Advertisement
E-Paper

চিনের ধাক্কা লাগতে পারে দেশের আর্থিক বৃদ্ধিতে

‘অল ইজ ওয়েল, অল ইজ ওয়েল’। চিনের ধাক্কায় বিশ্ব বাজারের সঙ্গে ভারতের শেয়ার বাজারেও ধস নামার পর থেকেই এ কথা আউড়ে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনার পরে অর্থ মন্ত্রকের তৈরি নোটই বলছে, নিশ্চিন্তে নয়, আশঙ্কায় আছে তারা।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৫ ০১:৫০

‘অল ইজ ওয়েল, অল ইজ ওয়েল’। চিনের ধাক্কায় বিশ্ব বাজারের সঙ্গে ভারতের শেয়ার বাজারেও ধস নামার পর থেকেই এ কথা আউড়ে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। কিন্তু আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনার পরে অর্থ মন্ত্রকের তৈরি নোটই বলছে, নিশ্চিন্তে নয়, আশঙ্কায় আছে তারা। সোমবার এই অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) বৃদ্ধির খতিয়ান প্রকাশিত হবে। তার আগে দুশ্চিন্তাতেই রয়েছেন জেটলি।

কেন এই আশঙ্কা? অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, শুধু শেয়ার বাজার নয়, চিনের মন্দার ধাক্কা দেশের বৃদ্ধির হারেও লাগতে পারে। অথচ মোদী সরকারের পূর্বাভাস, এ বছর বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের উপরে উঠবে। তাদের আশা, এখনও পর্যন্ত সংস্কার যে-ভাবে এগিয়েছে, তার ভিত্তিতেই নতুন লগ্নি আসবে। গত অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ছিল ৭.৩%। কিন্তু অর্থ মন্ত্রকের উপদেষ্টাদের মতে, চিনের অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়লে ভারতও রক্ষা পাবে না। ভারতেও বৃদ্ধির হার নীচে নামবে। আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজ-ও ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭ শতাংশে কমিয়ে এনেছে।

সোমবার পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার আগে অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, তাদের আশা বৃদ্ধির হার থাকবে ৭.২-৭.৫ শতাংশের মধ্যে। গত অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে তা ছিল ৭.৫%। তার থেকে হার কমবে বলেই কেন্দ্রের আশঙ্কা। কারণ, মন্ত্রকের পর্যালোচনা বলছে, নতুন লগ্নিতে তেমন উন্নতি চোখে পড়েনি। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না-হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির হারও কমেছে। জুনে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়ে ৩.৮% হলেও, এপ্রিল থেকে জুনে তা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কম ছিল। একমাত্র সুখবর, সরকারি ব্যয় অনেকটা বেড়েছে। কিন্তু চিন্তা যাচ্ছে না।

মোদী সরকার যেখানে এই অর্থবর্ষে ৮ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি আশা করছে, সেখানে কেন আসছে না নতুন লগ্নি?

অর্থমন্ত্রী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সুদ না-কমানোকেই কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। সওয়াল করছেন সুদ ছাঁটাইয়ের পক্ষে। জেটলির যুক্তি, পুঁজির জন্য ঋণের খরচ কমলেই লগ্নি আসবে। কিন্তু মন্ত্রকের পর্যালোচনা বলছে, বেসরকারি সংস্থার লাভের খাতার অবস্থা শোচনীয়। সেই কারণেই কার্যত থমকে নতুন লগ্নি। সঙ্গে জমি অধিগ্রহণের সমস্যা তো রয়েইছে।

আর একটি সমস্যা হল রফতানিতে ভাটা। অর্থ মন্ত্রকের পর্যালোচনা জানাচ্ছে, যখনই বৃদ্ধির হার উঠেছে, রফতানি তাতে অনুঘটকের কাজ করেছে। কিন্তু এখন যে-সব দেশে ভারত পণ্য বেচে, সর্বত্রই মন্দা। উপরন্তু অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠছে না ভারতের পণ্য। দেশ থেকে রফতানির বাজারও সীমিত। জেটলি আরও বলেছেন, মূল্যবৃদ্ধি অনেক কমেছে। কিন্তু বাস্তব হল, প্রতিযোগী দেশগুলির তুলনায় ভারতে তা বেশি। দীর্ঘদিন এই হার চড়া থাকায় পণ্যের দাম এতটাই উপরে যে, এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ফলে জামাকাপড়, চামড়ার মতো পণ্যও রফতানি করতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। ইউয়ানের দাম কমায় বিশ্বের রফতানি বাজারে চিন তার দখল আরও বাড়াবে বলেই আশঙ্কা। রাজ্যসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ নয় মোদী সরকার। তাই বিহারের মতো রাজ্যে ক্ষমতায় আসতে মরিয়া হয়ে তারা দেদার অর্থ বরাদ্দের কথা বলছে। অর্থ মন্ত্রকের এক উপদেষ্টা জানান, এর ধাক্কায় রাজকোষ ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কা। এ নিয়ে শিল্পমহলেও প্রশ্ন উঠছে।

প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কেন জেটলি দাবি করছেন, চিনের অস্থিরতার প্রভাব এ দেশে পড়বে না। ভারতের অর্থনীতি সুরক্ষিত। বরং চিনের সমস্যা ভারতের সামনে নতুন সুযোগ এনে দিয়েছে। বিদেশি লগ্নিকারীরা এ দেশকে নিরাপদ গন্তব্য হিসেবে দেখছেন। অর্থ মন্ত্রকের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘অর্থমন্ত্রীর কাজ লগ্নিকারী ও সাধারণ মানুষের স্নায়ু শান্ত রাখা। তিনি সেটাই করছেন।’’

premangshu choudhuri finance ministry chinese market market crush indian growth chinese market crush
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy