Advertisement
E-Paper

নতুন দৌড়ের প্রস্তুতি

বাবার চিকিৎসায় শেষ সমস্ত জমানো টাকা। ভেঙে পড়ার কিছু নেই। লক্ষ্য স্থির করে বরং ঘুরে দাঁড়ানো শুরু হোক আজই। পরামর্শ দিলেন শৈবাল বিশ্বাসবিপদ বলে-কয়ে আসে না। বিশেষ করে অসুখ-বিসুখের ক্ষেত্রে তা আরও সত্যি। শঙ্করের বাবা ক্যানসারে মারা গিয়েছেন। তাঁর চিকিৎসার পিছনে খরচ হয়ে গিয়েছে জমানো অর্থের প্রায় পুরোটাই।

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৮ ০১:৫৬

পরিচিতি: শঙ্কর (৪২)
স্ত্রী (৩৬)

কী করেন: কাজ করেন বেসরকারি সংস্থায়। থাকেন কলকাতায় নিজেদের বাড়িতে।

লক্ষ্য: সন্তান দত্তক নেওয়ার জন্য আগামী এক বছরে ১ লক্ষ টাকা সঞ্চয়। প্রতি দু’বছরে বেড়াতে যাওয়া। বাড়ি সারানোর অর্থ জোগাড়। সন্তানের পড়াশোনা এবং বিয়ের তহবিল গড়া। সচ্ছল অবসর জীবন

বিপদ বলে-কয়ে আসে না। বিশেষ করে অসুখ-বিসুখের ক্ষেত্রে তা আরও সত্যি। শঙ্করের বাবা ক্যানসারে মারা গিয়েছেন। তাঁর চিকিৎসার পিছনে খরচ হয়ে গিয়েছে জমানো অর্থের প্রায় পুরোটাই। হাতে যতটুকু পড়ে রয়েছে, সেটাই শেষ সম্বল। তার উপরে সংসার খরচও তাঁর যথেষ্ট বেশি। ফলে মার খাচ্ছে লগ্নি। সব মিলিয়ে বেশ অসুবিধায় পড়েছেন শঙ্কর ও তাঁর স্ত্রী।

ভেবে দেখবেন, এই ধরনের অবস্থা আমাদের অনেকেরই হয়। কাছের মানুষ অসুস্থ হলে, সব পুঁজি খরচ করেও তাঁকে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করে যাই আমরা। এতে নিজেদের আর্থিক পরিকল্পনা ধাক্কা খায় ঠিকই। কিন্তু এটা না করে তো উপায় নেই। কিন্তু আচমকা আসা এ ধরনের বিপদের কথা মাথায় রেখে যদি আগে থেকে তৈরি হওয়া যায়, তা হলে মনে একটু সাহস আসে। শঙ্করের সেই সুযোগ নেই। তাঁর ক্ষেত্রে যা হওয়ার, তা হয়েই গিয়েছে। ফলে এখন তাঁকে ভাবতে হবে আগামী দিনের পরিকল্পনা কী ভাবে তৈরি করবেন, সেটা নিয়ে।

ভাল উদ্যোগ

শঙ্কর নিজেই বুঝতে পারছেন, আর্থিক পরিকল্পনার জন্য কিছু পদক্ষেপ তাঁকে করতেই হবে। সে জন্যই স্বাস্থ্য বিমা কেনা, জানুয়ারি থেকে পিপিএফ চালু, সেভিংসে কিছু টাকা রাখার পথে হেঁটেছেন তিনি। কিন্তু এখনও অনেকটা পথ যাওয়া বাকি। দেখা যাক কী ভাবে সেটা করতে পারেন তিনি। সব কিছু হয়তো এখনই সম্ভব নয়। তবে ভেঙে পড়ারও কিছু নেই। অল্প অল্প করেই লক্ষ্যের দিকে এগোতে হবে তাঁকে। দেখতে হবে কতটা কাছাকাছি পৌঁছনো যায়।

স্বাস্থ্য বিমা যথেষ্ট নয়

বাবার অসুখের পিছনে যত টাকা খরচ হয়েছে, তা দেখেই শঙ্কর ও তাঁর স্ত্রী নিজেদের জন্য ৫ লক্ষ টাকা করে স্বাস্থ্য বিমা করেছেন। কিন্তু তাঁরা যে অবস্থার মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন, তাতে বুঝতেই পারছেন এই অঙ্ক যথেষ্ট নয়। যে ভাবে চিকিৎসার খরচ বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে তো আরও থাকবে না। ফলে হয় তাঁদের আলাদা তহবিল জমাতে হবে। আর না হলে স্বাস্থ্য বিমার অঙ্ক বাড়াতে হবে। এখনই সম্ভব না হলেও, বেতন বাড়লে সেই পথে সব চেয়ে আগে হাঁটতে হবে।

শঙ্করের হাতে মাসে ৫,০০০ টাকা অতিরিক্ত থাকে। সেই টাকার মধ্যে অন্তত ২,০০০ টাকা লিকুইড ফান্ডে রাখতে পারেন। বিমার প্রিমিয়াম দেওয়ার আগে সেই টাকা তুলে নিতে হবে। এ ভাবে অন্তত এটা নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে যে, প্রতি বছর স্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম বাদ পড়বে না।

খরচ কমান

শঙ্কর ও তাঁর স্ত্রী, দু’জনের পক্ষে ২৫ হাজার টাকা সংসার খরচ তুলনায় বেশি বলেই আমার মনে হয়। তাঁদের গৃহ বা অন্যান্য কোনও ঋণ নেই। এর বাইরে এখনও পর্যন্ত কোনও দায় নেই। তাই প্রথমেই বলব কিছুটা হলেও খরচ কমান। হয়তো সব ক্ষেত্রে সম্ভব না-ও হতে পারে। কিন্তু তা-ও যতটা পারা যায়, তা কমানোর চেষ্টা করুন। কারণ সেই টাকাই রাখতে হবে বিভিন্ন তহবিলে।

বাড়ি সারানো ও দত্তক নেওয়া

এই দু’টিই তাঁদের এই মুহূর্তে অগ্রাধিকারের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু দু’টির জন্যই এত কম সময়ের মধ্যে ১ লক্ষ করে টাকা জমানো সম্ভব নয়। তাই এ জন্য তাঁকে স্থায়ী আমানত ভাঙতে হবে।

ব্যক্তিগত ঋণের কথা ভাবতে পারেন। কিন্তু তার সুদের হার খুব বেশি এবং প্রতি মাসে কিস্তি দেওয়া এখন সম্ভব নয়। তাই সে পথে না যাওয়াই ভাল।

বদলান জীবন বিমা

শঙ্করের জীবন বিমা মাত্র ১.৫ লক্ষ টাকার। কিন্তু এ জন্য বছরে ১৪ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দিতে হয়। আমি বলব অবিলম্বে তা পেড আপ করুন। বদলে নিন কমপক্ষে ২৫ লক্ষের টার্ম পলিসি। অনলাইনে ৩৩ বছরের জন্য (৭৫ বছর বয়স পর্যন্ত) টার্ম পলিসি করতে তাঁর বার্ষিক প্রিমিয়াম দিতে হবে প্রায় ১১,৬০০ টাকা (সিগারেট না খেলে)।

এর পরে যে টাকা পড়ে থাকবে, তা রাখতে হবে সেভিংসেই। আপৎকালীন তহবিল গড়ে তুলতে।

সন্তানের পড়াশোনা ও অবসর

এই দু’টিই দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য। ফলে এ জন্য নির্ভর করতে হবে মিউচুয়াল ফান্ড বা সরাসরি শেয়ারে লগ্নিতে। তবে শঙ্কর এই জগতে এখনও পা রাখেননি। ফলে তাঁকে এখনই সরাসরি শেয়ারে টাকা ঢালার পরামর্শ দেব না। বরং ইকুইটি ফান্ডে এসআইপি-র কথা ভাবুন। সন্তানের পড়াশোনার জন্য মাসে ২,০০০ টাকা করে এসআইপি করুন। আর নিজের অবসরের জন্য ১,৫০০ টাকা করে। তবে প্রত্যেক বার বেতন বাড়ার পরে সেই অঙ্ক বাড়িয়ে যেতে হবে। ফান্ড বাছাইয়ের জন্য নেট ঘেঁটে দেখুন। সেখানে অনেক তথ্য পাবেন। আর তাতেও না পারলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

কয়েকটা কথা মাথার রাখবেন—

• লার্জ ক্যাপ, মিড ক্যাপ এবং স্মল ক্যাপ ফান্ডের মধ্যে যেন লগ্নি ছড়ানো থাকে।

• কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ বছর লগ্নি চালিয়ে যেতে হবে।

• কয়েক মাস বা এক-দু’বছর পর পর লগ্নি পরীক্ষা করতে হবে। দেখতে হবে, তা কী অবস্থায় রয়েছে। প্রয়োজনে পাল্টাতেও হবে।

• যে লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখে এসআইপি করছেন, তার জন্যই এর টাকা রাখুন। এখান থেকে অন্য কোনও কাজে টাকা খরচ করবেন না।

• যে দিন বেতন পান, সে দিন অথবা তার কাছাকাছি দিনে এসআইপি-র দিন ধার্য করুন। এতে টাকা না থাকার জন্য এসআইপি জমা না হওয়ার সম্ভাবনা কমবে।

পিপিএফ বাড়ান

শঙ্করের অফিসে পিএফ নেই। ফলে তাঁকে পিপিএফের উপরে অনেকটাই নির্ভর করতে হবে। আমার মতে, আগামী দিনে বেতন বাড়লেই পিপিএফের অঙ্ক বাড়ান। যখনই সুযোগ পাবেন, তখনই। ব্যাঙ্ক প্রতি মাসে নিয়মিত টাকা কাটে অ্যাকাউন্ট থেকে। তাই সরাসরি সেখানে গিয়েই এ জন্য কথা বলতে হবে।

বাড়তি আয়

শঙ্করের নিজের বাড়ি রয়েছে। সেখানে তিনি ও তাঁর স্ত্রী থাকেন। দেখুন তার ফাঁকা পড়ে থাকা কোনও অংশ ভাড়া দিতে পারেন কি না। সেখান থেকে বাড়তি আয়ের রাস্তা বেরোবে। তবে এটা একেবারেই তাঁদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আমি শুধু বলব সব দিক বুঝেশুনে, তার পরেই সে পথে হাঁটতে হবে। ভাড়া দেওয়ার আগে চুক্তিও উকিলকে দেখিয়ে চূড়ান্ত করতে হবে। যাতে পরে কোনও ঝামেলা না হয়।

বেড়াতে যাওয়া

শুনতে একটু খারাপ লাগলেও সত্যি বলতে কী, এখন বেড়াতে যাওয়ার টাকা জোগাড় সম্ভব নয়। তাই এ কথা সম্ভবত না ভাবাই ভাল। আগে বরং আর্থিক পরিকল্পনা ঠিক করুন। শক্ত করুন পায়ের নীচের জমি। পরে বেড়ানোর কথা ভাবা যাবে।

শঙ্কর বিপদে পড়েছেন ঠিকই। কিন্তু মনে সাহস থাকলে, আর পরিকল্পনা করে এগোলে ঠিকই তা কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। সে জন্য আগাম শুভেচ্ছা রইল।

লেখক: বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

পরামর্শের জন্য লিখুন:

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ,

আনন্দবাজার পত্রিকা,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১।

ই-মেল: bishoy@abp.in

ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানাতে ভুলবেন না

Savings Future Investments
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy