E-Paper

চূড়ান্ত হওয়ার পথে ভারত আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তির প্রথম ধাপ

মন্ত্রক কর্তাদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই ৫০% শুল্ক-জরিমানার ফল দেখা যাচ্ছে। অক্টোবরে ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানি হয়েছে ৬৩১ কোটি ডলারের পণ্য।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:২২
ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে যে ৫০% শুল্ক চাপিয়ে রেখেছেন, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তির প্রথম ধাপে তা নিয়ে মীমাংসায় পৌঁছতে চাইছে মোদী সরকার। বিনিময়ে ভারতের বাজার আমেরিকার পণ্যের জন্য আরও বেশি খুলে দিতে ট্রাম্প যে চাপ দিচ্ছেন, সে ব্যাপারে নমনীয় হতে হবে কেন্দ্রকে।

সোমবার কেন্দ্রীয় বাণিজ্যসচিব রাজেশ আগরওয়াল জানান, চুক্তির প্রথম ধাপ খুব শীঘ্রই চূড়ান্ত হতে চলেছে। মূলত দু’টি বিষয় থাকবে। এক, ভারতের বিরুদ্ধে চড়া শুল্কের অভিযোগ তুলে ট্রাম্পের চাপানো ২৫% পাল্টা শুল্ক এবং পরে রাশিয়া থেকে তেল কেনার জরিমানা হিসেবে বসানো আরও ২৫% শুল্ক (মোট ৫০%)। দুই, আমেরিকার পণ্যের জন্য ভারতের বাজার আরও খুলে দিতে ট্রাম্পের দাবি। সচিব বলেন, ‘‘শীঘ্রই এ বিষয়ে দর কষাকষি শেষ হবে।’’

মোদী সরকার যে চড়া শুল্ক এড়াতে আমেরিকার থেকে আরও পণ্য কিনতে তৈরি, তা স্পষ্ট করে আজ তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী সে দেশ থেকে রান্নার গ্যাস (এলপিজি) আমদানির জন্য ভারতের চুক্তি করার খবর দিয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তারা একে সরাসরি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষির অংশ বলে মানতে রাজি নন। তবে মন্ত্রক সূত্র মনে করাচ্ছে, ট্রাম্প ফের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ফেব্রুয়ারিতে নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তির কথা বলা হয়। তখনই ট্রাম্প একতরফা ঘোষণা করেছিলেন, আমেরিকা থেকে আরও বেশি তেল, গ্যাস ও সমরাস্ত্র কিনবে ভারত।

সেই ঘোষণা অনুসারেই কি এখন বিপুল এলপিজি কেনার সিদ্ধান্ত?

মন্ত্রক কর্তাদের বক্তব্য, ইতিমধ্যেই ৫০% শুল্ক-জরিমানার ফল দেখা যাচ্ছে। অক্টোবরে ভারত থেকে আমেরিকায় রফতানি হয়েছে ৬৩১ কোটি ডলারের পণ্য। যা গত বছরের অক্টোবরের থেকে কম। জুলাইয়ের পর থেকেই রফতানি কমছে। ওই মাসে গিয়েছিল ৮০০ কোটি ডলারের পণ্য। অগস্টে রাশিয়ার তেলের জন্য জরিমানা চাপার পরে তা ৬৮৬ কোটিতে নামে। সেপ্টেম্বরে আরও কমে হয় ৫৪৯ কোটি ডলার। গত মাসে সামান্য বাড়লেও তা ৬৩১ কোটিতে আটকে গিয়েছে। অবশ্য গত সপ্তাহ থেকে একগুচ্ছ কৃষি ও খাদ্যপণ্যকে শুল্ক থেকে ছাড় দিয়েছেন ট্রাম্প। এর মধ্যে চা, কফি, গোমাংস, অধিকাংশ মশলা, বেশ কিছু ফল, বাদাম রয়েছে। মন্ত্রকের হিসাবে, আমেরিকায় যাওয়া ২৫০ কোটি ডলারের কৃষি ও খাদ্যপণ্যের মধ্যে ১০০ কোটির রফতানিতে আর শুল্ক চাপবে না।

ট্রাম্পের মূল অভিযোগ ছিল, আমেরিকার পণ্যে চড়া শুল্ক বসিয়ে রেখেছে ভারত। ফলে এ দেশে পণ্য বেচতে না পেরে চড়া বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়ছেন তাঁরা। অন্য দিকে ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। তাই তিনি ২৫% শুল্ক ও ২৫% জরিমানা চাপিয়েছিলেন। তবে নয়াদিল্লি যে রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমাচ্ছে, তার ইঙ্গিত মিলেছে। গত এপ্রিল-সেপ্টেম্বরে তার অঙ্ক ৩৫৯৭ কোটি ডলার। গত বছর একই সময়ে ছিল ৪০৩২ কোটি।

বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের ব্যাখ্যা, আমেরিকার চড়া শুল্ক ও জরিমানা নিয়ে আপত্তি রয়েছে কেন্দ্রের। যখন বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা শুরু হয়েছিল, তখন এ সব ছিল না। তাই আগে এই শুল্ক-জরিমানা নিয়ে ফয়সলায় পৌঁছতে হবে। অন্য দিকে দেখতে হবে ভারতের বাজার আমেরিকার পণ্যের জন্য খোলার দাবি। প্রথম দফার চুক্তিতে এই দু’টি বিষয়েই রফা হবে। তার পরে আলোচনা হবে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে। তাতে সময় লাগবে। ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প-মোদীর বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, প্রথম দফার বাণিজ্য চুক্তি নভেম্বরের মধ্যে সারবেন। আজ সচিব ‘শীঘ্রই’ তা হবে জানালেও, সময়সীমা দিতে চাননি।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Donald Trump

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy