Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নরেন্দ্র মোদীর অচ্ছে দিনের স্বপ্ন ভাঙতে পারে খরা, উদ্বেগে শিল্প

ভোটে জেতার আগে থেকেই নরেন্দ্র মোদীর অচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখানো। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সুদিন ফেরানো নিয়ে তাঁর জোরালো প্রতিশ্রুতি। আর, এর মধ্যেই ছ’বছর বাদে ফের ভয়াল খরার মুখে দাঁড়িয়ে দেশ। এ অবস্থায় বিরূপ প্রকৃতিই সদ্য এক বছর পার করা বিজেপি সরকারের ইচ্ছাপূরণে বাদ সাধবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেই উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের শিল্পমহল।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০২:৪৮
Share: Save:

ভোটে জেতার আগে থেকেই নরেন্দ্র মোদীর অচ্ছে দিনের স্বপ্ন দেখানো। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সুদিন ফেরানো নিয়ে তাঁর জোরালো প্রতিশ্রুতি। আর, এর মধ্যেই ছ’বছর বাদে ফের ভয়াল খরার মুখে দাঁড়িয়ে দেশ। এ অবস্থায় বিরূপ প্রকৃতিই সদ্য এক বছর পার করা বিজেপি সরকারের ইচ্ছাপূরণে বাদ সাধবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেই উদ্বেগ জানিয়েছে দেশের শিল্পমহল।

কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী ঘাটতি বর্ষার জেরে দেশে খরার সৃষ্টি হলে, তারাও তার প্রভাব এড়াতে পারবে না বলেই আশঙ্কায় শিল্পমহলের অনেকে। তাদের বক্তব্য, খরার জন্য কৃষি উৎপাদন কমলে এক দিকে সরাসরি কৃষির সঙ্গে জড়িত যন্ত্র ব্যবসার উপর প্রভাব পড়বে। অন্য দিকে, গ্রামীণ অর্থনীতি ধাক্কা খেলে সার্বিক ভাবে কমবে শিল্পোৎপাদনের চাহিদাও।

সম্ভাব্য খরা পরিস্থিতির মোকাবিলায় অবশ্য সেচের আওতায় আরও বেশি কৃষি এলাকাকে নিয়ে আসার জন্য সোমবারই আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন জলের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে, যাতে ঘাটতি বর্ষা হলে তার প্রভাব চাষের ওপর না-পড়ে। প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে অফিসারদের দ্রুত এ ব্যাপারে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মোদী। তাঁর আরও হুঁশিয়ারি, মাটির নীচে জলস্তর নেমে গেলে কিছু রাজ্যকে জরুরি ভিত্তিতে চাষের ধরন পাল্টাতে হবে। সে ক্ষেত্রে রুটিন মাফিক চাষ থেকে সরে এসে ভিন্ন ধরনের শস্য চাষ করতে হতে পারে। প্রসঙ্গত, আবহাওয়া দফতর পূর্বাভাস দিয়েছে এ বছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ গড়ের তুলনায় ৮৮% হবে। যার ফলে কৃষি উৎপাদন মার খাবে বলেই আশঙ্কা।

কৃষি উৎপাদন কমলে সার্বিক ভাবে দেশের আর্থিক অবস্থায় এর প্রভাব পড়া নিয়ে সহমত সিআইআই-এর প্রেসিডেন্ট সুমিত মজুমদার ও ফিকি-র পূর্বাঞ্চলের চেয়ারম্যান গৌরব স্বরূপও। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় বিপুল জনসংখ্যা এখনও যেহেতু কৃষির উপর নির্ভরশীল, তাই সেখানে প্রভাব বেশি পড়া নিয়ে আশঙ্কায় শিল্প-কর্তারা। আর, সে ক্ষেত্রে শিল্পোৎপাদনের চাহিদার উপর খরার প্রভাব এড়ানো যাবে না।

গৌরব স্বরূপ বলছেন, বৃষ্টি কম হলে মাটি থেকে জল তোলার প্রবণতা বাড়বে। ফলে কৃষি ক্ষেত্রে বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদাও। সে ক্ষেত্রে শিল্পের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতির সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। আর তা হলে, সে দিক থেকেও শিল্পোৎপাদন ধাক্কা খাবে।

বর্ষায় ঘাটতির জন্য কৃষি ধাক্কা খেলেও সুমিতবাবু অবশ্য মনে করেন, গোটা কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থাটাই ঢেলে সাজা প্রয়োজন। তাঁর বক্তব্য, এখনও ভারতে কৃষি ব্যবস্থা মান্ধাতার আমলে পড়ে। সেচ বা হিমঘর তৈরির মতো আধুনিক ব্যবস্থার অভাবের জন্যই এই ক্ষেত্র বর্ষার উপর অত্যধিক নির্ভরশীল। প্রসঙ্গত, এই কারণেই সেচ ব্যবস্থার দ্রুত হাল ফিরিয়ে ঘাটতি বর্ষার জন্য আগাম প্রস্তুতি নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এখনও দেশে অর্ধেকেরও বেশি কৃষি জমিতে সেচের ব্যবস্থা নেই বলেই চাষিদের জুন থেকে সেপ্টেম্বর অবধি চলা বর্ষার দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়।

এ ক্ষেত্রে সুমিতবাবু ইজরায়েলের উদাহরণ দিয়েছেন, যারা আধুনিক ব্যবস্থা চালু করে জলের সমস্যা মিটিয়েছে এবং কৃষি উৎপাদন বাড়িয়েছে। কৃষির আধুনিকীকরণের জন্য কেন্দ্র যে-পদক্ষেপ করছে, তাকে স্বাগত জানান তিনি। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে কেন্দ্রের আগাম প্রস্তুতির ভাবনাকে সমর্থন জানিয়েছেন গৌরব স্বরূপও। তবে সুমিতবাবু একই সঙ্গে আশাবাদী, পরিকাঠামো ক্ষেত্রে লগ্নি বাড়লে কৃষির নেতিবাচক প্রভাবের ধাক্কা শিল্প এড়াতে পারবে।

এ দিকে, গত তিনটি ত্রৈমাসিকেই ট্রাক্টর বিক্রি কমেছে, দাবি অন্যতম ট্রাক্টর নির্মাণ সংস্থা এসকর্টের চিফ সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং অফিসার শেনু অগ্রবালের। তাঁর বক্তব্য, গত বছরও বর্ষা ভাল হয়নি। গত ফেব্রুয়ারি ও মার্চে আবার অতিরিক্ত বৃষ্টিতে খারাপ আবহাওয়ার জন্য চাষের ক্ষতি হয়। তাই ট্রাক্টর বিক্রি গত বছর অন্তত ১৫% কমেছে বলে দাবি করে সোমবার তিনি বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর যে-সতর্কবাণী শুনিয়েছে, তা যদি সত্যি হয় তা হলে আগামী দিনে কৃষি যন্ত্র ব্যবসার জন্য আরও কঠিন সময় আসছে।’’

অচ্ছে দিনের বদলে কঠিন সময় আসছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মূল্যায়ন সংস্থা মুডিজ-ও। তাদের সমীক্ষা জানিয়েছে, খরা হলে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়বে, কেন্দ্রের রাজকোষ ঘাটতিও ঊর্ধ্বমুখী হবে। ফলে কমতে পারে ভারতের আন্তর্জাতিক ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা। এখনও গড়ে একটি ভারতীয় পরিবারের অর্ধেকের বেশি আয় খরচ হয় খাবারের সংস্থান করতে। খাদ্যের চড়া দাম তাই শিল্প পণ্যের চাহিদায় রাশ টেনে বৃদ্ধিকে টেনে নামাতে পারে বলে সাবধান করেছে মুডিজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE