Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

নতুন বছর ঘিরে আশায় লগ্নিকারীরা

স্বাগত সতেরো। ষোলোর বারো ভাগের দশ ভাগ খুব খারাপ কাটেনি। সব কিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল শেষ দু’ভাগে। সদ্য শেষ হয়েছে নোট নাকচের পরে মোদীর দেওয়া ৫০ দিন।

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৭
Share: Save:

স্বাগত সতেরো। ষোলোর বারো ভাগের দশ ভাগ খুব খারাপ কাটেনি। সব কিছু যেন এলোমেলো হয়ে গেল শেষ দু’ভাগে। সদ্য শেষ হয়েছে নোট নাকচের পরে মোদীর দেওয়া ৫০ দিন। এখন গুছিয়ে নেওয়ার পালা। এ বার বোঝা যাবে, কালো ধন নিধনের চেষ্টায় সরকার যে-পথে হেঁটেছে, তা কতটা ফলদায়ী।

নোট বাতিলের আঘাত পৌঁছেছে প্রায় সর্বত্র। এর প্রতিফলন পড়েছে শেয়ার বাজারেও। তবে আকাশ ভেঙে পড়েনি। ৮ নভেম্বর সেনসেক্সের অবস্থান ছিল ২৭,৫৯১ অঙ্কে। ৫০ দিন ধরে উত্থান-পতনের পরে বছরের শেষ লেনদেনের দিন ৩০ ডিসেম্বর মুম্বই সূচক থিতু হয়েছে ২৬,৬২৬ পয়েন্টে। এত বড় ঘটনায় মোট লোকসান মাত্র ৯৬৫ পয়েন্ট। এমন সংশোধন তো মাঝে-মধ্যেই হয়ে থাকে। বাজারে যে বিরাট ধস নামেনি, তার একটিই কারণ। সেটি হল, ভারতীয় অর্থনীতির অন্তর্নিহিত শক্তি। নোট বাতিলের প্রতিক্রিয়া শেষ হলেই বাজার ছন্দে ফিরবে এই বিশ্বাসে দেশি-বিদেশি অনেক লগ্নিকারীই বাজার ছেড়ে যাননি। নতুন বছরে এটিই বড় আশা লগ্নিকারীদের। গত বছরের মতো এ বারও যদি বর্ষার আকাশ সদয় হয়, তবে মাস ছয়েকের মধ্যে যে আবার অর্থনীতি ঊর্ধ্বগতি পাবে, তাতে অনেকেরই সন্দেহ নেই। তার আগে নানা ঘাত-প্রতিঘাতে বাজার পড়তে পারে। কিন্তু বড় মেয়াদে যে বাজার উঠবে, এই বিশ্বাস বহু মানুষের আছে। সেই ভরসায় বেশ কয়েকটি সংস্থা নতুন ইস্যু আনার পথে এগোচ্ছে।

সাধারণ মানুষের অনেক আশা এ বারের বাজেট থেকেও। বড় নোট বাতিলে সাধারণ মানুষের আর্থিক অবস্থায় যে-ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে, মোদী সরকার তাতে মলম লাগানোর চেষ্টা করবে বাজেটের মাধ্যমে। মানুষের করের বোঝা কিছুটা লাঘব হলে বাড়বে লগ্নিযোগ্য তহবিল। এতে উপকৃত হবে শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্পগুলি। ২০১৬ সালে ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের জমায় সুদ অনেকটাই কমেছে। আরও কমতে পারে নতুন বছরেও। বেশি আয়ের আশায় অনেক মানুষই পা বাড়াবেন শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের দুনিয়ায়। চাহিদা বাড়বে বন্ড, ডিবেঞ্চারেরও। অর্থাৎ সুদ-নির্ভর মানুষের জন্য নতুন বছরে তেমন আশার জায়গা না-থাকলেও শেয়ার ও বন্ডের বাজার চাঙ্গা হওয়ার যথেষ্টই কারণ থাকবে।

নতুন বছরে বাজারের নজর থাকবে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর। একবার দেখে নেওয়া যাক।

কোম্পানি ফলাফল: বাজার দেখতে চায়, নোট বাতিলের কতটা প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন সংস্থার ব্যবসায়। জানুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হবে তৃতীয় ত্রৈমাসিক ফল প্রকাশের পালা। এপ্রিল-মে মাসে হাতে আসবে বার্ষিক ফলাফল। নজর থাকবে সেখানেও।

কেন্দ্রীয় বাজেট: এক মাস এগিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় বাজেট। পেশ হচ্ছে নতুন বছরের গন্ধ কাটার আগেই। আশা করা যায়, তা সাধারণ মানুষকে খুশি করবে। তবে লগ্নিকারীদের কপালে কী আছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। শেয়ার লেনদেন বাবদ লাভের উপরে কর বসানোর ইঙ্গিত এরই মধ্যে নরেন্দ্র মোদী দিয়ে রেখেছেন।

পণ্যমূল্য এবং সুদের হার: ফেব্রুয়ারি মাসে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঋণনীতি পর্যালোচনা করবে। জানুয়ারিতে পণ্যমূল্য আরও এক ধাপ কমলে সুদ কমার সম্ভাবনা থাকবে। এটি বাজারের কাছে ভাল খবর হলেও কাম্য নয় সুদ-নির্ভর মানুষের কাছে।

উত্তরপ্রদেশ এবং পঞ্জাবে নির্বাচন: এই দুই রাজ্যের নির্বাচনের বড় প্রভাব থাকবে বাজেটের উপর।

বর্ষার পূর্বাভাস: এপ্রিল মাস নাগাদ পাওয়া যেতে পারে এ বারের বর্ষা সম্পর্কে আগাম অনুমান। অর্থনীতি এবং বাজারের ভাল থাকার জন্য ভাল বর্ষার অত্যন্ত প্রয়োজন।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসন এবং ফেড রেট: মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাজকর্ম এবং সে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদের গতিবিধির উপর তীক্ষ্ণ নজর থাকবে বাজারের। মার্কিন মুলুকের কোনও কোনও সিদ্ধান্তের বড় প্রভাব থাকতে পারে ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতিগুলির উপর।

পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি): বাজেট অধিবেশনে যদি জিএসটি বিল পাশ হয়, তবে ১ জুলাই থেকে চালু হতে পারে পরোক্ষ কর সংক্রান্ত এই নতুন আইন। এই আইনের বেশ বড় মাপের প্রভাব থাকবে শিল্প, ব্যবসা এবং শেয়ার বাজারের উপর।

অন্যান্য: নতুন বছরে আর যে-সব বিষয়ের উপর নজর থাকবে সেগুলি হল: ডলারের ওঠা-পড়া, অশোধিত তেলের দাম, বিদেশি লগ্নির আসা-যাওয়া ইত্যাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

অর্থাৎ নতুন বছরে সমস্যা যেমন আছে, তেমনই আছে আশাও। এই পরিস্থিতিতে ব্যালান্সড ফান্ডে লগ্নি করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে। গত ৫ বছরে গোটা পাঁচেক ব্যালান্সড ফান্ড গড়ে বছরে কম-বেশি ১৮% রিটার্নের ব্যবস্থা করেছে। যে-সব শিল্প নতুন বছরে ভাল করবে বলে আশা, সেই তালিকায় আছে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল সংক্রান্ত, রাস্তা তৈরি ও পরিকাঠামো, ব্যাঙ্কিং-বিমা শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি, ওষুধ ইত্যাদি।

বস্তুত, হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ভালই কাটবে এই আশা নিয়ে পা রাখা যাক ‘কুড়ি-সতেরোয়’!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Investors
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE