Advertisement
E-Paper

নখের ডগায় পিএফ

পিএফের টাকা গত মাসে অ্যাকাউন্টে জমা পড়েছে কি? কত হল মোট অঙ্ক? আর যদি টাকা তুলি? নেটে হেঁটেই সব কিছু করে ফেলার উপায় বাতলাচ্ছেন প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী ও মেধা রায়এখন জমানা পাল্টেছে। ব্যাঙ্ক, মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলির মতো অনলাইনে আধুনিক পরিষেবা দিতে শুরু করেছে পিএফ দফতরও।

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৮ ০৭:০০

একটা সময় ছিল, যখন কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডে (ইপিএফ) আপনার কত টাকা জমেছে, তা জানার জন্য লম্বা সময় অপেক্ষা করা ছাড়া গতি ছিল না। প্রতি মাসে বেতন থেকে ওই খাতে কেটে নেওয়া টাকা নিয়মিত অ্যাকাউন্টে জমা পড়ছে কি না, তা জানার জন্যও বসে থাকতে হত বছরভর। আবার পিএফ থেকে অগ্রিম টাকা তুলতে হলেও আবেদনপত্র পৌঁছে দিতে হত তাদের দফতরে।

এখন জমানা পাল্টেছে। ব্যাঙ্ক, মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থাগুলির মতো অনলাইনে আধুনিক পরিষেবা দিতে শুরু করেছে পিএফ দফতরও। যার দৌলতে পিএফের পাসবই দেখাই হোক কিংবা নাম, জন্মের তারিখ ঠিক করা বা ধরুন ক্লেমের টাকা দাবি— সবই বাড়িতে বসে করা যেতে পারে হাতের কাছে শুধু একটা কম্পিউটার থাকলেই। এমনকি অনেক কাজ সেরে ফেলা যায় স্মার্টফোনেও। কী ভাবে? আজকের আলোচনা তা নিয়েই।

প্রথম শর্ত ইউএএন

প্রতিবার চাকরি ছাড়ার সময়ে পিএফের টাকা তোলা বা তা নতুন অ্যাকাউন্টে নিয়ে যেতে সমস্যায় যাতে না পড়তে হয়, মূলত সে জন্যই ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর (ইউএএন) চালু করা হয়েছে।

• প্রথম চাকরিতে যোগ দেওয়ার সময়েই সংস্থা থেকে এই নম্বর মেলে।

• সংস্থা পাল্টালে পিএফ নম্বর পাল্টায়। কিন্তু ইউএএন সারা চাকরি জীবনে একটিই থাকে। ফলে এক ছাদের তলায় চাকরিজীবীর পিএফের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টের সব তথ্য মেলে।

• নেটে পিএফ পরিষেবা পেতে এই নম্বর বাধ্যতামূলক।

করতে হবে ই-লিঙ্কিং

অনলাইনে পিএফের পরিষেবা পেতে হলে, প্রথমে ই-লিঙ্কিং অথবা ই-ভেরিফিকেশন করাতে হবে আপনাকে। এ জন্য—

• পিএফ দফতরে আপনার ইউএএন-এর সঙ্গে আধার নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং প্যান নম্বর যোগ করাতে হবে।

• এগুলির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে মোবাইল নম্বরও। কারণ পরিষেবা দেওয়ার সময়ে অনেক ক্ষেত্রেই মোবাইলে একটি এক বার ব্যবহারযোগ্য পাসওয়ার্ড (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি) পাঠানো হয়। সেটি যাতে ঠিক লোকের কাছে পৌঁছয়, তা নিশ্চিত করতেই মোবাইল নম্বর যোগ করার কথা বলা হয়।

• সাধারত সমস্যা এড়াতে এবং নিরাপত্তার খাতিরে ইউএএন, আধারে একই মোবাইল নম্বর যুক্ত করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

করবেন কী ভাবে?

ইউএএনে নাম নথিভুক্তির দিন কয়েক পরে ফিরে যান ওয়েবসাইটে। এটি দু’ভাবে করা যায়—

প্রথমত

• ‘মেম্বার ইউএএন/অনলাইন সার্ভিস (ওসিএস/ওটিসিপি)’ পেজে ইউএএন, পাসওয়ার্ড, ক্যাপচা দিন।

• পাসওয়ার্ড জানা না থাকলে, ‘ফরগট পাসওয়ার্ড’ থেকে নতুন পাসওয়ার্ড তৈরি করুন।

• কেওয়াইসি তথ্য দিন। তা যাবে নিয়োগকারী সংস্থার কাছে।

• সংস্থা ওই তথ্যে অনুমোদন দিলেই ই-ভেরিফিকেশন/লিঙ্কিং সম্পূর্ণ হবে।

দ্বিতীয়ত

• কেওয়াইসি নিয়োগকারীর কাছে জমা দিতে পারেন।

• সংস্থা ডিজিটাল সইয়ের মাধ্যমে তা অনুমোদন করে অনলাইনে পিএফ দফতরে পাঠাতে পারে।

খেয়াল রাখুন

অনেক সময়ে নিয়োগকারী ডিজিটাল সই করে কর্মীর কেওয়াইসি তথ্য অনুমোদন করার পরেও দেখা যায় পিএফ দফতর তা সফল নয় বলে জানাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে যে, কেওয়াইসি তথ্যে ভুল রয়েছে। ওই তথ্য সংশোধন করে অনলাইনে আপলোড করে ভেরিফিকেশনের প্রক্রিয়া আবার সম্পূর্ণ করতে হবে।

সুবিধা কী কী?

এ বার আসব নেটে কী কী পরিষেবা মেলে সেই প্রসঙ্গে। এতে রয়েছে—

• পাসবই দেখা।

• ইউএএন কার্ড তৈরি।

• পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য আপডেট। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত সেই তথ্য নেটে আপডেট করা যায়। তার বেশি হলে যোগাযোগ করতে হবে সংস্থার সঙ্গে।

• আধার, প্যানের মতো কেওয়াইসি তথ্য আপডেট করা।

• অবসরের পরে পিএফের টাকা দাবি করা।

• এক চাকরি ছেড়ে অন্য চাকরিতে যোগ দিলে, নেটেই পুরনো চাকরির পিএফের টাকা নতুন অ্যাকাউন্টে পাঠাতে আর্জি জানানো যায়।

এ ছাড়া, পেনশন প্রাপকদের জন্যও অনলাইনে লাইফ সার্টিফিকেট জমা দেওয়া-সহ বেশ কিছু সুবিধা আছে এই পরিষেবায়।

• আপনার এবং নিয়োগকারীর অংশ থেকে পিএফে জমা পড়া টাকার অঙ্ক এ ক্ষেত্রে দেখা যাবে। সেই সঙ্গে জানা যাবে পেনশনে জমা পড়া টাকাও।

• সুবিধার জন্য পাসবই ডাউনলোড করে প্রিন্টও নিতে পারেন।

পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য

পরিচয়, মোবাইল নম্বর, ই-মেল এবং কেওয়াইসি সংক্রান্ত তথ্য ঠিক না থাকলে, পিএফের টাকা তোলা বা অগ্রিম নেওয়ায় সমস্যা হয়। এই তথ্য অনলাইনে ঠিক করা যায়।

নামের বানানে তিনটি অক্ষর পর্যন্ত ভুল বা জন্মের তারিখে গণ্ডগোল থাকলে (এক বছর আগে ও পরে পর্যন্ত), নেটে শোধরানো যায়। তার বেশি হলে আবেদন করতে হয় সংস্থার কাছে। তারাই পরিবর্তিত তথ্য পিএফ দফতরে পাঠাবে। তথ্য পাল্টাতে—

• নিজস্ব হোমপেজে যান।

• ‘ম্যানেজ’ ক্লিক করুন।

• রয়েছে কনট্যাক্ট ডিটেলস, কেওয়াইসি, মডিফাই বেসিক ডিটেলস, ই-নমিনেশন।

• নির্দিষ্ট জায়গায় পূরণ করুন।

• পিএফ দফতর নিয়োগকারী সংস্থার কাছে সংশোধিত তথ্য পাঠাবে। তারা সম্মতি দিলে তা বদলে যাবে।

• ই-নমিনেশনের সুবিধা নেটে নেই।

নেটে টাকা দাবি

অনলাইনে মূলত তিনটি ক্ষেত্রে টাকা ক্লেম করা যায়—

• অবসর বা কোনও কারণে চাকরি ছাড়লে, ফর্ম ১৯-এর মাধ্যমে।

• চিকিৎসা, পড়াশোনা, বিয়ের মতো ক্ষেত্রে অগ্রিম নিতে ফর্ম ৩১।

• পেনশনের টাকা তুলতে ফর্ম ১০সি। তবে এ জন্য আন-এগ্‌জেম্পটেড সংস্থায় কাজ করতে হবে। চাকরির মেয়াদ হতে হবে ৬ মাসের বেশি এবং সাড়ে ৯ বছরের কম।

মাথায় রাখুন

পিএফের পেনশন পেতে অন্তত ১০ বছর পিএফ এবং পেনশন তহবিলে টাকা জমা পড়া জরুরি। টানা চাকরি না করলেও চলবে। একাধিক সংস্থায় চাকরির মেয়াদ যোগ করে ১০ বছর হওয়া চাই। একটি চাকরি ছাড়ার সময়ে পিএফের টাকা তুলে নিলে, সেই চাকরির মেয়াদ পেনশন হিসেবের সময়ে গোনা হবে না। পুরনো সংস্থার পিএফের টাকা নতুন সংস্থায় স্থানান্তরিত হলে, তবেই যোগ হবে।

অ্যাকাউন্ট জোড়া

এক চাকরি ছেড়ে অন্য সংস্থায় যোগ দিলে, পুরনোটিতে জমা হওয়া পিএফ তহবিল নতুন পিএফ অ্যাকাউন্টে আনা যায়। লাগে ফর্ম ১৩। সেই আর্জিও জানানো যায় অনলাইনে।

• একই ভাবে, আগের চাকরিতে জমা টাকা আনতে যেতে হবে ‘ওয়ান মেম্বার-ওয়ান ইপিএফ অ্যাকাউন্ট (ট্রান্সফার অ্যাকাউন্ট)’-এ।

• আবেদনের বর্তমান অবস্থা জানতে রয়েছে ‘ট্র্যাক ক্লেম স্টেটাস’।

কখন অনলাইনে নয়?

• পেনশনের জন্য লাগে ফর্ম ১০ডি। তা অনলাইনে জমা দেওয়া যায় না।

• নির্দিষ্ট মেয়াদের থেকে কম চাকরি করলে ফর্ম ১০সি-তে পেনশন তোলা যায়। কিন্তু, যাঁরা ‘এগ্‌জেম্পটেড’ সংস্থায় কাজ করেন, তাঁরা ওই ফর্ম অনলাইনে জমা দিতে পারবেন না।

• চাকরিরত অবস্থায় মৃত্যু হলে, ফর্ম ২০ জমা দিয়ে উত্তরাধিকারী বা নমিনিকে পিএফের টাকা তোলার আর্জি জানাতে হয়। কিন্তু তা নেটে করা যায় না।

• চাকরিরত অবস্থায় কর্মী মারা গেলে বিমার টাকা পেতে ফর্ম ৫এফ জমা দিতে হয় পরিবারকে। কিন্তু তা দিতে হয় হাতে হাতে।

পেনশন প্রাপকদের জন্য

পিএফের পেনশন পেতে ফি বছর লাইফ সার্টিফিকেট জমা দিতে হয়। ডিজিটাল সার্টিফিকেট জমা দিতে—

• ইপিএফও-র সাইটে গিয়ে পেনশনার্স পোর্টালে যেতে হবে।

• সেখানে ‘জীবন প্রমাণ’ আইডি দিয়ে ডিজিটাল লাইফ সার্টিফিকেট জমার সুবিধা মিলবে।

• এ জন্য ফিঙ্গার প্রিন্ট (আঙুলের ছাপ) বা আইরিসের (চোখের মণি) স্ক্যানারের সাহায্য নিতে হবে।

তথ্য অ্যাপেও

পিএফ সম্পর্কে প্রাথমিক অনেক তথ্য পাবেন সরকারি অ্যাপেও। প্রয়োজনে স্মার্ট ফোনে তা ডাউনলোড করুন।

তথ্য সহায়তা: রাজীব ভট্টাচার্য, আঞ্চলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার-১

PF Account Mobile Version Smartphone
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy