আগ বাড়িয়ে হস্তক্ষেপ।
কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের জমায় সদ্য শেষ হওয়া ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষের জন্য ৮.৭% হারে সুদ দেওয়ার সুপারিশ করল কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। এবং সেটা পিএফ কর্তৃপক্ষর (ইপিএফও) কেন্দ্রীয় অছি পরিষদের ৮.৮% সুদ দেওয়ার সুপারিশ অগ্রাহ্য করেই।
কেন্দ্রের এই হস্তক্ষেপকে ‘নজিরবিহীন’ বলে অভিযোগ এনে ক্ষোভ জানিয়েছেন অছি পরিষদ সদস্যরা ও বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ন। পিএফের আওতায় থাকা পাঁচ কোটিরও বেশি কর্মীর অবসরের তহবিল বাবদ আয়ে এর প্রভাব পড়বে। যেহেতু তাঁদের অবসরের তহবিল এখানে গচ্ছিত রয়েছে, তাই কেন্দ্রের এই ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তকে জনবিরোধী তকমা দিয়েছে ইউনিয়নগুলি। এমনকী কেন্দ্রে বিজেপি সরকারের ঘনিষ্ঠ আরএসএস সমর্থিত ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘও (বিএমএস) এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। দেশ জুড়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। পিএফের বিভিন্ন দফতরের সামনে বিএমএস প্রতিবাদ জানাবে আগামী কাল ২৭ এপ্রিল।
শ্রমমন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয় সোমবার লোকসভায় এক লিখিত বিবৃতিতে জানান, ‘‘পিএফের অছি পরিষদ তার ফেব্রুয়ারির বৈঠকে ৮.৮% অন্তর্বর্তী সুদের সুপারিশ করলেও কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক ৮.৭% সুদে সায় দিয়েছে।’’ প্রসঙ্গত, শ্রমমন্ত্রীই অছি পরিষদের প্রধান। তিনি এর আগে আশ্বাসও দিয়েছিলেন যে, পিএফ কর্তৃপক্ষ আর সুদ কমাবেন না। তাঁদের অন্তর্বর্তী সুপারিশই বহাল রাখবে।’’ যদিও তাঁর ইঙ্গিত, দেশে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ও সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে সরকারি কর্মীদের বাড়তি বেতন দেওয়ার খরচের কথা মাথায় রেখে সুদ সংশোধন করা হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ২০১১-’১২ সালে পিএফ তহবিলে সুদ ছিল ৮.২৫%, ২০১২-’১৩ সালে ৮.৫%, ২০১৩-’১৪ ও ২০১৪-’১৫ সালে ৮.৭৫%। সেপ্টেম্বরে দাখিল করা ইপিএফও-র হিসাব অনুসারে ৮.৯৫% হারে সুদ দিলেও কর্তৃপক্ষের হাতে উদ্বৃত্ত থাকত ১০০ কোটি টাকা।
অছি পরিষদের সদস্য এবং রাজ্য আই এন টি ইউ সি সভাপতি রমেন পান্ডে বলেন, ‘‘এই তহবিল নিয়োগকারী ও কর্মচারীরা জোগান দেন। কেন্দ্রের এতে কোনও অবদান নেই। তাই তাদের এক্তিয়ারও নেই এতে হস্তক্ষেপ করার। অছি পরিষদই সুদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। এই ঘটনা নজিরবিহীন।’’
এআইটিইউসি প্রতিনিধি হিসেবে অছি পরিষদের সদস্য ডি এল সচদেব জানান, ‘‘পরিষদ সুদ স্থির করেছে পিএফ তহবিলের আয়ের ভিত্তিতে। বর্তমানে যা আয়, তাতে ৮.৯৫% পর্যন্ত সুদ দেওয়া যায়। কিন্তু অছি পরিষদ বাড়তি সতর্কতা হিসেবে এটিকে ৮.৮ শতাংশে রাখার সুপারিশ করেছিল। সুতরাং তা কমিয়ে আনার কোনও অধিকার অর্থ মন্ত্রকের নেই। গত অন্তত ২০-২৫ বছরে এ ধরনের নজির নেই, যেখানে অছি পরিষদের সিদ্ধান্তকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে।’’ এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক গুরুদাস দাশগুপ্ত একই সুরে বলেন, ‘‘মন্ত্রকের একতরফা সিদ্ধান্ত কর্মীবিরোধী ও জনবিরোধী।’’ অর্থমন্ত্রীকেই এর জন্য দায়ী করে তিনি জানান, প্রতিবাদে তাঁরা ধর্মঘটে যাবেন।
আইটিইউসি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট অশোক সিংহও বলেন, ‘‘এটা অন্যায়। অছি পরিষদ ৮.৮% সুদের সুপারিশ করেছে। অরুণ জেটলি তাতে হস্তক্ষেপ করার কে?’’ বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রজেশ উপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘তহবিলটি পরিচালনার দায়িত্বে আছে স্বাধীন ও স্বশাসিত অছি পরিষদ। তাদের সিদ্ধান্তকে উপেক্ষা করাটা তাই মেনে নেওয়া যায় না। এটি ভুল পদক্ষেপ এবং পিএফ কর্তৃপক্ষের কাজে মন্ত্রকের অহেতুক হস্তক্ষেপ।’’ দত্তাত্রেয় অবশ্য জানান, পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে অছি পরিষদ এ নিয়ে ফের বৈঠকে বসবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy