অবশেষে আমরা কম সুদের জমানা ছেড়ে আবার চড়া সুদের জগতে প্রবেশ করতে চলেছি। সুদনির্ভর মানুষের জন্য এটি ভাল খবর হলেও, শিল্প এবং অর্থনীতির কাছে সুদ বৃদ্ধি কিন্তু মোটেও কাম্য নয়। সাড়ে চার বছর পরে গত জুনে আরবিআই রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে এই হারকে পৌঁছে দিয়েছে ৬.২৫ শতাংশে। এর প্রভাবে সুদ বাড়ছে ব্যাঙ্ক, বন্ড এবং অন্যান্য জমায়। পরিস্থিতি যা, তাতে আগামী দিনে সুদ আরও বাড়ার কথা।
গত সপ্তাহে সরকার কৃষিপণ্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেছে। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, ১৪ রকমের শস্য ফলনে যা খরচ হবে, তার উপর ৫০ শতাংশ রিটার্নের ব্যবস্থা রাখা হবে ওই সব শস্যের সহায়ক মূল্যে। এই খাতে সরকারের আনুমানিক খরচ হবে ১৫,০০০ কোটি টাকা। কৃষক সমাজ এবং গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য এটি যে ভাল খবর, তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু এর প্রভাবে বাড়তে পারে পণ্যমূল্য। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে তা সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনাও বাড়াবে।
বিশ্লেষকদের অনুমান, সরকারের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পণ্যমূল্য বাড়তে পারে ২৫ থেকে ৭০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত। এর ফলে সুদ বাড়াতে হতে পারে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে। অনুমান, চলতি আর্থিক বছরে সুদ বাড়ানো হতে পারে আরও দু’বার। আশঙ্কা, রেপো রেট পৌঁছে যেতে পারে ৬.৭৫ শতাংশে। এর প্রভাবে যেমন জমায় সুদ বাড়বে, তেমনই সুদ বাড়বে শিল্পঋণ, বাড়ি ও গাড়িঋণে। শিল্পের জন্য যা মোটেও ভাল কথা নয়।
আশা-নিরাশার খতিয়ান
• কৃষিপণ্যের সহায়ক মূল্যবৃদ্ধি। এর জেরে বাড়তে পারে পণ্যমূল্য। চড়তে পারে সুদের হার।
তবে কৃষক এবং গ্রামীণ অর্থনীতির জন্য এই সিদ্ধান্ত ভাল মনে করা হচ্ছে।
• স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ না বাড়া। যা হতাশ করেছে লগ্নিকারীদের।
• বেশ কিছু বড় মাপের সংস্থার বন্ড এবং এনসিডি ইস্যু নিয়ে বাজারে হাজিরের তোড়জোড়।
• চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের আর্থিক ফলাফল ভাল হওয়ার আশা। এই সপ্তাহেই ফল প্রকাশ শুরু।
• লগ্নিকারীদের তরফে সাড়া পাওয়ার পরে বাজারে ভাল দামে রাইট্স-এর শেয়ার নথিবদ্ধ হওয়া।
১৮৫ টাকায় ইস্যু করা শেয়ার প্রথম দিনের শেষে বন্ধ হয়েছে ২১২ টাকায়।
• সময়ের আগে দেশের সর্বত্র বর্ষা পৌঁছলেও বৃষ্টিপাতে ঘাটতি। বিশেষজ্ঞরা অবশ্য বলছেন, জুলাইয়েই এই ঘাটতি মিটে যেতে পারে।
• ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামে পতন জারি থাকা। ফলে মাথায় হাত আমদানি নির্ভর শিল্পের।
এমনকী ব্যাঙ্কিং মহলে একাংশের আশঙ্কা ডলার ছুঁয়ে ফেলতে পারে ৭০ টাকা।
• মে মাসের শেষে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পে সম্পদের পরিমাণ ২২.৬০ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে যাওয়া।
গত দু’মাসে সুদ কিছুটা করে বাড়ানো হয়েছে ব্যাঙ্ক এফডি, বন্ড এবং কোম্পানি আমানতে। চড়চড়িয়ে বেড়েছে বন্ড ইল্ড। এক সময় ইল্ড ছুঁয়ে ফেলেছিল ৮ শতাংশ। পরিস্থিতির বিচারে আশা ছিল, এ বার অবশ্যই সুদ বাড়ানো হবে কয়েকটি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে। কিন্তু সবাইকে হতাশ করে সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, জুলাই-সেপ্টেম্বর এই মেয়াদে সুদের হার অপরিবর্তিতই থাকছে সেগুলিতে।
অন্য দিকে সুদ বাড়তে থাকায় নতুন করে চাহিদা তৈরি হচ্ছে কোম্পানি বন্ড এবং অরূপান্তরযোগ্য ডিবেঞ্চারের (এনসিডি)। ব্যাঙ্কঋণে সুদ বাড়তে শুরু করায় ও ইকুইটি বাজারে অস্থিরতা চলায় অনেক সংস্থা তহবিল সংগ্রহে বন্ড এবং এনসিডি-র পথ বেছে নিয়েছে। ব্যাঙ্কের তুলনায় সুদের হার কিছুটা বেশি হওয়ায় এর আকর্ষণ অনুভব করছেন লগ্নিকারীরা।
তথ্য অনুযায়ী, দেশের বড় মাপের কিছু সংস্থা আগামী দিনে এনসিডি ইস্যুর মাধ্যমে ৭৫-৮০ হাজার কোটি তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এই তালিকায় আছে টাটা স্টিল, রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ, শ্রীরাম ট্রান্সপোর্ট, পিএনবি হাউজিং ইত্যাদির মতো কোম্পানি। রিলায়্যান্স, আইডিয়া, টাটা স্টিল এবং পিএনবি হাউজিং এই পথে সংগ্রহ করতে চায় যথাক্রমে ২০, ১৫, ১২ এবং ১০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ যাঁরা একটু বেশি সুদে ভাল রেটিংযুক্ত সংস্থার এনসিডি-তে মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে টাকা রাখতে চান, তাঁরা অপেক্ষা করতে পারেন এই সমস্ত ইস্যুর জন্য।
চলতি সপ্তাহে শুরু হয়ে যাবে ২০১৮-১৯ সালের প্রথম ত্রৈমাসিক আর্থিক ফলাফল প্রকাশের পালা। প্রথা অনুযায়ী বড়দের মধ্যে প্রথমেই ফলাফল হাতে বাজারে দেখা যাবে অগ্রণী প্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস-কে। গত সপ্তাহে এই শেয়ারের বাজারদরে কিছুটা পতন হয়েছে এই আশঙ্কায় যে, এই দফায় কোম্পানি তেমন ভাল ফলাফল উপহার নাও দিতে পারে। তবে সামগ্রিক ফলাফল নিয়ে বাজার আশাবাদী।
অনুমান করা হচ্ছে, প্রথম তিন মাসে এনএসই-র সূচক নিফটির অধীনে থাকা ৫০টি সংস্থার বিক্রি এবং লাভ বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের বেশি হতে পারে। ফলাফলের উপর নজর রেখে আগামী দিনে ঘুঁটি সাজাতে পারেন লগ্নিকারীরা।