নতুন বছরেও বজায় থাকবে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির গতি। সম্প্রতি এই আশার কথা শোনা গেল বিশ্বব্যাঙ্কের মূখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসুর মুখে। তাঁর আশা, ২০১৬ সালেও ভারতের আর্থিক বৃদ্ধি হবে ৭ থেকে ৭.৫ শতাংশের মধ্যে। তা হলে অর্থনীতির মাপকাঠিতে সারা বিশ্বের বড় দেশগুলির মধ্যে প্রথম স্থানে থাকবে ভারতই।
অক্টোবর পর্যন্ত চলতি ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার ৭.৫ শতাংশ হবে বলেই পূর্বাভাস করেছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে ৭.৮ শতাংশ এবং তার পরের বছর ৭.৯ শতাংশ বৃদ্ধি হবে বলেও জানিয়েছিল তারা। কৌশিকবাবু বলেন, আগামী ৭-৮ জানুয়ারি ফের বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনায় বসবেন তাঁরা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ভারতের পূর্বাভাস বদলানো হবে কি না, তা এখনই বলা সম্ভব নয় বলেই জানান দেশের প্রাক্তন মূখ্য আর্থিক উপদেষ্টা।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তর্বর্তী আর্থিক সমীক্ষা জানিয়েছে, ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার থাকবে ৭.৫ শতাংশের মধ্যে। যার অন্যতম কারণ বিশ্ব বাজারে মন্দার ফলে চাহিদা কমেছে। এর জেরে কমেছে রফতানি। পাশাপাশি, খরার ফলে মার খেয়েছে কৃষিতে উৎপাদনও। বেসরকারি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও সেরকম আশার আলো দেখা যায়নি। সে ক্ষেত্রে বর্তমান মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যম জানান, ‘‘আসলে ভারতের অর্থনীতি এখন মিশ্র সঙ্কেত দিচ্ছে। অর্থনীতির হাল শোধরাচ্ছে কিন্তু তার গতি কতখানি জোরালো, কতখানিই বা তার ব্যাপ্তি, তা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।’’
গত কয়েক মাসে রফতানি বাজারে ভাটার টানের কথা মেনেও কৌশিকবাবু বক্তব্য, আগামী দিনে এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে ভারতের। বিশেষত চিনের মতো দেশে, যেখানে ক্রমশ কর্মীদের মজুরি-সহ উৎপাদন খরচ বাড়ছে। ফলে ভারতকে পাখির চোখ করে এখানেই উৎপাদন বাড়ানোর পথে হাঁটছে বিভিন্ন সংস্থা। যে কারণে আগামী দিনে উৎপাদন ভিত্তিক রফতানি ক্ষেত্রে ভারতের প্রথম সারিতে চলে আসবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। পাশাপাশি, ২০১৪ সালের তুলনায় দেশে ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হয়েছে। তা বজায় থাকলে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে দেশে উৎপাদনের হাত ধরে রফতানি শিল্প ভাল ফল করবে বলেও তাঁর দাবি।
এ দিকে কৌশিকবাবু ভারতের অর্থনীতি নিয়ে আশার কথা শোনালেও, বিশ্ব অর্থনীতি নিয়ে এখনই অতটা প্রত্যাশা করতে নারাজ আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের (আইএমএফ) কর্ণধার ক্রিস্টিন ল্যাগার্দে। বরং তাঁর মতে, ২০১৬ সালে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা গড়াবে ঢিমে তালেই। বৃদ্ধির হার হবে হতাশাজনক। এমনকী মাঝারি মেয়াদেও তা পুরোদস্তুর ছন্দে ফিরবে কি না, সে বিষয়ে সন্দিহান তিনি। উল্লেখ্য, অক্টোবরে আইএমএফের পূর্বাভাস ছিল, ২০১৬ সালে বিশ্ব অর্থনীতিতে বৃদ্ধি হবে ৩.৬%।
ল্যাগার্দে মনে করছেন, নতুন বছরে বিশ্ব অর্থনীতির পুরোদস্তুর ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে মূলত দু’টি বিষয়— (১) মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বৃদ্ধি। (২) চিনা অর্থনীতির নড়বড়ে দশা। কৌশিকবাবুর মতে অবশ্য, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়ানোর খুব একটা প্রভাব পড়বে না ভারতের অর্থনীতিতে। সাময়িক ভাবে কিছু লগ্নি চলে গেলেও, তার প্রভাব হবে খুবই সামান্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy