গোটা বিশ্বের নজর যখন ১৩ জুলাইয়ের উপর, সিংহভাগ ভারতীয়ের তখন দৃষ্টি থাকবে তার তিন দিন আগের তারিখটির উপরেও। বাজেটের দিন ঘোষিত হয়েছে ১০ জুলাই। ওই দিনই সংসদে প্রথম বারের জন্য বাজেট পেশ করবেন কেন্দ্রের নতুন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
এ বারের বাজেটের গুরুত্বটাই আলাদা। সকলের আশা, সংসদে নতুন সরকারের পূর্ণ সংখ্যা-গরিষ্ঠতা থাকায় এবং আঞ্চলিক দলগুলির উপর নির্ভরতা কমে যাওয়ায় অরুণ জেটলি অনেক বলিষ্ঠ বাজেট পেশ করতে পারবেন। মনে করা হচ্ছে, এ বারের বাজেটে একটি দিশা থাকবে এবং সেই সঙ্গে থাকবে নানা ক্ষেত্রে সংস্কারের সিদ্ধান্ত। প্রস্তাবে আনন্দবার্তা যেমন থাকবে, তেমনই থাকতে পারে তেতো ওষুধও। উদ্দেশ্য হবে মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে দেশের অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানো।
বাজেটের আগে প্রস্তুত হচ্ছে শেয়ার বাজারও। এটি ঘিরে লগ্নিকারীরাও বিশেষ আশাবাদী। তাঁরা মনে করছেন, বাজেটের আগে ছোট করে একটি ‘বুল রান’-এর সম্ভাবনা রয়েছে। ‘নিফ্টি অপশন’ ‘রোল ওভারের’ পরিসংখ্যান ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাজার প্রাক্-বাজেট পর্বে ৫ শতাংশ পর্যন্ত উপরে যেতে পারে। সেনসেক্সের দাম ও আয়ের অনুপাত (পি ই রেশিও) যখন ১৮.৫, তখন নিফ্টির পি ই রেশিও ঘোরাফেরা করছে ২০.৩৫-এর আশেপাশে। এই অনুপাত আদৌ খুব উঁচু নয়। অর্থাৎ দাম বাড়ার আরও জায়গা আছে। বাজেটের ব্যাপারে ‘বুলিশ’ বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও। আবার তারা লগ্নি বাড়াতে শুরু করেছে বাজারে।
খানিকটা সংশোধনের পরে বাজার আবার নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছে গত সপ্তাহে। প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়ায় দাম পড়েছে ওএনজিসি এবং রিলায়্যান্স শেয়ারের। অন্য দিকে গাড়ি শিল্পে উৎপাদন শুল্ক হ্রাসের মেয়াদ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ায় শক্তি পেয়েছে এই গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। রেল ভাড়া বৃদ্ধি ভর্তুকি কমানোর পদক্ষেপ হওয়ায় তাকে সদর্থক ভাবেই গ্রহণ করেছে শেয়ার বাজার। প্রয়োজনীয় কয়েকটি সিদ্ধান্ত অবশ্য সরকার নিয়ে নিয়েছে মূল বাজেটের ঠিক আগেই। যার উদ্দেশ্য সম্ভবত নতুন পথে হাঁটা, বাজেটে নয়া দিশা দেখানো।
মনে করা হচ্ছে, যে-শিল্পগুলি এ বারের বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব পাবে তাদের মধ্যে সবার উপরে অবশ্যই থাকবে পরিকাঠামো। দেশের পরিকাঠামো উন্নয়নে যে-বিপুল অর্থ প্রয়োজন, তা সম্ভবত সংগ্রহের প্রস্তাব থাকবে করমুক্ত এবং করছাড়যোগ্য (৮০ সি ধারায়) বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে। গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে ব্যাঙ্কিং এবং মূলধনী পণ্য শিল্পকেও। এই কারণে অনেকেরই নজর থাকবে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক, এলঅ্যান্ডটি, বিএইচইএল, এনটিপিসি ইত্যাদি সংস্থার শেয়ার দরের উপর। আবার শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকলে সুদিন ধরে রাখা যাবে মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পেও।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সম্প্রতি বাজারে টাকার জোগান বৃদ্ধি করায় কিছুটা নেমে এসেছে ছোট মেয়াদে সুদের হার। এতে বেশ উপকৃত হবে ব্যাঙ্কিং শিল্প। বিশেষ করে ইয়েস ব্যাঙ্ক, ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্কের মতো ছোট আকারের বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি, যারা অনেকটাই নির্ভর করে শর্ট টার্ম ফান্ডের উপরে। বাজারে সুদ কমায় ১ শতাংশের মতো আয় কমেছে মিউচুয়াল ফান্ডের শর্ট টার্ম এবং আল্ট্রা শর্ট টার্ম প্রকল্পগুলিতেও। তা সত্ত্বেও এগুলি এখন ৮.৫ শতাংশের মতো রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারছে।
পণ্যমূল্য বৃদ্ধি যেহেতু কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না, সেই কারণে গৃহস্থের উপরে আর্থিক চাপ কিছুটা কমানোর জন্য বাজেটে অল্প হলেও করছাড়ের ব্যবস্থা করা হতে পারে। শেয়ার বাজার বাজেট পর্যন্ত চাঙ্গা থাকলেও, তার ঠিক পরে তা কেমন অবস্থায় থাকবে, তা কিন্তু এখনই বলা যাচ্ছে না। তার কারণ, এ বারের বাজেট থেকে সাধারণ মানুষের বিরাট আশা। প্রাপ্তিতে সামান্য ঘাটতি হলেই সংবেদনশীল শেয়ার বাজার সাময়িক ভাবে কিছুটা মুষড়ে পড়তে পারে। অর্থাৎ এখন ঘুঁটি চালতে হবে একটু হিসেব করে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে যে বাজার ভাল থাকবে, তা নিয়ে তেমন দ্বিমত নেই। কিন্তু অনেক ভাল-র মধ্যে যা বাজারকে ভাবাচ্ছে, তা হল ইরাক সঙ্কট এবং এল-নিনোর প্রভাবে বর্ষায় ঘাটতির সম্ভাবনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy