Advertisement
E-Paper

মেক ইন ইন্ডিয়ার প্রচারে সহজ হয়নি লগ্নির পথ

দিল্লির দরবার দখলের পর থেকে গত পনেরো মাসে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে জোর দেওয়ার কথা প্রায় নিয়ম করে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অথচ হাসপাতালের মতো জরুরি পরিষেবায় লগ্নি টানতেও ভারত সেই তিমিরে।

নয়াদিল্লি

শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০২:১৭

দিল্লির দরবার দখলের পর থেকে গত পনেরো মাসে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্পে জোর দেওয়ার কথা প্রায় নিয়ম করে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। অথচ হাসপাতালের মতো জরুরি পরিষেবায় লগ্নি টানতেও ভারত সেই তিমিরে।

বাজার বিশাল। চাহিদা অফুরান। প্রায় নিশ্চিত মুনাফার গন্ধে টাকা ঢালতে তৈরি দেশি-বিদেশি লগ্নিকারীরাও। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ দেশে হাসপাতাল তৈরির দিকে চট করে পা বাড়াতে চাইছে না চিকিৎসা পরিষেবা সংস্থাগুলি। আর কারণ হিসেবে সেই লাল ফিতের ফাঁসের দিকেই অভিযোগের আঙুল তুলছে তারা।

ভারতে চিকিৎসা পরিষেবার বাজার বিরাট (৫,৫০০ কোটি ডলার বা ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা)। ফি বছর তা বাড়ছেও আকর্ষণীয় হারে। কিন্তু সংস্থাগুলির অভিযোগ, এ দেশে হাসপাতাল তৈরির জন্য বিভিন্ন স্তরে প্রশাসনের (কেন্দ্র থেকে স্থানীয়) কাছ থেকে ৭০টির মতো ছাড়পত্র নেওয়া জরুরি। তার জন্য এক দফতর থেকে আর এক দফতরে দৌড়ে বেড়ানোর হয়রানি তো আছেই, রয়েছে অনন্ত অপেক্ষাও। ফলে প্রকল্প চালুর সময় ক্রমশ পিছোতেই থাকে। কঠিন হয় লাভের মুখ দেখা। আর এই বিরক্তির কারণেই নতুন হাসপাতাল গড়ার পরিবর্তে তৈরি হাসপাতাল কেনার দিকে ঝুঁকছে তারা।

হাতের কাছেই এমন উদাহরণের সংখ্যা নেহাত কম নয়। মুম্বইয়ে ৪৫০টি শয্যার হাসপাতাল তৈরিতে হাত দিয়েছিল আইএইচএইচ গোষ্ঠীর শাখা পার্কওয়ে পান্টাই। কথা ছিল, সিঙ্গাপুরের সংস্থাটির ওই হাসপাতাল চালু হয়ে যাবে ২০১২ সালে। কিন্তু ২০১৫ সালে দাঁড়িয়ে আগামী বছরের আগে তা চালু হবে বলে আশা করছে না তারা!

ফলে এখন ‘ঠেকে শিখে’ পার্কওয়ে চেষ্টা করছে তৈরি হাসপাতাল কিনে নিয়েই এ দেশের বাজার ধরতে। পশ্চিম ও দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্থার ভারপ্রাপ্ত কর্তা রমেশ কৃষ্ণন জানিয়েছেন, ‘‘এই বাজারে পা রাখার জন্য অনন্ত কাল অপেক্ষা করার কোনও মানে নেই। তাই অধিগ্রহণের পথেই হাঁটছি আমরা।’’

চলতি বছরে এ দেশের গ্লোবাল হসপিটালস এবং কন্টিনেন্টাল হসপিটালসের সিংহভাগ অংশীদারি হাতে নিয়েছে আইএইচএইচ হেল্‌থ কেয়ার। অ্যাপোলো হসপিটালসেও ১০.৮৫% শেয়ার রয়েছে তাদের। ২০১৮ সালের মধ্যে ৩৫টি হাসপাতাল কেনার কথা জানিয়েছে সিগনাস হসপিটালস। পছন্দসই জমি না-পেয়ে শেষমেশ গুয়াহাটিতে ২২০ শয্যার হাসপাতাল কিনেছে অ্যাপেলো। একই ভাবে নতুন হাসপাতাল তৈরির পরিবর্তে কেনার পথে হাঁটার কথা জানিয়েছে মণিপাল হসপিটালসও। ওই সংস্থার সিওও গোপাল দেবনল্লির অভিযোগ, ‘‘হাসপাতালের জমি আর ছাড়পত্র পেতে বহু বছর লাগবে।’’ বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, পুরনো হাসপাতাল কিনলে, খাতায়-কলমে লগ্নির অঙ্ক বাড়বে। কিন্তু কাজের নতুন সুযোগ কিংবা দেশে চিকিৎসা পরিকাঠামো
সে ভাবে বাড়বে কি? নতুন হাসপাতাল তৈরি হলে যা অনেক বেশি করে হওয়া সম্ভব ছিল।

নরেন্দ্র মোদী প্রায়ই বলছেন, ভারতে ব্যবসা ও বিনিয়োগের পথ সহজ করার (ইজ অব ডুয়িং বিজনেস) কথা। দাবি করছেন, সেই লক্ষ্যে সবার আগে লাল ফিতের ফাঁস আলগা করার উপরই জোর দিচ্ছে তাঁর প্রশাসন। অথচ এত কিছুর পরে নতুন হাসপাতাল গড়তে গিয়ে সেই আমলাতন্ত্রের পচা শামুকেই পা কাটছে চিকিৎসা সংস্থাগুলির। অভিজ্ঞতা এতই তেতো যে, পারতপক্ষে নতুন হাসপাতাল গড়তেই চাইছে না তারা।

শুধু তা-ই নয়। অনেকের মতে আরও চিন্তার বিষয় হল, সমস্যা তৈরি হচ্ছে নতুন হাসপাতাল গড়তে। দেশে যার সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি ১০ হাজার জনের জন্য মাত্র ৭টি হাসপাতাল শয্যা আছে ভারতে। যেখানে চিন ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তা যথাক্রমে ৩৮ ও ১০।

প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কিন্তু স্বাস্থ্য পরিষেবাকে ঢেলে সাজার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন মোদী। সেখানে হাসপাতাল তৈরির ছাড়পত্র দিতে প্রশাসনের এত গড়িমসি, পায়ে পায়ে লাল ফিতের ফাঁস হতাশই করেছে সংশ্লিষ্ট শিল্পকে।

make in india health sector hospital industry health industry no investment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy