Advertisement
E-Paper

সোনা আমদানিতেও রাশ কি? উঠছে প্রশ্ন

ডলারে টাকার দামের পতন রুখতে এবং চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেন ঘাটতি কমাতে সম্প্রতি পাঁচ দফা দাওয়াই বাতলেছে কেন্দ্র। যার অন্যতম, অত্যাবশ্যক নয় এমন কিছু পণ্যের আমদানি ছাঁটার সিদ্ধান্ত। আর তাতেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে স্বর্ণশিল্প মহল।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৫

ডলারে টাকার দামের পতন রুখতে এবং চলতি খাতে বিদেশি মুদ্রা লেনদেন ঘাটতি কমাতে সম্প্রতি পাঁচ দফা দাওয়াই বাতলেছে কেন্দ্র। যার অন্যতম, অত্যাবশ্যক নয় এমন কিছু পণ্যের আমদানি ছাঁটার সিদ্ধান্ত। আর তাতেই প্রমাদ গুনতে শুরু করেছে স্বর্ণশিল্প মহল। যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে আমদানি কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে তা এখনও জানায়নি সরকার। কিন্তু সোনা ব্যবসায়ীদের অনেকেরই আশঙ্কা, দেশ থেকে ডলার বেরিয়ে যাওয়া রুখতে বিদেশ থেকে যে সব পণ্য কেনার উপরে কোপ পড়তে চলেছে, তার মধ্যে থাকতে পারে সোনা। আর শেষ পর্যন্ত সত্যিই যদি সেটা হয়, তবে পুজো মরসুমের মুখে সোনার গয়নার ব্যবসা বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

শিল্পের এই আশঙ্কার প্রধান কারণ, এর আগে ইউপিএ জমানায় হওয়া এমনই এক অভিজ্ঞতা। বিপুল পরিমাণ সোনা আমদানির জেরে ২০১৩ সালে ভারতের চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি (বৈদেশিক মুদ্রা আয়-ব্যয়ের মধ্যে ফারাক) প্রায় ১১ লক্ষ ৪০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছিল। তার পর থেকেই সোনায় আমদানি শুল্ক ২% থেকে বাড়িয়ে ১০% করে তৎকালীন মনমোহন সরকার। যাতে ডলারের খরচ আটকানো যায়। সেই শুল্ক এখনও চালু। শুধু তা-ই নয়, আমদানি কমাতে আনা হয়েছিল ৮০:২০ প্রকল্পও। যার আওতায় আমদানির ৮০% দেশে বিক্রি করতে হলে ২০% বাধ্যতামূলক ভাবে রফতানি করতে হত। কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পের মোদী সরকার অবশ্য প্রকল্পটি বাতিল করে।

এই পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদী সরকারও দেশে ডলারের জোগান বাড়াতে কিছু পণ্যের আমদানি ছাঁটা হবে বলায় উদ্বিগ্ন সোনা ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমরা ঘর পোড়া গোরু। তাই সিঁদুরে মেঘ দেখলেই ভয় পাই।’’

সোনা আমদানি কমালে সব থেকে সমস্যায় পড়বেন গয়নার কারিগরেরা, বলছেন বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক টগর পোদ্দার। তাঁর কথায়, ‘‘সোনার জোগান কমলে কমতে পারে গয়না তৈরি। তাতে কাজ হারাবেন কারিগরেরা। দেশে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই প্রায় ৫ লক্ষ।’’

সোনা আমদানিতে রাশ টানা নিয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি কেন্দ্র। তাই স্বর্ণশিল্প মহলের অনেকে আবার এখনই এ নিয়ে ভয় পাওয়ার যুক্তি খুঁজে পাচ্ছেন না।

ইন্ডিয়ান বুলিয়ন অ্যান্ড জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের আঞ্চলিক চেয়ারম্যান পঙ্কজ পারেখের যেমন দাবি, ‘‘এর আগে ১০% পর্যন্ত আমদানি শুল্ক বাড়ার পরে চাহিদা কিন্তু কমেনি। শুধু চোরা পথে দেশে সোনা ঢোকা দ্রুত বেড়েছে। ভারত বিদেশ থেকে বছরে ৮০০-৮৫০ টনের মতো সোনা কেনে। এক সময় আমদানির পুরোটাই হত আইনি পথে। এখন প্রায় ২০০ টন হয় চোরাচালান। মাঝখান থেকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তাই ফের সোনার আমদানি কমানোর পদক্ষেপ আদৌ যুক্তিসঙ্গত হবে না।’’

জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রোমোশনের পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান প্রকাশ পিঞ্চারও যুক্তি, ‘‘আমদানি কমানোর চেষ্টা করলে চোরা পথে লেনদেন বাড়বে সেটা জানে কেন্দ্র। ফলে মনে হয় না তারা এমন কোনও পদক্ষেপ করবে।’’ যে কারণে ব্যবসায়ীদের অনেকেই বলছেন, এখন সোনার আমদানিতে রাশ টানার রাস্তায় সরকারের হাঁটার আশঙ্কা কম।

তা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে আগেভাগেই সরকারকে সতর্ক করে দেওয়ার পক্ষপাতী স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি বাবলু দে। তিনি বলেন, ‘‘সোনা আমদানি ছাঁটার আগে সরকারের ভেবে দেখা জরুরি যে, সারা দেশে এই শিল্পের উপর প্রায় ৮ কোটি লোকের রুটিরুজি নির্ভর করছে। সামনেই পুজোর মরসুম। ধনতেরসও রয়েছে। ফলে চাহিদা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে জোগান কমলে টান পড়বে গয়না তৈরির কাঁচামালে। ফলে বাড়তে পারে সোনার দাম।’’

Import Gold Central Government US Dollar Rupee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy