় কেন্দ্র।’’
ইউটিইউসি-র জেনারেল সেক্রেটারি এবং আঞ্চলিক পিএফ কমিটির সদস্য অশোক ঘোষের অবশ্য আক্ষেপ, ‘‘চড়া মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমেছে। সাধারণ শ্রমিক-কর্মীদের সঞ্চয়ের প্রধান জায়গা হল পিএফ। আশা করেছিলাম সেখানে অন্তত ৮.৫০% সুদ দেওয়া হবে এ বছর। সেটা না হওয়ায় আমরা হতাশ।’’
বিবৃতিতে শ্রম মন্ত্রকের অবশ্য দাবি, সাত কোটির বেশি পিএফ সদস্য স্থায়ী আয়ের অন্যান্য বহু মাধ্যমের তুলনায় অনেক বেশি রিটার্ন পাচ্ছেন। যা স্থিতিশীলও। ফলে সঞ্চয় নিশ্চিত ভাবে বাড়বে। বিশেষত ইপিএফের সুদের আয়ে যেহেতু নির্দিষ্ট অঙ্ক পর্যন্ত করছাড়ের সুবিধাও পাওয়া যায়।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)