ঋণে সুদের চাপ আরও কমল। কমল ঋণগ্রহীতার ধার শোধের মাসিক কিস্তি। খুচরো মূল্যবৃদ্ধি যেখানে নেমেছে (০.২৫%), তাতে বোঝাই যাচ্ছিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ আরও কমিয়ে চাহিদা-উৎপাদন বৃদ্ধির পথ চওড়া করবে। কারণ, বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তা যুঝতে দেশীয় অর্থনীতির পোক্ত হওয়া জরুরি। শুধু প্রশ্ন ছিল, রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই ধার দেয় ব্যাঙ্কগুলিকে) কত কমবে, ২৫ না ৫০ বেসিস পয়েন্ট?
আগে কমেছিল ১০০ বেসিস পয়েন্ট। এই দফায় কমল আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট। সব মিলিয়ে ১২৫ বেসিস পয়েন্ট কমে রেপো নামল ৫.২৫ শতাংশে। ফলে ইতিমধ্যেই বেশ খানিকটা সুদ কমেছে বাড়ি ও গাড়ি-সহ বিভিন্ন ঋণে। এ বার তা আরও কমবে। পাশাপাশি আয়কর এবং জিএসটি-ও কমেছে। আশা, এতে মধ্যবিত্তদের হাতে বাড়তি টাকা থাকায় বহু পণ্যের চাহিদা বাড়াবে। তাই শিল্প ও শেয়ার বাজার খুশি। সুদ কমার খবরে শুক্রবার সেনসেক্স ৪৪৭ পয়েন্ট উঠে হয় ৮৫,৭১২। সর্বকালীন নজিরের (৮৫,৮৩৬) থেকে ১২৪ পয়েন্ট দূরে।
রেপো কমায় বাড়ি-গাড়ির চাহিদা বাড়লে বিক্রি বাড়বে অনুসারী শিল্পের পণ্যগুলিরও। সুদ কমায় চাহিদা বাড়বে ঋণের। অনেকে ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাববেন। একাংশ গাড়ি কিনতে ছুটবেন। অনেকটা বাড়তে পারে দু’চাকার বিক্রি।
তবে উদ্বিগ্ন প্রবীণ নাগরিক-সহ অসংখ্য সুদ নির্ভর মানুষ। ঋণে সুদ কমলে তা কমবে আমানতেও। রেপো ১০০ বেসিস পয়েন্ট কমার পরে ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য জমা টাকায় এক দফা সুদ কমেছে। এ বার আরও কমতে পারে। সুদ কমতে পারে কেন্দ্রের ক্ষুদ্র সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতেও। যেখানে এত দিন হাত দেয়নি সরকার। আশঙ্কা, আগামী মাসে দিতে পারে। হাতে এখনও তিন সপ্তাহ সময় আছে। বেশি সুদ পাওয়ার সুযোগ নিতে এখনই সেই সব প্রকল্পে লগ্নি সেরে ফেলা যেতে পারে।
আমানতে সুদ কমতে থাকায় শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডে আরও লগ্নি বৃদ্ধির সম্ভাবনা। গত ক’বছর ধরে বহু মানুষ এই ঝুঁকি নিয়েছেন। এ সপ্তাহে জানা যাবে কোন ব্যাঙ্ক ঋণ ও জমায় কতটা সুদ কমাচ্ছে। লগ্নিকারীদের নজর থাকবে শেয়ার ও বন্ডেও।
বাজারের খুশি হওয়ার একমাত্র কারণ অবশ্য রেপো ছাঁটাই নয়। আর্থিক বৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধির পরিবর্তিত পূর্বাভাসও সূচককে ঠেলে তুলেছে। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক চলতি অর্থবর্ষে ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৬.৮% থেকে বাড়িয়ে করেছে ৭.৩%। খুচরো মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২.৬% থেকে কমিয়ে করেছে ২%। যে কারণে বাজার মনে করছে আরও এক দফা সুদের হার কমানো হতে পারে আগামী দিনে। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও দিন নতুন নজির গড়তে পারে শেয়ার সূচক। আর্থিক বৃদ্ধির ইঙ্গিতে বিদেশি লগ্নিকারীরা আকৃষ্ট হলে দৌড় লম্বা হতে পারে তার। বাজার এটাও বিশ্লেষণ করে দেখতে চায় রাশিয়ার সঙ্গে করা বিভিন্ন চুক্তিতে আর্থিক ভাবে দেশ কতটা লাভবান হবে। সেই ফলে সন্তুষ্ট হলে লগ্নিকারীর শেয়ার সম্পদ চড়তে পারে দ্রুত।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)