E-Paper

পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি তলানি ছুঁলেও চিন্তা সেই খাদ্যপণ্য

পাইকারি বাজারে আনাজ, পেঁয়াজ, আলুর মতো খাদ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দাম বাড়েনি বরং কমেছে। কিন্তু মার্চের হারে স্পষ্ট, তা ক্রমশ মাথা তুলছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:১৬
An image of groceries

খাদ্যপণ্যের দাম বিপুল হারে না নামলে সাধারণ মানুষের পক্ষে তার প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল। ফাইল ছবি।

দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার গত মাসে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের বেঁধে দেওয়া ৬% নীচে নেমে হয়েছিল ৫.৬৬%। এ বার আরও কিছুটা স্বস্তি দিল পাইকারি বাজার। সোমবার কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান বলছে, মার্চে সেই মূল্যবৃদ্ধিও ঠেকেছে ১.৩৪ শতাংশে। প্রায় আড়াই বছরের (২৯ মাস) সব থেকে কম। এর আগে ২০২০-র অক্টোবরে তা ১.৩১ শতাংশে নেমেছিল। এই নিয়ে টানা ১০ মাস নামল পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি। তবে এত কিছুর পরেও উদ্বেগের মেঘ কাটেনি বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। যার অন্যতম কারণ ফের মাথা তুলতে থাকা খাদ্যপণ্যের দাম। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞদের একাংশের বার্তা, গত বছরের মার্চে পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি ছিল ১৪.৬৩%। সেই উঁচু ভিতের উপরে পা থাকায় এ বছরের হিসাব একটু বেশি কম দেখাচ্ছে।

এমনিতে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এখনও পাইকারি বাজারে আনাজ, পেঁয়াজ, আলুর মতো খাদ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির হার শূন্যের নীচে। অর্থাৎ গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দাম বাড়েনি বরং কমেছে। কিন্তু মার্চের হারে স্পষ্ট, তা ক্রমশ মাথা তুলছে। আনাজের মূল্যবৃদ্ধি ফেব্রুয়ারিতে ছিল (-) ২১.৫৩%। গত মাসে হয়েছে (-) ২.২২%। পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও তা (-) ৪০.১৪% থেকে বেড়ে হয়েছে (-) ৩৬.৮৩%। গম এবং ডালের যথাক্রমে ৯.১৬% ও ৩.০৩%। তবে দাম কমেছে ধাতু, প্রক্রিয়াজাত খাবার, জামা-কাপড়, অশোধিত পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদির।

বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যপণ্যের মধ্যে কিছু শস্যের দাম এখনও কমেনি। তার উপর গম, দুধ, আনাজ, ফল, মশলা ইত্যাদির দাম আগের মাসের থেকে বেড়েছে। যা খুচরো বাজারে খাদ্যপণ্যের কমতে থাকা মূল্যবৃদ্ধির হার নিয়েও স্বস্তি কাড়ছে। তাঁদের আশঙ্কা, এই অবস্থায় সব থেকে বড় চিন্তা তাপপ্রবাহ। যদিও আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দিনে বর্ষা স্বাভাবিক হলে কৃষি উৎপাদন নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকা যাবে। না হলে ভোগান্তি বাড়তে পারে।

আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তের দাবি, খুচরো মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ গ্রাহকের ক্ষেত্রে দামের বদলকে তুলে ধরে। আর পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি দেখায় উৎপাদকের দামের পরিবর্তনকে। ক্রেতার কাছে পৌঁছনোর আগেই তা মাপা হয়। এ ছাড়া, খুচরো মূল্যবৃদ্ধিতে খাদ্যপণ্যের অংশীদারি প্রায় ৫০%, পাইকারিতে তা ২৪.৪%। সুতরাং খাদ্যপণ্যের দাম বিপুল হারে না নামলে সাধারণ মানুষের পক্ষে তার প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসা মুশকিল। অথচ অস্বাভাবিক গরম ডাল, আনাজের মতো পণ্যের উৎপাদনে ধাক্কা দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। যা সেগুলির দামকে ঠেলে আরও উপরে তুলতে পারে। অনির্বাণের মতে, খুচরো বাজারের ক্রেতারা এখনও চড়া দামের বোঝা বইছে এবং আগামী দিনে বর্ষা ভাল না হলে তা বহাল থাকতে পারে।

মূল্যবৃদ্ধি কমলেও খাদ্যপণ্য অস্বস্তি বহাল রাখছে বলে মনে করেন পটনা আইআইটি-র অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিকও। অর্থনীতির অধ্যাপিকা মহানন্দা কাঞ্জিলাল বলেন, ‘‘পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি নিম্নগামী মূলত পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম কমায়। বৈদ্যুতিন, রাসায়নিক ইত্যাদিরও মূল্যহ্রাস হচ্ছে। পাইকারি মূল্য দ্রব্যের উপাদানের সঙ্গে যুক্ত। ফলে উৎপাদনের খরচ কমলে তা খুচরো দাম হ্রাসের সহায়ক হয়। দুই বাজারেই মূল্যবৃদ্ধি স্বস্তিদায়ক। তবে খাদ্যশস্য, দুধ, চিনি, আনাজের মতো ক্ষেত্র যে সুরাহার ইঙ্গিত দিচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Food Items Whole Sale Price Indian Groceries

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy