নির্মলা সীতারামন। ফাইল চিত্র।
অর্থনীতির আকাশে মন্দার মেঘ জমছে বলে বিরোধীরা আঙুল তুললেও তা বরাবর অস্বীকার করেছে মোদী সরকার। তবে রক্তচাপ যে বেড়েছে, সেটা স্পষ্ট অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণায়। যে তালিকায় রয়েছে এক শ্রেণির বিদেশি আর্থিক লগ্নিকারী সংস্থাকে (এফপিআই) ভারতে ফেরানোর চেষ্টা থেকে শুরু করে শিল্পকে নগদ জোগানো, কম খরচে ঋণ, সাধারণ মানুষের ধারের কিস্তি ছাঁটাই বা গাড়ির বিক্রি বৃদ্ধির মতো উদ্যোগ।
তবে অনেকেরই প্রশ্ন, চাহিদা ধাক্কা খাওয়ায় ও বহু মানুষ রুজি হারানোয় অর্থনীতিতে তৈরি হওয়া ক্ষত ইতিমধ্যেই যে রকম গভীর হয়েছে, তা কি সহজে ভরা যাবে? যে সমস্ত কাজ গিয়েছে, তা কি আবার ফিরবে? বরং তাঁদের যুক্তি, সব পদক্ষেপ কার্যকর হলে বিক্রি হয়তো কিছুটা বাড়বে, কিন্তু দীর্ঘ দিন ধরে তৈরি হওয়া এমন ক্ষত সারিয়ে অর্থনীতির চাঙ্গা হতে সময় লাগারই কথা। বিশেষত শিল্প সুবিধা পেলেও, চাহিদা না থাকায় আদতে লগ্নি শুরু করবে কি না তা নিয়েও যেখানে সংশয় বিস্তর।
জুলাইয়ের বাজেটে বাজারে যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছিল, এ বার তা কিছুটা উপশমে সচেষ্ট হয়েছেন নির্মলা। যেমন এফপিআইগুলির শেয়ার বাজারে লগ্নি থেকে আয়ের উপরে প্রস্তাবিত চড়া সারচার্জ তোলা। কেন্দ্র বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রিতে জোর দিলেও প্রথাগত জ্বালানির গাড়ি যে থাকছে, তা নিশ্চিত করা। বাজেটে তেমন উদ্যোগী না হলেও, এ বার বাজারে নগদ জোগানোর ব্যবস্থা। অর্থমন্ত্রীর দাবি, আরও কিছু ঘোষণা হবে এই সপ্তাহের মাঝামাঝি। বাজার এখন চাতক পাখির মতো তাকিয়ে সে দিকে। নজর থাকছে গাড়িতে জিএসটি কমছে কি না, তাতেও। কারণ শিল্পকে ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে বার বার কর কমানোর আর্জি জানাচ্ছে সংস্থাগুলি।
নির্মলার পদক্ষেপ
• এক শ্রেণির বিদেশি লগ্নিকারীর (এফপিআই) উপরে প্রস্তাবিত চড়া হারে সারচার্জ প্রত্যাহার।
• অবিলম্বে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে ৭০,০০০ কোটি টাকার মূলধন ঢালা।
• গৃহঋণ সংস্থাগুলিকে বাড়তি ২০,০০০ কোটি জোগানো।
• রিজার্ভ ব্যাঙ্ক রেপো রেট (যে সুদে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে ধার দেয় শীর্ষ ব্যাঙ্ক) কমালে, ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণে সুদ কমানোর সুবিধা গ্রাহককে দেওয়ার আর্জি।
• জিএসটিতে আগে মেটানো কর ফেরত সহজ করা।
• ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলিকে ৩০ দিনের মধ্যে জিএসটি রিফান্ডের প্রতিশ্রুতি।
• আগামী দিনে ক্ষুদ্র, ছোট এবং মাঝারি সংস্থাকে জিএসটি রিফান্ডের টাকা আবেদনের ৬০ দিনের মধ্যেই দেওয়ার সিদ্ধান্ত।
• পরিকাঠামো শিল্পে ৫ বছরে ১০০ লক্ষ কোটি লগ্নির জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা।
• এত দিন বছরে ১৫% করে দাম কমত (ডেপ্রিসিয়েশন) পুরনো গাড়ির। এখন থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত কেনা গাড়িতে কমবে ৩০%।
• গাড়িতে এককালীন রেজিস্ট্রেশন ফি বৃদ্ধির দিন পিছিয়ে ২০২০-র জুন।
• সরকারি দফতরের নতুন গাড়ি কেনায় নিষেধ তোলা।
• গাড়ি বাতিলের নীতি তৈরিতে জোর।
• এক সঙ্গেই চলবে প্রথাগত জ্বালানি ও বৈদ্যুতিক গাড়ি।
• ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত বিএস-৪ গাড়ি কেনার সুযোগ। রেজিস্ট্রেশন যত দিন, তত দিন ব্যবহার।
আশা
• ভারতে ফের লগ্নি করবে বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি।
• বাড়বে নগদের জোগান।
• ঋণ পাবে শিল্প, এনবিএফসি।
• সুদ কমলে শিল্পের মূলধন জোগাড়ের খরচ কমবে।
• কমবে গাড়ি, বাড়ির ঋণের মাসিক কিস্তি।
• বাড়বে চাহিদা।
• ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি শিল্পের হাতে আসবে ব্যবসা চালানোর প্রয়োজনীয় নগদ।
• ঘুরে দাঁড়াবে গাড়ি শিল্প।
অর্থমন্ত্রীর দাওয়াই অবশ্য সোমবার ম্যাজিকের মতো কাজ করতে পারে শেয়ার বাজারে। ফের দেশে পুঁজি নিয়ে ফিরতে পারে এফপিআই। যারা বাজেটের পরে কমবেশি ১০০ কোটি ডলার মূল্যের (প্রায় ৭,১০০ কোটি টাকা) লগ্নি ফিরিয়েছেন। আগামী দিনে চাহিদা বাড়বে ও অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এই আশায় চাঙ্গা ভাব দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে ব্যাঙ্ক, গাড়ি, গৃহনির্মাণ ও গৃহঋণ সংস্থার শেয়ারে। আশা, সামগ্রিক ভাবে সূচক মাথা তুলতে পারে বেশ খানিকটা। নির্মলা বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি অবিলম্বে ৭০,০০০ কোটি টাকার মূলধন পেলে ৫ লক্ষ কোটি পর্যন্ত নতুন ঋণ দিতে পারবে। ঋণে সুদ কমানোর কথাও বলা হয়েছে ব্যাঙ্কগুলিকে। বাড়তি ২০,০০০ কোটি পাবে গৃহঋণ সংস্থা। আশা, এই সব প্রস্তাব কার্যকর হলে বাড়ি, গাড়ি, ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ফের বাড়বে। তবে বিদেশি লগ্নিকারীদের উপর ধার্য সারচার্জ প্রত্যাহার করায় সরকারের আয় কমতে পারে ১,৪০০ কোটি।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy