Advertisement
১৫ অক্টোবর ২০২৪

রাজকোষ ঘাটতিই মাথাব্যথা নির্মলার

বাজেটের আঁক কষতে বসে এখানেই মাথায় হাত নতুন অর্থমন্ত্রীর। এমনিতেই ৩.৪ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা কী ভাবে ছোঁবেন, তা নিয়ে হিমসিম খাওয়ার অবস্থা। তার উপরে অরুণ জেটলির হাত থেকে দায়িত্ব নিয়ে নির্মলা দেখছেন, অর্থনীতিবিদদের কথা মতো ‘বাস্তবসম্মত’ হিসেব কষতে হলে ঘাটতি লাগামছাড়া হবে।

নির্মলা সীতারামন।

নির্মলা সীতারামন।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

দিন পনেরো আগের কথা। অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সকলের মুখে একটাই কথা। ম্যাডাম, রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যটা যেন ‘বাস্তবসম্মত’ হয়!

বাজেটের আঁক কষতে বসে এখানেই মাথায় হাত নতুন অর্থমন্ত্রীর। এমনিতেই ৩.৪ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা কী ভাবে ছোঁবেন, তা নিয়ে হিমসিম খাওয়ার অবস্থা। তার উপরে অরুণ জেটলির হাত থেকে দায়িত্ব নিয়ে নির্মলা দেখছেন, অর্থনীতিবিদদের কথা মতো ‘বাস্তবসম্মত’ হিসেব কষতে হলে ঘাটতি লাগামছাড়া হবে।

অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার সরস মন্তব্য, ‘‘ম্যাডাম যদি অরুণ জেটলি ও পীযূষ গয়ালের উপর গোঁসা করে কথা বন্ধ করে দেন, তা হলেও দোষ হবে না।’’ কারণ? তাঁর ব্যাখ্যা, গত অর্থবর্ষে (২০১৮-১৯) ঘাটতির লক্ষ্য ৩.৪% ধরেছিলেন জেটলি। কিন্তু তা ছুঁতে দু’টি কাজ করেন তিনি। এক, অর্থবর্ষের শেষবেলায় খরচ ছাঁটাই করা। দুই, বাজেটের বাইরে থেকে প্রায় ১.৪ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা। যদি এই টাকা বাজেটের খরচ ধরা হয়, তা হলে ঘাটতি প্রায় ৪.১% হওয়ার কথা।

হিসেবনিকেশ
• অন্তর্বর্তী বাজেটে রাজকোষ ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ৩.৪%।
• সেই লক্ষ্যপূরণই আসল চিন্তা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের।

আবার লোকসভা ভোটের আগে জেটলির অসুস্থতার জন্য পীযূষ অন্তর্বর্তী বাজেট পেশ করেছিলেন। তিনি চলতি অর্থবর্ষের (২০১৯-২০) জন্যও ৩.৪ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা রেখে দেন। কিন্তু খাতায়-কলমে তাতে পৌঁছনোর অঙ্ক মেলাতে রাজস্ব আয় এত ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে ধরেছেন যে এখন কর অফিসারদের মাথায় হাত পড়েছে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, ঘাটতির অঙ্কে যে ভালই জল মেশানো রয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে। শুক্রবার অর্থ মন্ত্রক জানিয়েছে, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম দু’মাসেই (এপ্রিল-মে) ঘাটতি সারা বছরের ৫২% ছুঁয়েছে। টাকার অঙ্কে ৩.৬৬ লক্ষ কোটি। পীযূষের অঙ্ক ছিল, পুরো বছরে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ফারাক হবে ৭.০৩ লক্ষ কোটি। আরেকটি চিন্তার কারণ, প্রথম দু’মাসে পরিকাঠামোয় বাজেট বরাদ্দের মাত্র ১৪.২% ব্যয় হয়েছে। গত বছর যা ছিল ২১.৩%। প্রশ্ন উঠছে, অর্থনীতির হাল দেখে অঙ্ক মেলাতে কেন্দ্রের খরচ ছাঁটাই কি তা হলে শুরু হয়ে গিয়েছে?

উদ্বেগের কারণ

• অর্থবর্ষের প্রথম দু’মাসেই ঘাটতি সারা বছরের লক্ষ্যমাত্রার ৫২% ছুঁয়েছে।
• ২০১৯-২০ সালে লক্ষ্যমাত্রা ৭.০৩ লক্ষ কোটি টাকা। এপ্রিল-মে মাসেই ছুঁয়েছে ৩.৬৬ লক্ষ কোটি।
• সূত্রের খবর, অরুণ জেটলি খরচ ছাঁটাই করে এবং বাজেটের বাইরে খরচ করে অঙ্ক মিলিয়েছিলেন। পীযূষ গয়াল রাজস্ব আদায় দেখান ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে।
• এ বারের অঙ্ক মেলাতে নির্মলাকে খরচ ছাঁটাই করতে হবে। কিন্তু তা হলে ধাক্কা খাবে অর্থনীতি।
• প্রথম দু’মাসে মূলধনী খাতে বা পরিকাঠামো তৈরিতে বাজেট বরাদ্দের মাত্র ১৪.২% ব্যয় হয়েছে।

অনেকে বলছেন, এই অবস্থায় নির্মলা কি রাজকোষের বাস্তব ছবি তুলে ধরে, ঘাটতির রাশ আলগা করবেন? না কি জেটলি-পীযূষের মতো অঙ্কের কেরামতিতে ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছোঁবেন? উত্তর মিলবে বাজেটেই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE