Advertisement
E-Paper

রাজ্য ‘হ্যাঁ’ বললেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে রাজি জিন্দলরা

শালবনিতে সংস্থার তৈরি বিদ্যুৎ কেনার প্রতিশ্রুতি রাজ্য দিলে, প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করতে এখনও রাজি জিন্দল গোষ্ঠী। তারা চায়, পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই প্রকল্পে প্রথমে অন্তত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালুর জন্য এই সহযোগিতাটুকু করুক রাজ্য। সেখানে তৈরি বিদ্যুৎ কেনার আশ্বাস দিয়ে নতুন করে সই করুক চুক্তিপত্রে (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট)। কিন্তু সেই প্রস্তাবে নারাজ বিদ্যুৎ দফতরের বক্তব্য, ওই বিদ্যুৎ বরং বাণিজ্যিক ভাবে অন্যত্র বিক্রি করুক জিন্দলরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৪ ০৩:১৭
পশ্চিম মেদিনীপুরে জিন্দলদের ইস্পাত কারখানা।—ফাইল চিত্র।

পশ্চিম মেদিনীপুরে জিন্দলদের ইস্পাত কারখানা।—ফাইল চিত্র।

শালবনিতে সংস্থার তৈরি বিদ্যুৎ কেনার প্রতিশ্রুতি রাজ্য দিলে, প্রকল্পের কাজ দ্রুত শুরু করতে এখনও রাজি জিন্দল গোষ্ঠী। তারা চায়, পশ্চিম মেদিনীপুরের ওই প্রকল্পে প্রথমে অন্তত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালুর জন্য এই সহযোগিতাটুকু করুক রাজ্য। সেখানে তৈরি বিদ্যুৎ কেনার আশ্বাস দিয়ে নতুন করে সই করুক চুক্তিপত্রে (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট)। কিন্তু সেই প্রস্তাবে নারাজ বিদ্যুৎ দফতরের বক্তব্য, ওই বিদ্যুৎ বরং বাণিজ্যিক ভাবে অন্যত্র বিক্রি করুক জিন্দলরা।

রাজ্য এ ভাবে বিদ্যুৎ বিক্রির কথা বললেও, তা জিন্দলদের কাছে আদৌ গ্রহণযোগ্য হবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শিল্পমহলের একাংশের মধ্যে। কারণ, এমনিতেই আকরিক লোহার জোগান এখনও পর্যন্ত নিশ্চিত না-হওয়ায় শালবনিতে ইস্পাত প্রকল্প গড়তে পারছে না জিন্দল গোষ্ঠী। কাজ শুরুতে দেরির জন্য মেদিনীপুরে গিয়ে তাদের দিকে তোপ দেগেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অথচ সেই রাজ্য সরকারের কথাতেই তারা এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ সেরে ফেলতে চাইলেও আর তাদের পাশে থাকছে না রাজ্য। প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না তাদের কাছ থেকে বিদ্যুৎ কিনে নেওয়ার। এই প্রসঙ্গে এক শিল্প কর্তার প্রশ্ন, “কোথায় বিক্রি হবে, তা না-জেনে জিন্দলরা ওই বিদ্যুৎ তৈরি করবে কী ভাবে?”

প্রথম পর্যায়ে ৩০ লক্ষ টনের ইস্পাত কারখানা এবং সেখানে ব্যবহারের জন্য ৩০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে বাম জমানায় শালবনিতে ২০ হাজার কোটি টাকা লগ্নির প্রস্তাব দিয়েছিল জিন্দল গোষ্ঠী। যা এখনও চালু না-হওয়ায় সম্প্রতি তোপ দেগেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। কিন্তু জিন্দল গোষ্ঠীর দাবি, প্রকল্প তৈরিতে তারা দায়বদ্ধ হলেও আকরিক লোহার জোগান এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে তাদের ঋণও দিচ্ছে না ব্যাঙ্কগুলি। উল্লেখ্য, ‘গ্রিনফিল্ড’ বা সম্পূর্ণ নতুন ইস্পাত প্রকল্পে সরকার বা সরকারি সংস্থার মাধ্যমে আকরিক লোহা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত না-হলে, ধার দেয় না কোনও ব্যাঙ্ক। ফলে আকরিক লোহা সরবরাহের জন্য ঝাড়খন্ডের সঙ্গে ওয়েস্ট বেঙ্গল মিনারেল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন এবং সংস্থা নিজে আলোচনা চালালেও, ওই সমস্যা না-মেটা পর্যন্ত প্রকল্প গড়তে ঋণ পাওয়াও বিশ বাঁও জলে।

এই পরিস্থিতিতে মুম্বইয়ের শিল্প সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী প্রস্তাব দেন যে, আপাতত না হয় বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার কাজেই হাত দিন জিন্দলরা। কিন্তু সমস্যা হল, ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার কথা ছিল সংস্থার ইস্পাত কারখানার নিজস্ব ব্যবহারের জন্যই। আগের চুক্তিও হয়েছিল সেই অনুযায়ী। ফলে এখন কারখানার আগে তা চালু হলে, সেই বিদ্যুৎ বাইরে বিক্রি করতে হবে সংস্থাটিকে। তার জন্য সংশোধন করতে হবে রাজ্যের সঙ্গে চুক্তিও। নতুন চুক্তিতে থাকতে হবে যে, ওই বিদ্যুৎ নিজস্ব ব্যবহারের পাশাপাশি বাইরেও বিক্রি করা যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাজ্য জিন্দলদের যে কয়লা ব্লক দিয়েছিল, তা-ও ওই দু’ধরনের ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ তৈরিতেই কাজে লাগাতে পারবে তারা।

শুক্রবার সিআইআইয়ের এক সভার ফাঁকে জেএসডব্লিউ বেঙ্গলের সিইও বিশ্বদীপ গুপ্ত বলেন, “চুক্তি সংশোধন হলেই আমরা কাজ শুরু করতে পারি।” তাঁর দাবি, সে ক্ষেত্রে শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, প্রকল্পের আনুষঙ্গিক কিছু কাজও এগিয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে লগ্নি হতে পারে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা। তিনি জানান, যে হেতু প্রকল্পের নোডাল-এজেন্সি রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম, তাই নিগমের মাধ্যমেই নতুন চুক্তির আর্জি জানিয়েছেন তাঁরা। বস্তুত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংস্থা চায়, এখন শালবনিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কেনার প্রতিশ্রুতি দিক রাজ্য।

কিন্তু ওই চুক্তি সংশোধনে আদৌ রাজি নয় বিদ্যুৎ দফতর। মাস কয়েক আগে আগের চুক্তি বাতিল হওয়ার কথা জানিয়ে বিদ্যুৎ সচিব গোপাল কৃষ্ণের দাবি, “বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ আর সেখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিক্রি দু’টি সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। তাই ওঁরা তো বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তেই পারেন। এবং অন্যত্র তা বিক্রিও করতে পারেন।” বিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে জিন্দলদের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি।

কিন্তু জিন্দলদের যুক্তি হল, বাণিজ্যিক ভাবে বিদ্যুৎ বেচতে নয়, ইস্পাত কারখানা গড়তেই শালবনি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল তারা। তাই এখন শুধু এখানকার বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য বাজারে ক্রেতা খুঁজে বেড়াতে নারাজ তারা। তা ছাড়া, রাজ্যই যেহেতু ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ধরন বদলের প্রস্তাব দিয়েছে, তাই সংস্থা চায় সেই বিদ্যুৎ কেনার বিষয়েও প্রতিশ্রুতি দিক রাজ্য। আর সেই কারণেই এই চুক্তি সংশোধনের প্রস্তাব। এই যুক্তিকে সমর্থন করছে শিল্পমহলও। তারা মনে করে, এ ক্ষেত্রে সংস্থার পক্ষে রাজ্যের প্রতিশ্রুতি চাওয়া স্বাভাবিক।

যদিও সরকারি সূত্রে খবর, তেমন প্রতিশ্রুতি না-দেওয়ার কারণ মূলত দু’টি। এক, রাজ্যে বিদ্যুৎ এখন উদ্বৃত্ত। ফলে জিন্দলদের কাছে আরও বিদ্যুৎ কেনার প্রতিশ্রুতি দিলে সমস্যা হতে পারে। আর দুই, জিন্দলদের প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার জোগান এখনও নিশ্চিত নয়। কিন্তু তা মানতে নারাজ জিন্দল গোষ্ঠী।

jindal powerhouse power purchase agreement west bengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy