ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের উপরে চড়া শুল্ক বসানোয় মোদী সরকার তড়িঘড়ি আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি রূপায়ণে সক্রিয় হয়েছিল। ট্রাম্পের সেই শুল্ক বসানোর সিদ্ধান্তকে আমেরিকারই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আদালত ‘বেআইনি’ বলে রায় দিল। হোয়াইট হাউস এর বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করবে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রকের ধারণা, রায় বহাল থাকলে ভারতের পক্ষে আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে দর কষাকষি সহজ হবে। কারণ ট্রাম্প আমেরিকার আর্থিক সঙ্কটের দোহাই দিয়ে ‘আন্তর্জাতিক জরুরি আর্থিক ক্ষমতা আইন’ কাজে লাগিয়ে শুল্ক বসিয়েছিলেন। আদালত বলেছে, ওই আইনে তাঁর হাতে দুনিয়ার প্রায় সব দেশের উপরে শুল্ক চাপানোর অধিকারই ছিল না। ফলে রায় বহাল থাকলে ভারতের চড়া শুল্কের ভয় থাকবে না। তবে অন্য আইনি ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাত,গাড়ির যন্ত্রাংশে ২৫% শুল্ক চাপান ট্রাম্প। তার থেকে রেহাই মিলছে না।
৫ ও ৬ জুন আমেরিকার প্রতিনিধি দল বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথা বলতে দিল্লি আসছে। গত সপ্তাহে ভারতের প্রতিনিধিরা সে দেশে বৈঠক করেছেন।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমেরিকা সফরে বাণিজ্য চুক্তির নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এখন জুলাইয়ের শুরুতে প্রথম দফার চুক্তি সারতে চায় ভারত। কারণ, ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের ৯০ দিন শেষ ৯ জুলাই। বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তাদের ধারণা, রায় বহাল থাকলে চড়া শুল্কের আতঙ্কই থাকবে না। দর কষাকষির সমীকরণ বদলাবে। আজ বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বলেন, ‘‘আমেরিকার সঙ্গে চুক্তির ক্ষেত্রে ঠিক পথে রয়েছি।’’
ট্রাম্প বলেছিলেন, ভারতের মতো দেশ আমেরিকার পণ্যে চড়া শুল্ক বসায়। তাই তিনিও পাল্টা চড়া শুল্ক বসাচ্ছেন। এর বিরুদ্ধেই আমেরিকার কিছু ছোট সংস্থা আদালতে যায়। যুক্তি ছিল, ট্রাম্পের সিদ্ধান্তে ব্যবসার ক্ষতি হবে। এই মামলায় বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লাটনিক ও বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো হলফনামায় বলেন, ট্রাম্প আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ানোর লোভ দেখিয়েই দুই পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করিয়েছেন। ফের দু’দেশের সামরিক সংঘাত শুরু হতে পারে শুল্ক প্রত্যাহার করলে। এ নিয়ে কংগ্রেস মোদী সরকারকে ফের প্রশ্ন করেছিল। আজ বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘‘রায় সবাই দেখছে। আগেই বলেছি, ভারত-আমেরিকার রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে সামরিক হাল নিয়ে কথা হলেও, বাণিজ্য বা শুল্কের প্রসঙ্গ আসেনি।’’
কেন্দ্রীয় সূত্রের বক্তব্য, ভারতীয় পণ্যে ট্রাম্পের ২৬% শুল্কের চাপে ভারত তা কমায় হুইস্কি থেকে দামিবাইকে। আরও কিছু পণ্যে কমাবে বলে। সেই ভয় না থাকলে ভারতের পক্ষে দরকষাকষি সহজ হবে। ট্রাম্প চান,ভারতের বাজারের তথ্য ইচ্ছেমতো ব্যবহারের ক্ষমতা পাক তাঁর দেশেরপ্রযুক্তি সংস্থা। আরও খোলা হোক কৃষি পণ্যের বাজার। তবে নয়াদিল্লির দাবি, ভারতের হস্তশিল্প ও শ্রমনির্ভর ক্ষেত্রগুলির স্বার্থ মাথায় রেখেই চুক্তি হবে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র কুশ দেশাইয়ের মন্তব্য, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সব প্রশাসনিক ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে আর্থিক সঙ্কট সামলাবেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)