Advertisement
০৬ মে ২০২৪

গোছানো বিপণন কৌশলই পর্যটক টানার দৌড়ে হাতিয়ার গুজরাতের

ভাঁড়ারে বিরিয়ানির মশলা হয়তো নেই। কিন্তু যা আছে, সেটুকু দিয়ে স্বাদু রান্নার গোছানো চেষ্টাই গুজরাত পর্যটনের আসল ‘খুশবু’। অনেক পিছন থেকে দৌড় শুরু করে দূরত্ব কমিয়ে আনার পরে এখন যাদের পাখির চোখ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে ওঠা।

ইন্দ্রজিৎ অধিকারী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৬ ০২:৩৬
Share: Save:

ভাঁড়ারে বিরিয়ানির মশলা হয়তো নেই। কিন্তু যা আছে, সেটুকু দিয়ে স্বাদু রান্নার গোছানো চেষ্টাই গুজরাত পর্যটনের আসল ‘খুশবু’। অনেক পিছন থেকে দৌড় শুরু করে দূরত্ব কমিয়ে আনার পরে এখন যাদের পাখির চোখ দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে ওঠা। শিল্পে লগ্নি টানার মতোই। আর তার জন্য কেন্দ্রের প্রস্তাবিত বিমান পরিষেবা নীতির দিকে সাগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর রাজ্য।

কলকাতায় এসে গুজরাত পর্যটন দফতরের কমিশনার এন শ্রীবাস্তব সম্প্রতি বলেন, ‘‘দেশের ছোট শহরগুলিকে আকাশপথে যুক্ত করার কথা বলছে কেন্দ্র। প্রস্তাব রয়েছে তাদের মধ্যে উড়ানের ভাড়া ২,৫০০ টাকায় বেঁধে রাখার। বাস্তবে সেটা হলে, যাতায়াত সহজ হবে সুরত, রাজকোট আর ভুজের মধ্যে। ভোল বদলে যাবে গুজরাত পর্যটনেরই।’’ এই একই কারণে মুম্বই-গাঁধীনগরের মধ্যে প্রস্তাবিত বুলেট ট্রেন প্রকল্পের দিকেও তাকিয়ে তাঁরা।

হালে গল্ফ, উৎসব আর সিনেমা-ভিত্তিক (মূলত শ্যুটিং স্থল) পর্যটনে বেশি জোর দিচ্ছে গুজরাত। কিন্তু শ্রীবাস্তবের মতে, প্রায় শূন্য থেকে দৌড় শুরু করে তাঁদের রাজ্যের এতখানি উঠে আসা অনেকটা সিনেমারই মতো। কারণ, কাশ্মীরের নিসর্গ, কেরলের ‘ব্যাক ওয়াটার’ বা রাজস্থানের কেল্লা এখানে নেই। চাইলেই পাওয়া যায় না আমিষ খাবার বা মদ। ‘না’-এর পাল্লা ভারী থাকা এই রাজ্যের শুরুতে সম্বল বলতে ছিল শুধু গির অভয়ারণ্য, কচ্ছের রণ, দ্বারকা, মহাত্মা গাঁধীর আশ্রম, সোমনাথ মন্দিরের মতো হাতে গোনা কিছু পরিচিত নাম। সঙ্গে শিল্পে সমৃদ্ধি ও কড়া আইন-শৃঙ্খলার ভাবমূর্তি। সেখান থেকে বিপণনের আটঘাট বেঁধে নাছোড় লড়াইকেই চাকা ঘোরার কারণ বলে চিহ্নিত করছেন তিনি।

শ্রীবাস্তব জানান, ২০০২ সাল পর্যন্ত পর্যটনে কার্যত কল্কেই পেত না গুজরাত। অবস্থা বদলাতে সরকার কোমর বাঁধে ২০০৬ সাল থেকে। বাজেট বরাদ্দ ৪০ কোটি টাকা থেকে এক লাফে বাড়িয়ে করা হয় ১০০ কোটি। পর্যটন পরিকাঠামো ঢেলে সাজতে ৫০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয় প্রত্যেক জেলা কালেক্টরকে। ২০১০ সালে বিপণন দূত হিসেবে নিযুক্ত হন অমিতাভ বচ্চন। তাঁকে সামনে রেখে ‘খুশবু গুজরাত কী’র বিজ্ঞাপন সাড়া ফেলে সর্বত্র। নজর কাড়ে পর্যটকদের। চাকা ঘোরার সেই শুরু। জোরকদমে শুরু হয় হোটেল, পার্কের মতো পর্যটন পরিকাঠামো গড়ার কাজও।

শ্রীবাস্তবের দাবি, এই সবের সুফল হিসেবেই পর্যটকের সংখ্যা প্রায় লাফিয়ে বেড়েছে তাঁদের রাজ্যে। কিছু বছর আগে গির অভয়ারণ্যে পা পড়ত ৮০ লক্ষ পর্যটকের। এখন তা প্রায় ১.৩ কোটি। সোমনাথ মন্দিরে যেখানে একসঙ্গে ২০ জন দর্শনার্থীর দেখা পাওয়া বিরল ছিল, সেখানে এখন উপচে পড়ছে পর্যটক। এমনকী প্রতিদিন ২৫-৩০ হাজার জন ভিড় করেন নবরাত্রি উৎসবেও।

পর্যটনের জন্য প্রকৃতি বা ইতিহাস গুজরাতের জন্য যত না সম্ভার সাজিয়ে দিয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি করে বরং বিপণনের উপর নির্ভর করতে হয়েছে তাদের। কখনও নবরাত্রি উৎসব তাদের হাতিয়ার হয়েছে, তো কখনও আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব! পর্যটক টানতে মরুভূমিতে বসেছে বিকিকিনির পসরা। যেখানে সে ভাবে ‘দেখার কিছু নেই’, সেখানেও বেড়ানোর প্যাকেজে ঠেসে দেওয়া হয়েছে ঘোড়ায় চড়া কিংবা উটে সওয়ার হওয়ার উত্তেজনা। শুধু পর্যটন দফতরে সীমাবদ্ধ না-রেখে পর্যটক টানার লক্ষ্যকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুরো সরকারের মধ্যে। যে-কারণে ভাইব্র্যান্ট গুজরাতের মতো শিল্প সম্মেলন কিংবা সুইচ-এর মতো আন্তর্জাতিক বৈদ্যুতিন পণ্যের মেলার সঙ্গেও জুড়ে দেওয়া হচ্ছে বেড়ানোর ছোট ছোট প্যাকেজকে।

শ্রীবাস্তবের দাবি, ‘‘এই সব কিছুর পরে আকাশ ও রেল পথে যোগাযোগ আরও ভাল হলে, পর্যটনেও গুজরাতকে রোখা শক্ত হবে। শিল্পেরই মতো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Gujarat Tourist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE