Advertisement
E-Paper

সর্বজনীন উন্নয়ন সূচক: চিন, এমনকী পাকিস্তানেরও নীচে ভারত

একটা দেশের উন্নয়নের অবস্থা বুঝতে তার জাতীয় উত্পাদন একটা মাপকাঠি। বৃদ্ধির হারও তাই। কিন্তু শুধু এগুলো দিয়েই একটা দেশের প্রকৃত উন্নয়নচিত্র ধরা পড়ে না।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ২০:৩৬
.

.

মোদী সরকারের ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ স্লোগানটা যে কতটা খাতায় কলমেই রয়ে গিয়েছে, তা আর এক বার দেখিয়ে দিল ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের সর্বজনীন উন্নয়ন সূচক (ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স বা আইডিআই)। দেশের গড়পড়তা জীবনযাপনের নিরিখে ভারত তার প্রতিবেশী দেশগুলির থেকে অনেকটাই পিছিয়ে। চিন তো বটেই— এমনকী পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশও অনেকটা এগিয়ে ভারতের থেকে। গত বছরই ফোরাম প্রথম এই রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তাতেও ভারত পিছিয়ে ছিল অধিকাংশ দেশের থেকে।

২৩-২৬ জানুয়ারি সুইত্জারল্যান্ডের দাভোসে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলন। এই সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যেমন থাকছেন, থাকছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। সোমবার, সম্মেলন শুরুর আগের দিনই প্রকাশিত আইডিআই রিপোর্টে, সর্বজনীন বিকাশের নিরিখে বিভিন্ন দেশের ক্রমতালিকা দেওয়া হয়েছে। তাতে উন্নয়নশীল ৭৪টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান শেষ দিকে, ৬২ নম্বরে। চিন আছে ২৬ নম্বরে। বাংলাদেশ ৩৪, শ্রীলঙ্কা ৪০ এবং পাকিস্তান ৪৭ নম্বরে। গত বছর ভারত ছিল তালিকার ৬০ নম্বরে। চিন ভারতের থেকে অনেকটা এগিয়ে থাকলেও, গত বছরের তুলনায় তালিকার বেশ খানিকটা নীচে নেমে এসেছে। জানুয়ারি, ২০১৭-তে প্রকাশিত রিপোর্টে চিন ছিল ১৫ নম্বরে।

দাভোসে মহা জমায়েত শুরুর ঘণ্টা কয়েক আগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী অক্সফ্যামও বলেছে, আয়ের বৈষম্য বাড়ছে ভারত-সহ প্রায় সব দেশেই। তাদের সমীক্ষায় প্রকাশ, এ দেশে ৭৩% সম্পত্তিই রয়েছে ১% ধনকুবেরের ঝুলিতে। এর পরিমাণ ২০১৭ সালে বেড়েছে ২০.৯ লক্ষ কোটি টাকা। ২০১৭-’১৮ সালে কেন্দ্রীয় বাজেটের সমান যে অঙ্ক। আর বিশ্বে ২০১৭ সালে তৈরি হওয়া ৮২% সম্পত্তি কুক্ষিগত ১ শতাংশের হাতে। যেখানে সবচেয়ে গরিব ৩৭০ কোটি জনের সম্পত্তি প্রায় বাড়েইনি।

বৈষম্যের মাত্রা স্পষ্ট করে তথ্য বলছে, ভারতের গ্রামাঞ্চলে ন্যূনতম মজুরি পাওয়া এক কর্মী কোনও পোশাক সংস্থার সব থেকে বেশি বেতন পাওয়া শীর্ষ কর্তার এক বছরের সমান আয় করতে নেবেন ৯৪১ বছর! আর মার্কিন মুলুকে এক জন সিইও প্রায় এক দিনেই পকেটে পোরেন সে দেশের সাধারণ কর্মীর বছরভরের রোজগার। সকলকে উন্নয়নের যজ্ঞে সামিলের সাফল্য খুঁজতে ডব্লিউইএফ বিচার করে জীবনযাত্রার মান, পরিবেশকে বাঁচিয়ে আর্থিক উন্নয়নের কর্মকাণ্ড চালানো, ঋণে জড়ানো থেকে আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখার মতো নানা মাপকাঠি।

নোটবন্দির মাধ্যমে কালো টাকা নিকেশ, গ্রামে ব্যাঙ্ক খোলা বা সরাসরি ভর্তুকির অর্থ অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ করে দেশের গরিবদের অবস্থা ফেরানোর কথা বারবার বলেন মোদী। বুক বাজিয়ে জানান উন্নয়ন-যজ্ঞে সকলকে সামিল করার কথা। কিন্তু দাভোসে তাঁর পা রাখার দিনেই ভারত সরকারের কাছে অক্সফ্যামের আর্জি, শুধু মুষ্টিমেয় কয়েক জন নন, অর্থনীতির সুফল যাতে সকলেই পান তা নিশ্চিত করুক তারা। ডব্লিইইএফের মতে, বিশ্ব জুড়ে শুধু বৃদ্ধিকে গুরুত্ব দেওয়াতেই প্রকট হয়েছে বৈষম্য। মাথা তুলেছে আয়ের ফারাক। মার খেয়েছে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ, আর্থিক সুরক্ষা, জীবনযাত্রার মান।
বৈষম্যের এই সমস্যা সারা বিশ্বের। কিন্তু এ দিন স্পষ্ট, মোদীর ভারতের স্থান সেখানে বেশ উঁচুতেই।

একটা দেশের উন্নয়নের অবস্থা বুঝতে তার জাতীয় উত্পাদন একটা মাপকাঠি। বৃদ্ধির হারও তাই। কিন্তু শুধু এগুলো দিয়েই একটা দেশের প্রকৃত উন্নয়নচিত্র ধরা পড়ে না। দেশে সম্পদের বণ্টন কেমন, জীবনযাত্রার গড় মান কেমন, কর্মসংস্থানের সুযোগ, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য-শিক্ষার নিরাপত্তা— এ সবও গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই সমস্ত দিক বিচার করেই তার সর্বজনীন উন্নয়ন সূচক তৈরি করছে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম। এই ইনডেক্স তৈরিতে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে আইএলও, আইএমএফ, বিশ্বব্যাঙ্ক, ডব্লিউটিও-সহ বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংগঠনের সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে।

আরও পড়ুন: যা ছিল তেরো, হয়ে গেল আঠারো!

আরও পড়ুন: সূচক শিখরে, প্রশ্ন বাজারের স্বাস্থ্য নিয়ে

মোট ১০৩টি দেশকে দুটো ভাগে ভাগ করে আলাদা আলাদা তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এক দিকে আছে ৭৪টি উন্নয়নশীল দেশ। অন্য দিকে ২৯টি উন্নত দেশ।

উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছে লিথুয়ানিয়া। দু’নম্বরে হাঙ্গেরি, তিনে আজারবাইজান, চারে লাতভিয়া এবং পাঁচ নম্বরে রয়েছে পোল্যান্ডের নাম।

উন্নত দেশগুলির তালিকায় প্রথমেই রয়েছে নরওয়ের নাম। আগের বছরের তালিকাতেও নরওয়ে এক নম্বরে ছিল। গত বারের চার নম্বর থেকে এ বারের তালিকায় দুয়ে উঠে এসেছে আইসল্যান্ড। গত বার দ্বিতীয় স্থানে থাকা লুক্সেমবার্গ এ বার তৃতীয় হয়েছে। তিনে থাকা সুইৎজারল্যান্ড এ বার চারে এবং গত বারের মতো ডেনমার্ক এ বারও পাঁচ নম্বর স্থানেই রয়েছে। উন্নত দেশগুলির মধ্যে আমেরিকা রয়েছে ২৩ নম্বরে। জার্মানি ১২, ফ্রান্স ১৮, ব্রিটেন ২১, জাপান ২৪ এবং ইজরায়েলের মতো দেশ ২৫ নম্বরে রয়েছে।

কোন মানদণ্ডের নিরিখে ওই তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে?

মূলত তিনটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়েই এই সর্বজনীন উন্নয়নের সূচক নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথম স্তম্ভের সূচক বৃদ্ধি এবং উন্নয়ন। সাধারণ মানুষ কতটা উন্নয়নের সুফল পেয়েছেন বা উন্নয়নের আওতায় সামগ্রিক ভাবে কত জনকে আনা সম্ভব হয়েছে, তার ভিত্তিতেই দ্বিতীয় স্তম্ভের সূচক নির্ধারিত হয়েছে। তিন নম্বর স্তম্ভটির সূচক আরও ব্যক্তিগত স্তরে নামিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে দেখা হয়েছে, এক জন নাগরিকের ছেলে বা মেয়ে কত বছর বেকার থাকছেন। কত দিন পর্যন্ত সেই ছেলে-মেয়ে বাবা-মায়ের উপর নির্ভরশীল। ওই ব্যক্তির সঞ্চয়ের পরিমাণ কী রকম। নাগরিক সুবিধা দিতে গিয়ে ব্যক্তিপিছু কী পরিমাণ ঋণ নিতে হচ্ছে সরকারকে। এই তিনটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়েই উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির ওই তালিকা করা হয়েছে।

World Economic Forum WEF narendra modi India China Pakistan
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy