মালিক-শ্রমিক বিরোধের জেরে প্রশ্নের মুখে এস ডি অ্যালুমিনিয়ামের কামারহাটি কারখানার ভবিষ্যৎ।
দীর্ঘ দিন ধরে ধুঁকতে থাকা এই কারখানায় প্রায় দু’বছর উৎপাদন বন্ধ। অনিশ্চিত ২৮২ জন কর্মীর রুজি-রুটির জোগানও। শ্রমিকদের অভিযোগ, গত ১০ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না তাঁরা। বাকি পড়েছে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকাও। শ্রমিক সংগঠনের নেতা মদন মিত্রের অভিযোগ, কারখানা চালানোর ‘সদিচ্ছা নেই’ মালিকপক্ষের। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, ঘুরে দাঁড়াতে তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। এই দড়ি টানাটানিতে কঠিন হয়ে পড়েছে নতুন ভাবে লগ্নি করে কামারহাটি কারখানা ঢেলে সাজা। সেই কারণে প্রশ্নের মুখে তার ভবিষ্যৎও।
মদনবাবুর দাবি, ‘‘কারখানা খুলতে যে-কোনও শর্তে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা আলোচনায় রাজি।’’ উল্টো দিকে, বেতন ও পিএফ বকেয়া থাকার অভিযোগ মেনে নিয়ে সংস্থার পাল্টা দাবি, আর্থিক সমস্যার কথা কর্মীদের জানানো হয়েছিল। তবে ‘সদিচ্ছা নেই’, এই অভিযোগ মানতে নারাজ তারা। এসডি অ্যালুমিনিয়ামের চেয়ারম্যান সুদীপ দত্তের দাবি, আগেই আইন মেনে কারখানা বন্ধ করে দেওয়া যেত। কিন্তু চূড়ান্ত আর্থিক সমস্যার মধ্যেও ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ বা সাময়িক ভাবে কারখানা বন্ধের নোটিস ঝোলানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘বেহাল সংস্থার কর্মীদের আইনত ৫০% বেতন দেওয়া যায়। আমরা সেটাও করিনি।’’
২০০ কোটি টাকা লোকসানের বোঝা ঘাড়ে থাকা সংস্থার টিকে থাকার জন্য চাই নতুন পুঁজি। সংস্থা সূত্রের দাবি, সম্প্রতি সে ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি মিলেছে। ৩০০ কোটি টাকা ঢালবে এসডিজি ক্যাপিটাল। এর মধ্যে ১২৫ কোটি সম্প্রসারণের জন্য চিহ্নিত। বাকি ১৭৫ কোটি লাগবে কার্যকরী মূলধন হিসেবে। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সাধারণত শ্রমিক সমস্যা এড়িয়ে চলতে চান লগ্নিকারীরা। এ ক্ষেত্রেও কামারহাটি কারখানায় কর্মী অসন্তোষ লগ্নির পথে কাঁটা হতে পারে।
ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানও সাধারণত শ্রমিক সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চায়। সংস্থার নেওয়া ৪৩০ কোটির ব্যাঙ্কঋণ এখন সুদে-আসলে ৭০০ কোটি। ঋণদাতাদের কনসোর্টিয়াম সংস্থার আর্থিক পুনর্গঠন প্রকল্প খতিয়ে দেখছে। তাদের সবুজ সঙ্কেতও তাই জরুরি। শ্রমিক-মালিক সংঘাত সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে দিতে পারে।
এসডি অ্যালুমিনিয়াম যখন ইন্ডিয়া ফয়েলসকে কিনে নেয়, তখনই কামারহাটি কারখানা প্রায় বন্ধের মুখে। আর হুগলির হয়রা কারখানা বন্ধ। হাতবদলের পরে দু’টি কারখানাই চালু হয়। কিন্তু মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতির মতো নানা সমস্যায় কামারহাটি, হয়রার পাশাপাশি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় দমন, গোয়া, সিকিম ও বেঙ্গালুরুর কারখানায়।
সংস্থার দাবি, এ যাত্রায় আর্থিক পুনর্গঠন সম্পূর্ণ হলে, মে মাস থেকে হয়রার একটি ও দমনের দু’টি কারখানা চালু হওয়ার কথা।