Advertisement
E-Paper

প্রশ্নে বিদ্ধ ৫৯ মিনিটে ঋণ

সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের অভিযোগ, ভোটের আগে দীপাবলির উপহার হিসেবে ঢাক পিটিয়ে করা এই পদক্ষেপ আসলে ব্যালট বাক্সে চোখে রেখেই। তারা বলছেন, খুঁটিয়ে দেখে বড় সংস্থাকে দেওয়া ঋণই বহু ক্ষেত্রে অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হয়েছে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০০

নোটবন্দি ও তড়িঘড়ি জিএসটি চালুর ধাক্কায় মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ছোট-মাঝারি শিল্পের মন ফিরে পেতে সম্প্রতি ৫৯ মিনিটে ঋণ মঞ্জুরির কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার পরিমাণ হবে ১০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত। কিন্তু প্রশ্ন উঠল, এই ঋণ মঞ্জুর করতে গিয়ে ধার শোধ হবে কি না, তা ঠিক মতো খতিয়ে দেখা হচ্ছে তো?

সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের অভিযোগ, ভোটের আগে দীপাবলির উপহার হিসেবে ঢাক পিটিয়ে করা এই পদক্ষেপ আসলে ব্যালট বাক্সে চোখে রেখেই। তারা বলছেন, খুঁটিয়ে দেখে বড় সংস্থাকে দেওয়া ঋণই বহু ক্ষেত্রে অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হয়েছে। যা সামলাতে ব্যাঙ্কগুলি নাজেহাল। সেখানে ছোট সংস্থাগুলিকে চটজলদি মঞ্জুর করা ঋণ যে আদৌ শোধ হবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? যে কারণে ফেসবুক, টুইটারের মতো বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যবসায়ী, ব্যাঙ্ক কর্তা, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা বিষয়টি নিয়ে লাগাতার উদ্বেগ প্রকাশ করছেন।

অনেকে তুলছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের কথাও। যিনি আগেই সতর্ক করে বলেছিলেন, ছোট শিল্পকে চোখ বুজে ঋণ বিলি করতে গিয়ে অনুৎপাদক সম্পদ আরও বাড়তে পারে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের হয়ে ঋণের আবেদন গ্রহণ, প্রাথমিক বাছাই ও নীতিগত ঋণ মঞ্জুরের সিদ্ধান্ত জানাতে চালু হয়েছে ‘পিএসবি লোনস ইন ৫৯ মিনিটস ডট কম’ ওয়েবসাইট। এটি সামলাবে ‘ক্যাপিটাওয়ার্ল্ড’। অভিযোগ উঠেছে, গুজরাতের মোদী ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত এক শিল্পপতির উপদেষ্টা বিনোদ মোধা সেটির ডিরেক্টর। সেই সুবাদেই নাকি এত বড় দায়িত্ব পেয়েছে তারা। ঋণের আবেদন জানানোর সময় সাইটে ব্যবসায়ীদের যে জিএসটি নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও আয়কর সংক্রান্ত তথ্য দিতে হচ্ছে, তার সুরক্ষা নিয়েও উদ্বিগ্ন অনেকে।

এ সব প্রশ্ন উঠতেই মাঠে নেমেছে অর্থ মন্ত্রক। তাদের ও কেন্দ্রের ক্ষুদ্র শিল্প উন্নয়ন ব্যাঙ্কের (সিডবি) দাবি, ক্যাপিটাওয়ার্ল্ড দায়িত্ব পেয়েছে সরকারি নিয়ম মেনে দরপত্র দিয়ে। সংস্থাটিতে সিডবি ও স্টেট ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব বরোদা, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক, বিজয়া ব্যাঙ্ক, ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের হাতে ৫৪% অংশীদারি। ৭ জন ডিরেক্টরের ৪ জনই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার প্রতিনিধি। মোধার শেয়ার সামান্য। তিনি ডিরেক্টরও নন। তাদের আরও দাবি, ব্যবসায়ীর তথ্য সুরক্ষিত রাখতে সাইটে জমিয়ে রাখা হচ্ছে না। আর ঋণ মঞ্জুরিও হচ্ছে সব দিক খতিয়ে দেখেই।

যা শুনে অনেকের প্রশ্ন, এত দ্রুত কী ভাবে ছাড়পত্র দেওয়া সম্ভব?

অর্থ মন্ত্রকের অবশ্য যুক্তি, এ জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি আগেই ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য যে ঋণ প্রকল্পগুলি চালু করেছে, ব্যবসায়ীরা তার শর্ত পূরণ করছেন জানিয়ে নথি জমা দিলেই চলবে। ৫৯ মিনিটে ঋণে নীতিগত মঞ্জুরির পরে সেই টাকা দেওয়া হচ্ছে তার ৭-৮দিনের মধ্যে। কোনও বন্ধকও রাখতে হচ্ছে না। কারণ, প্রকল্পটি ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য সিডবির চালু কেন্দ্রীয় ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড ট্রাস্ট’-এর সঙ্গে যুক্ত। যার অর্থ, ঋণ শোধের গ্যারান্টি দেওয়া হবে সরকারি তহবিল থেকেই।

অথচ রাজন সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো নোটে বলেছিলেন, ‘‘ক্রেডিট গ্যারান্টি তহবিল দায়বদ্ধতা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’ সরকারি কর্তারাও তা অস্বীকার করছে না। ২০০০ সালে চালু এই তহবিল থেকে এখনও পর্যন্ত ১.২৫ লক্ষ কোটির বেশি ঋণের গ্যারান্টি দেওয়া হয়েছে। এ বছরই সিডবি ও সিবিলের সমীক্ষা বলেছে, আগামী মার্চের মধ্যে ১৬ হাজার কোটির ঋণ অনাদায়ি হতে পারে।

Business Loan Scheme Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy