E-Paper

শিল্পের পথে বড় বাধা জমি, রাজ্য নিয়ে উদ্বেগ বণিকসভার রিপোর্টে

রিপোর্টে দাবি, শিল্প গঠনের ক্ষেত্রে জমির চরিত্র বদল এবং সংস্থার সরাসরি জমি কেনার যে নিয়ম, তা এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা।

অঙ্কুর সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ১১ মে ২০২৫ ০৮:৫৫
পশ্চিমবঙ্গে বড় শিল্প গড়ার রাস্তায় জমিই সব থেকে বড় মাথাব্যথা।

পশ্চিমবঙ্গে বড় শিল্প গড়ার রাস্তায় জমিই সব থেকে বড় মাথাব্যথা। —প্রতীকী চিত্র।

সরকার দাবি করে, তাদের হাতে বিরাট ‘ল্যান্ডব্যাঙ্ক’ রয়েছে। ফলে শিল্পের কর্মকাণ্ড আটকাবে না। তবু পশ্চিমবঙ্গে বড় শিল্প গড়ার রাস্তায় যে জমিই সব থেকে বড় মাথাব্যথা, সে কথা বার বারই বলে সংশ্লিষ্ট মহল। এ বার সেই উদ্বেগই উঠে এল সর্বভারতীয় বণিকসভা অ‍্যাসোচ‍্যামের এক রিপোর্টে। সেখানে বলা হয়েছে, বাংলায় শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে জমি সংক্রান্ত একাধিক বিষয়ে সমস‍্যা রয়েছে। যার প্রভাব পড়ছে শিল্পায়নে। রিপোর্টে দাবি, শিল্প গঠনের ক্ষেত্রে জমির চরিত্র বদল এবং সংস্থার সরাসরি জমি কেনার যে নিয়ম, তা এ ক্ষেত্রে প্রধান বাধা। এই বিষয়ে নিয়ম পরিবর্তন-সহ সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ পদক্ষেপের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। তবে প্রকল্পের ছাড়পত্র প্রদান-সহ সামগ্রিক বিষয় দেখার জন‍্য রাজ‍্য স্তরে যে সিনার্জি কমিটি গড়া হয়েছে, তার প্রশংসা করা হয়েছে সেখানে।

দেশের বড় রাজ্যগুলিতে ব‍্যবসা করা কতটা সহজ, তা নিয়ে ‘ইজ় অব ডুয়িং বিজ়নেস ইন দ‍্য ইন্ডিয়ান স্টেটস’ শীর্ষক এক রিপোর্ট প্রকাশ করেছে অ্যাসোচ্যাম। সেখানেই পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, গুজরাত, উত্তরপ্রদেশের মতো ১৬টি বড় রাজ‍্য কতটা শিল্পবান্ধব, তা বিভিন্ন মাপকাঠিতে ধরা হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে রাজ্যের প্রসঙ্গে বণিকসভাটি জানিয়েছে, এখানে জমির চরিত্র পরিবর্তন করে সেটিকে শিল্পের উপযোগী করে তুলতে নজিরবিহীন দেরি হয়। যা শিল্প সংস্থাকে আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলে। ফলে এ ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ এবং সার্বিক নিয়ম বদল জরুরি। রাজ‍্যের জমিনীতি নিয়েও সমালোচনা করা হয়েছে রিপোর্টে। বলা হয়েছে, শিল্পকে সরাসরি জমির মালিকের সঙ্গে কথা বলতে হয় এবং তা কিনতে হবে। সরকার প্রত‍্যক্ষ ভাবে কোনও ভূমিকা পালন করে না। এতে একাধিক সম‍স‍্যা তৈরি হয়। অনেকেই লগ্নির জন্য এত ঝক্কি নিতে চায় না। তাই এই ক্ষেত্রেও শিল্পমহলের হয়ে রাজ‍্য সরকার জমির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে গোটা বিষয়টি চূড়ন্ত করুক। তার জন‍্য সংস্থার যা করার, তা করবে। কিন্তু সরাসরি জমি নিয়ে শিল্প সংস্থা নয়, কথা বলুক সরকার। এ রাজ‍্যে খনি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে যথাযথ ছাড়পত্র পেতেও অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় বলে অভিযোগ রিপোর্টে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রথম সারির শিল্পকর্তার বক্তব্য, ঠিক বিষয়টিই উঠে এসেছে। জমি সংক্রান্ত একাধিক সমস‍্যার কারণে বাংলায় বড় শিল্প আসছে না। জমিনীতি যে অত‍্যাধুনিক কিংবা শিল্পের চাহিদা মেটানোর মতো নয়, তা স্পষ্ট। বণিকসভা মার্চেন্টস চেম্বারের সভাপতি অমিত সারোগির মতে, রাজ্যে শিল্প সংক্রান্ত সব পুরনো নীতি বাতিল করে নতুন আনা হচ্ছে। আশা করা যায়, তাতে এই বিষয়গুলি থাকবে। ইতিমধ্যেই বণিকসভা শিল্প দফতরকে যে পরামর্শ দিয়েছে, সেখানে জমিনীতির ১৪ওয়াই ধারায় জমির ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত আইন পরিবর্তনের সুপারিশ রয়েছে। দেওয়া হয়েছে শিল্পবান্ধব জমিনীতি আনার পরামর্শও। শিল্পনীতি নিয়ে বণিকসভা ভারত চেম্বারের সুপারিশে বার্তা, ঊর্ধ্বসীমার পাশাপাশি শিল্পের জমি কেনার ব‍্যাপারে রাজ্য যথাযথ হস্তক্ষেপ করুক।

যদিও শিল্প দফতরের এক কর্তা জানান, সরকার আগের নীতি এবং শিল্পের উৎসাহ নীতি বদলে নতুন নিয়ম আনার পরিকল্পনা করেছে। সেখানে হয়তো জমি সংক্রান্ত সমস্যাগুলির অনেকটাই দেখা হবে। কারণ শিল্পের চাহিদা এটা। তবে জমি কেনার ক্ষেত্রে রাজ্য কতটা এগোবে, প্রশ্ন রয়েছে। দফতর সূত্রে খবর, এই দাবি সম্ভবত পূরণ হবে না। ছোট শিল্পের সংগঠন ফসমি-র সভাপতি বিশ্বনাথ ভট্টাচার্যও জমি, উৎসাহ ভাতা-সহ নানা বিষয়ে শিল্পের দাবি মানার আর্জি জানিয়েছেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

industry Land Problem

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy