Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
India-China

চিনা সংস্থার বরাত বাতিল রেলের

বেসরকারি টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলিকেও একই রকম নির্দেশ পাঠানোর কথা ভাবছে কেন্দ্র। তার পরেই রেল মন্ত্রকের বরাত বাতিল করার সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে। 

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০২০ ০৩:৩১
Share: Save:

মোদী সরকার যে অর্থনৈতিক সম্পর্কে চিনকে আর বাড়তি সুবিধা দিতে চায় না, তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করল।

বৃহস্পতিবার ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর তৈরির প্রকল্পে চিনা সংস্থার ৪৭১ কোটি টাকার বরাত বাতিল করল ভারতীয় রেল। এর আগে বুধবার রাতে খোদ টেলিকম মন্ত্রক নির্দেশ জারি করে বলেছে, বিএসএনএলের ৪জি সংযোগ চালু করতে একটিও চিনা যন্ত্রাংশ যেন ব্যবহার করা না-হয়। বেসরকারি টেলিকম পরিষেবা সংস্থাগুলিকেও একই রকম নির্দেশ পাঠানোর কথা ভাবছে কেন্দ্র। তার পরেই রেল মন্ত্রকের বরাত বাতিল করার সিদ্ধান্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভি কে যাদব অবশ্য যুক্তি দিয়েছেন, সিগন্যালিং ও টেলি-যোগাযোগের ক্ষেত্রে বেজিং ন্যাশনাল রেলওয়ে রিসার্চ অ্যান্ড ডিজ়াইন ইনস্টিটিউট অব সিগন্যাল অ্যান্ড কমিউনিকেশনের কাজের ঢিলেমির জন্যই বরাত বাতিলের পদক্ষেপ। চিনা সংস্থাটি ২০১৬ সালে ফ্রেট করিডরের কানপুর থেকে মুগলসরাই পর্যন্ত ৪১৭ কিলোমিটার অংশে ওই পরিকাঠামোর নকশা, নির্মাণ, সরবরাহ, পরীক্ষা ও চালুর দায়িত্ব পেয়েছিল। ২০১৯-এর মধ্যে কাজ সম্পূর্ণ করার কথা ছিল। অথচ এ পর্যন্ত ২০% করতে পেরেছে।
সঙ্ঘ পরিবারের স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের দাবি, দিল্লি-মেরঠ র‌্যাপিড রেল ট্রানজ়িট সিস্টেম তৈরির কাজে চিনের সংস্থা সাংহাই টানেল ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির বরাতও বাতিল হোক। নগরোন্নয়ন মন্ত্রকের যুক্তি, এখনও দরপত্রের প্রক্রিয়াই চূড়ান্ত হয়নি।
শিল্পকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, চিনা পণ্য বয়কট করে পড়শি দেশকে শায়েস্তা করার এই জিগির সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ডিং হচ্ছে ঠিকই। তবে জিয়োমি বা রিম অ্যান্ড হায়ারের মতো স্মার্টফোন ও ভোগ্যপণ্য সংস্থার বিক্রিবাটায় এর আঁচ এখনও পড়েনি।

তবে অন্য ভাবেও যে কেন্দ্র চিনের উপরে চাপ তৈরির কথা ভাবছে, তা স্পষ্ট। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, চিনের আর্থিক লগ্নিকারী সংস্থাগুলির (এফপিআই) মাধ্যমে ভারতে বিনিয়োগের উপরে বিধিনিষেধ জারি হতে পারে। এর আগে চিন থেকে প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নিতে সরাসরি সায় না-দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। আজ উপভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান বলেন, চিন থেকে সস্তা ও খারাপ মানের পণ্য আসা ঠেকাতে শীঘ্রই বিধিনিষেধ জারি হবে। আমজনতাকেও তিনি চিনা পণ্য বর্জনের অনুরোধ করেছেন। ছোট-মাঝারি শিল্পমন্ত্রী নিতিন গডকড়ীরও বার্তা, ‘‘সরাসরি বলার সময় এসেছে যে, চিনের উপর নির্ভর করা অনুচিত।’’ চিন থেকে আমদানি করা পণ্যের বিকল্প তৈরির নীতিও কেন্দ্র তৈরি করছে বলে দাবি তাঁর। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা এত দিন এ ভাবে সরাসরি চিনা পণ্য বর্জনের কথা বলেননি। যদিও বর্তমান বার্ষিক আমদানির রিপোর্ট মাফিক যা প্রায় ৫.২৫ লক্ষ কোটি।

দেশের ছোট ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএআইটি আজ সিনেমা ও খেলার জগতের ব্যক্তিত্বদের চিনা পণ্যের বিজ্ঞাপনে মুখ না-দেখানোর অনুরোধ করেছে। সিএআইটি-র সেক্রেটারি জেনারেল প্রবীণ খন্ডেলওয়াল জানান, ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চিন থেকে আমদানি প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা কমাতে সরকারকে সাহায্য করা হবে। তবে চিনা সংস্থাগুলির দাবি, তাদের পণ্য-বিরোধী প্রচারের কোনও প্রভাব এখনও বুঝতে পারছে না তারা। ভোগ্যপণ্যের সংগঠন সিইএএমএ অবশ্য বলছে, যে ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ছয়লাপ চিনা পণ্য বর্জনের ডাকে, তাতে আগামী দিনে সংস্থাগুলির ব্যবসায় প্রভাব পড়বেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

India China Indian Railways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE