আঞ্চলিক সিনেমার টিকিটের উপরে পণ্য পরিষেবা কর (জিএসটি) নিয়ে রাজ্য সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে দুশ্চিন্তায় হল মালিক এবং প্রদর্শকেরা। তাঁদের বক্তব্য, রাজ্য কর ছাড় দেওয়ার কথা বললেও বাস্তবে আগে গাঁটের কড়ি খরচা করে করের পুরো টাকা জমা দিতে হবে। ছাড়ের টাকা কবে ফেরত পাওয়া যাবে তা-ও অনিশ্চিত। এই অবস্থায় শনিবার থেকে বাংলা ছবি দেখানো বন্ধ করার কথা ভেবেছিলেন অনেকে। শেষ পর্যন্ত প্রযোজক-প্রদর্শকদের সংগঠন ইস্টান ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইম্পা) সভাপতির অনুরোধে পিছিয়ে এসেছেন তাঁরা।
জিএসটি জমানায় আজ শনিবার থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত সিনেমার টিকিটের উপরে ১৮ শতাংশ এবং তার বেশি দামের টিকিটের উপরে ২৮ শতাংশ কর বসছে। এই করের অর্ধেক পাবে রাজ্য সরকার। অর্থাৎ ১০০ টাকা পর্যন্ত টিকিটের উপরে রাজ্যের প্রাপ্য ৯ শতাংশ এবং তার থেকে দামি টিকিটের উপরে ১৪ শতাংশ। এই অবস্থায় বাংলা, নেপালি, সাঁওতালির মতো আঞ্চলিক ছবির উপরে চাপ কমাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ঘোষণা করে কম দামি টিকিটের উপরে ৭ শতাংশ এবং বেশি দামি টিকিটের উপরে ১২ শতাংশ কর তারা নেবে না। এই ঘোষণায় খুশি হয়েছিলেন প্রদর্শক ও হল মালিকেরা।
কিন্তু শুক্রবার সরকারি নোটিস হাতে পেয়ে তাঁরা চিন্তিত। কারণ, নোটিসে বলা হয়েছে, রাজ্য যে টাকা ছাড় দেবে তা বাদ দিয়ে টিকিটের দাম ধার্য করতে হবে। এ দিকে, জিএসটি বাবদ পুরো টাকাটাই প্রথমে জমা করতে হবে প্রদর্শক ও হল মালিকদের। পরে সেই টাকা ফেরত দেবে রাজ্য। টাকা ফেরতের শর্তাবলি পরে জানানো হবে বলে নোটিসে উল্লেখ করা হয়েছে। হল মালিকদের বক্তব্য, এমনিতেই আঞ্চলিক সিনেমা বিভিন্ন আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত। তার উপর আগে ঘর থেকে টাকা দিতে হলে সিনেমা দেখানোই কঠিন হবে।
আরও পড়ুন: কমেছে ভারতীয়দের গচ্ছিত টাকা, রিপোর্ট সুইস ব্যাঙ্কের
সরকার পক্ষ অবশ্য বলছে, কর ছাড়ের এটাই স্বাভাবিক নিয়ম। জিএসটি-র ক্ষেত্রেও বিভিন্ন পণ্যে আগে অতিরিক্ত কর দেওয়া থাকলে, পরে তা ফেরত পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। আর দর্শকরা বাড়তি দাম দিয়ে সিনেমা দেখবেন, পরে কর ছাড়ের টাকা ফেরত নিয়ে যাবেন— এটা তো কোনও ব্যবস্থা হতে পারে না! দর্শক যদি কম দামে টিকিট কিনতে না পারেন, তা হলে তো কর ছাড়ের আসল উদ্দেশ্যই মাটি, বলছেন নবান্নের কর্তারা।
হল মালিকেরা অবশ্য নিজেদের পকেট থেকে বাড়তি টাকা কী ভাবে দেবেন, তা নিয়েই চিন্তিত। শেওড়াফুলির ‘উদয়ন’ হলের মালিক পার্থসারথি দাঁ বা বেড়াচাপার ‘বাণীরূপা’র মালিক সুভাষ সেন, সকলের একই কথা, ‘‘খুব টেনশনে আছি! জানি না কী হবে?’’ হল মালিকদের অনেকেই আজ থেকে বাংলা ছবি দেখানো বন্ধ করে দিতে চাইছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে আজ, শনিবার থেকে বাংলা ছবি দেখানো বন্ধ করার কথাই ভাবছিলেন অনেকে। তবে ইন্ডাস্ট্রি সূত্রের খবর, ইম্পা সভাপতি তথা সরকার-ঘনিষ্ঠ প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা হল মালিকদের এমন সিদ্ধান্ত নিতে বারণ করেছেন। ফলে অনিশ্চয়তা সঙ্গী করেই জিএসটি জমানায় যাচ্ছে বাংলা সিনেমা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy