জ্বালানিতে আমদানি নির্ভরতা কমাতে তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রে ঢালাও সংস্কারের পথে হাঁটল কেন্দ্র।
এই লক্ষ্যে বুধবার বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। যেমন:
• রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার হাতে থাকা ৬৯টি গ্যাস ও তেলের খনি নিলামের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া।
• বেসরকারি সংস্থার তরফে কেন্দ্রকে রাজস্বের ভাগ প্রথম থেকেই।
• বাজার দরে বিক্রির স্বাধীনতা।
• শেল অয়েল, গ্যাস তুলতে লাইসেন্স বেসরকারি সংস্থাকে।
আজ কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানান, এত দিন ছোট মাপের ৬৯টি তেল-গ্যাস খনি রাষ্ট্রায়ত্ত ওএনজিসি, অয়েল ইন্ডিয়া-র হাতে থাকলেও, খরচে না-পোষানোয় সেখানে উত্তোলন হচ্ছিল না। অথচ এই সব খনিতে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের প্রাকৃতিক সম্পদ আটকে রয়েছে বলে আনুমানিক হিসাব পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের। খনিগুলি বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়ার পরে বিপুল দেশি ও বিদেশি লগ্নি টানা সম্ভব হবে বলে আশা করছে মোদী সরকার। তিন মাসের মধ্যেই নিলামের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সব থেকে তাৎপর্যপূর্ণ হল, এত দিন যে-সব সংস্থাকে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের জন্য বাছাই করা হত, তাদের তেল-গ্যাস আবিষ্কার, উত্তোলন বা উৎপাদনের খরচ আগে তুলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হত। তার পরে কেন্দ্রকে আয়ের ভাগ দিলেই চলত। নতুন নিয়মে প্রথম থেকেই কেন্দ্রকে রাজস্ব আয়ের ভাগ ও রয়্যালটি দিতে হবে। তবে বাজার নির্ধারিত দরে বিক্রির অধিকার থাকবে। সেখানে সরকার নাক গলাবে না। কাকে বিক্রি করা হবে, সে বিষয়েও সরকারের কোনও ভূমিকা থাকবে না। তবে বাজার দরের থেকে বেশি দামে তেল বা গ্যাস বিক্রি করতে পারলে তার ভাগও সরকারকে দিতে হবে।
পাহাড়ের খাঁজে আটকে থাকা তেল-গ্যাস ভাণ্ডারও কাজে লাগাতে চায় কেন্দ্র। তাই বেসরকারি সংস্থাগুলিকে শেল অয়েল ও গ্যাস উত্তোলনের লাইসেন্সও দেওয়া হবে।
প্রধান ইঙ্গিত দেন, ভবিষ্যতে দশম রাউন্ডের ‘ন্যাশনাল এক্সপ্লোরেশন লাইসেন্সিং পলিসি’ (এনইএলপি)-র আওতায় তেল ও গ্যাস আবিষ্কারের জন্য বরাত দেওয়া হবে। সেই ক্ষেত্রেও কেন্দ্র একই নীতি নিতে পারে। প্রধান বলেন, ‘‘এটা একেবারে মৌলিক পরিবর্তন। এত দিন তেল-গ্যাস উত্তোলনের বরাত পাওয়া সংস্থাগুলিকে আগে নিজেদের খরচ তুলে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হত।’’ এই ‘কস্ট-রিকভারি মডেল’-ই তেল ও গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদন বাড়ানো ও লগ্নি টানার পথে যাবতীয় সমস্যার মূলে বলে অভিযোগ। ইউপিএ সরকারের আমলে এ নিয়ে দু’টি কমিটিও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। মোদী সরকার সেখান থেকে ‘রেভেনিউ শেয়ারিং’ বা রাজস্ব ভাগাভাগির মডেল চালু করছে। এটা নতুন লগ্নি বা ব্যবসার পরিবেশ তৈরির পথে প্রধান পদক্ষেপ।’’
প্রসঙ্গত, অরুণাচল প্রদেশ, অসম, তামিলনাড়ু, রাজস্থান ও নাগাল্যান্ডে অবস্থিত এই ৬৯টি ছোট মাপের খনিতে তেল বা গ্যাসের সন্ধান মিললেও এখনও সেখানে ওএনজিসি বা অয়েল ইন্ডিয়া উৎপাদন শুরু করেনি। তাদের যুক্তি, সংস্থাগুলিকে বাজারের তুলনায় কম দামে রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বণ্টন সংস্থাগুলিকে জ্বালানি বিক্রি করে সরকারি ভর্তুকির একাংশ বহন করতে হয়। তাই ওই ছোট খনিগুলি থেকে উৎপাদন অলাভজনক। নতুন নিয়মে নিলামে ছোট খনি পেলে সেগুলি থেকে বিক্রিতে ভর্তুকির ব্যয়ভার বইতে হবে না। তাই ওএনজিসি, অয়েল ইন্ডিয়া-ও নিলামে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। কিন্তু ছোট খনিতে বেসরকারি সংস্থা কি উৎসাহিত হবে? মন্ত্রীর যুক্তি, ‘‘রাজস্থানের মঙ্গলা তৈলখনিও ওএনজিসি ফেলে রেখেছিল। এখন বেসরকারি হাতে সেখান থেকেই দেশের ২৫% তেল উৎপাদন হয়।’’
মন্ত্রকের হিসেব অনুযায়ী, ওই ৬৯টি খনিতে প্রায় ৮.৮ কোটি টন প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত আছে। এখন আমদানি করা অশোধিত তেলের দাম কমতে কমতে ব্যারেলে ৪৫ ডলারে ঠেকেছে। তা সত্ত্বেও ওই তেল-গ্যাস উত্তোলন হলে বছরে ৩৫০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। কারণ, ভারতকে সিংহভাগ জ্বালানিই আমদানি করতে হয়। তেল মন্ত্রকের কর্তাদের আরও দাবি, প্রাথমিক ভাবে দেশি সংস্থাই নিলামে সামিল হবে। তবে বিদেশি ছোট মাপের সংস্থা, যাদের হাতে উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে, তারাও উৎসাহিত হবে। প্রাথমিক ভাবে ২০ বছর মেয়াদে বরাত দেওয়া হবে। পরে তা ১০ বছর বাড়ানো হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy