সমস্যায় পড়েছে দেশ। সরকার, শিল্প, শেয়ার বাজার, সাধারণ মানুষ— সমস্যা সবার। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষমেষ কী হারে শুল্ক বসান, তা নিয়ে অনেকেই সন্দিহান ছিলেন। আবার অনেকের আশা ছিল, যতটা ভাবা হচ্ছে ততটা খারাপ নাও হতে পারে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত যা হয়েছে, সেটা মোটেও ভাল নয়। পাশাপাশি দেশের মানুষ চিন্তিত বিভিন্ন শিল্পে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রয়োগের কারণে বহু কর্মীর কাজ হারানোর আশঙ্কা নিয়েও। টিসিএস ১২ হাজার কর্মীকে বসিয়ে দিচ্ছে, এই খবর আশঙ্কার আগুনে ঘি ঢালে।
গত এপ্রিলে ট্রাম্প ভারতীয় পণ্যে ২৬% শুল্ক বসানোর হুমকি দিলেও দুশ্চিন্তা কম ছিল। কারণ, তার থেকে অনেক বেশি চাপিয়েছিলেন চিন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে। বরং ভাবা হচ্ছিল, এই সব দেশ আমেরিকায় বাজার হারালে ভারত সুবিধা পাবে। এ বার ভারতের হার কমে ২৫% হয়েছে। তবে বাণিজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলির শুল্ক তার থেকেও কমেছে। এতেই বাজার হারানোর আশঙ্কা বেড়েছে। তার উপর রাশিয়ার তেল-অস্ত্র কেনার ‘অপরাধে’ জরিমানাও চাপছে।
নতুন শুল্ক চালু হবে ৭ অগস্ট। আশঙ্কা, আমেরিকায় ভারতের ৫০% রফতানিতে তা আঘাত হানবে। গত অর্থবর্ষে রফতানির অঙ্ক ছিল ৮৫০০ কোটি ডলার। এ বার কমতে পারে বস্ত্র, জুতো-সহ চামড়াজাত পণ্য, রত্ন-অলঙ্কার ইত্যাদির। সেটা হলে, দেশেও উৎপাদন কমবে। কমবে কাজ। জিডিপি ৩০ বেসিস পয়েন্ট কমতে পারে। প্রশ্ন হল, অনেক দেশে এপ্রিলে ঘোষিত শুল্ক কমলেও ভারত কেন ব্যর্থ হল? কারণ মূলত দু’টি— এক, ভারত কৃষি এবং দুধ-দুগ্ধজাত পণ্যের বাজার আমেরিকার জন্যে খুলতে রাজি হয়নি। দুই, রাজি নয় রাশিয়া থেকে আমদানি বন্ধ করতেও।
আমেরিকা এরই মধ্যে ঝুঁকেছে পাকিস্তানের দিকে, যা ভারতের অস্বস্তি বাড়াচ্ছে। ভারত রাশিয়ার আমদানি থেকে না সরলে বড় দেশগুলির মধ্যে রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যেতে পারে। নয়াদিল্লির অবশ্য দাবি, আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। আগামী মাসে অন্তর্বর্তী চুক্তি হতেও পারে। তবে প্রধানমন্ত্রীর বার্তা, পণ্য বিক্রির জন্য ভারত নিজের ১৪৫ কোটি মানুষের উপরেই নির্ভর করুক। এ ছাড়া, সহজ শর্তে বাণিজ্য বাড়াতে ব্রিটেনের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। কথা চলছে ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও।
এ দিকে, টিসিএস তাদের গোটা বিশ্বে কর্মীদের ২ শতাংশকে বসিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংখ্যার হিসাবে যা ১২ হাজারের কিছু বেশি। এআই-এর কারণে এই সিদ্ধান্ত কি না স্পষ্ট বলা না হলেও, প্রকারন্তরে সেটাই। শুধু ভারতে নয়, কর্মী ছাঁটাই শুরু হয়েছে বিশ্ব জুড়ে। এই ব্যাপারে এগিয়ে থাকা সংস্থাগুলির অন্যতম ইন্টেল, মাইক্রোসফট, প্যানাসোনিক। ভারতেও কৃত্রিম মেধার বহুল ব্যবহার শুরু হয়েছে, যা দ্রুত বাড়ছে। অর্থাৎ নতুন কাজ সৃষ্টির গতি যখন কমছে, তখন আমেরিকার শুল্ক এবং কৃত্রিম মেধার কারণে বহু মানুষের কর্মচ্যুতি বড় সমস্যা ডেকে আনতে চলেছে সমাজ এবং অর্থনীতির জন্যে। এই সব কিছুর ধাক্কা লাগবে শেয়ার বাজারেও। ভারত সরকার কী ভাবে সঙ্কট সামলায়, সেটাই এখন দেখার।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)