Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

পরিচয়ের নতুন নিয়ম

ভোল বদলেছে কেওয়াইসি। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে পরিষেবা পেতে এখন থেকে তা এক বার জমা দিলেই চলবে। এর জেরে কমেছে আপনার-আমার ঝক্কি। বদল কোথায়, আসুন দেখিনিয়ম বদলেছে ‘নো ইয়োর কাস্টমার’ (কেওয়াইসি) জমা দেওয়ার। এখন আর প্রতিবার ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট খোলা কিংবা তার লেনদেন চালুর জন্য কাগজপত্তর জমা দিতে হবে না। এক বার দিলেই হবে। এ নিয়েই আজ কথা বলব আমরা। তবে তার আগে দেখে নেব কেওয়াইসি বিষয়টা ঠিক কী।

অরিন্দম সাহা
শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৭
Share: Save:

নিয়ম বদলেছে ‘নো ইয়োর কাস্টমার’ (কেওয়াইসি) জমা দেওয়ার। এখন আর প্রতিবার ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্ট খোলা কিংবা তার লেনদেন চালুর জন্য কাগজপত্তর জমা দিতে হবে না। এক বার দিলেই হবে। এ নিয়েই আজ কথা বলব আমরা। তবে তার আগে দেখে নেব কেওয়াইসি বিষয়টা ঠিক কী।

কেওয়াইসি কী?

ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে অ্যাকাউন্ট খুলতে বা পরিষেবা পেতে নিজের পরিচয় (সচিত্র) এবং বাসস্থানের ঠিকানার প্রমাণপত্র জমা দিতে হয়। এই কাগজকেই সংক্ষেপে বলে কেওয়াইসি।

তিনটি ক্ষেত্রে সাধারণত এগুলি যাচাই করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি:—

১) যে-কোনও অ্যাকাউন্ট খোলা, ফান্ডে বা শেয়ারে লগ্নি, বিমা পলিসি কেনা ইত্যাদি ক্ষেত্রে। ২) অ্যাকাউন্টে লেনদেন করার সময়ে। ৩) গ্রাহকের পেশ করা তথ্য সম্পর্কে ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির সন্দেহ হলে।

নতুন নিয়ম

প্রায় এক মাস হতে চলল এই কেওয়াইসি জমার নিয়মেই পরিবর্তন করেছে কেন্দ্র। এই বিধি সরল করতে একমত হয়েছে বিমা নিয়ন্ত্রক আইআরডিএ, পেনশন নিয়ন্ত্রক পিএফআরডিএ, শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি।

নতুন নিয়মে প্রতিবার অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে আর আলাদা করে কেওয়াইসি নথি জমা দিতে হবে না। এক বার দিলেই চলবে।

অর্থাৎ ধরুন, আপনি প্রথমে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে চান। তার পরে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি, নিউ পেনশন সিস্টেমে বিনিয়োগ। পেতে চান ডি-ম্যাট ও ব্রোকিং‌ অ্যাকাউন্ট চালুর মতো আর্থিক পরিষেবা। পাশাপাশি, কিনতে চান বিমা পলিসিও। আগে প্রতিটি লগ্নির জন্য বা সব অ্যাকাউন্ট খুলতেই কেওয়াইসি-র নথি জমা দিতে হত। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় প্রথমে ব্যাঙ্কে কাগজপত্রের ফোটোকপি দিলেই হবে।

এ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কই কেন্দ্রের নির্দিষ্ট সংস্থার আওতায় থাকা বৈদ্যুতিন (ডিজিটাল) তথ্যভাণ্ডারে জমা দেবে আপনার দাখিল করা যাবতীয় তথ্য। পরে অন্য প্রতিষ্ঠানে গেলে, তারা সেখান থেকেই আপনার তথ্য জেনে নেবে। এই পুরো ব্যবস্থার নাম ‘সেন্ট্রাল কেওয়াইসি’ অথবা সি-কেওয়াইসি। আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষের ঝক্কি কমানো এবং কেওয়াইসি ব্যবস্থাকে আরও পাকাপোক্ত করাই যার লক্ষ্য।

সি-কেওয়াইসির নথি

সাধারণত ছ’টি প্রমাণপত্র থেকে এই তথ্য যাচাই করা হয়—

১) পাসপোর্ট। ২) আধার কার্ড।

৩) প্যান কার্ড। ৪) ভোটার কার্ড।

৫) ড্রাইভিং লাইসেন্স।

৬) এনআরইজিএ কর্মীর কার্ড।

এ ছাড়াও, কেওয়াইসি-র জন্য গ্রাহকের ছবি এবং সই লাগে।

কোনও ব্যক্তি ভাড়া বাড়িতে থাকলে অথবা কাজের সূত্রে অন্য রাজ্যে থাকলে, তাঁর ক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়ার চুক্তির কাগজ বা তার রসিদ জমা দিয়ে আধারে ঠিকানা পরিবর্তন করাতে পারবেন। তার পর সেই আধার নথি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অন্য কোনও প্রমাণপত্র নিতে রাজি হলে, তা-ও জমা দেওয়া যেতে পারে।

আরও বদল

পরিবর্তন আনা হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। একটির কথা ইতিমধ্যেই বলেছি। বাকিগুলি হল—

পাবেন নম্বর: প্রথম বার যে-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গ্রাহক নথি জমা দিচ্ছেন, সেখান থেকে নির্দিষ্ট কেওয়াইসি নম্বর পাবেন। যা ই-মেল এবং এসএমএসের মাধ্যমে তাঁর কাছে পৌঁছবে। পাশাপাশি, প্রতিষ্ঠানগুলিও সেই সংক্রান্ত তথ্য তাঁকে জানাবে। পরবর্তী কালে যে-কোনও ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলার সময়ে সেই নম্বর ব্যবহার করলেই চলবে। যদি কোনও ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের সন্দেহ হয় অথবা নিয়ম অনুসারে অতিরিক্ত তথ্য প্রয়োজন হয়, সে ক্ষেত্রে তা গ্রাহকের কাছ থেকে তা চাইতে পারে তারা।

একটি আবেদনপত্র: বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কেওয়াইসি-র জন্য তৈরি হয়েছে একটি মাত্র আবেদনপত্র। ফলে আগে প্রতিটির ক্ষেত্রে আলাদা আবেদনপত্র ভর্তি করতে হলেও, এখন আর সেই ঝামেলা থাকবে না।

পাশাপাশি, একটি কেওয়াইসি তৈরি করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির আগে প্রায় ২০ টাকা লাগত। যা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে গ্রাহককেই দিতে হত। নতুন ব্যবস্থায় তা দাঁড়িয়েছে ১ টাকা। এর সঙ্গেই প্রতি বার কেওয়াইসি-র যে খরচ গ্রাহককে বইতে হত, তা-ও বন্ধ হবে।

বাড়তি তথ্য: নতুন নিয়মে অতিরিক্ত কিছু তথ্য, যেমন— গ্রাহকের মায়ের নাম, বিয়ের আগের পদবী (মহিলাদের ক্ষেত্রে) ইত্যাদি দিতে হতে পারে। দু’জন গ্রাহকের মধ্যে মিল থাকলে, এক জনকে অন্য জনের থেকে আলাদা করতে সাহায্য করবে এই সব তথ্য। আবার, একই ব্যক্তি যদি আলাদা পরিচয়পত্র এবং ঠিকানার প্রমাণপত্র দিয়ে একাধিক অ্যাকাউন্ট খোলেন, তা হলেও তাঁকে চিহ্নিত করা যাবে।

জমার দায়িত্বে কারা: সি-কেওয়াইসির তথ্য বৈদ্যুতিন মাধ্যমে জমা রাখার দায়িত্ব পেয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্ট্রাল রেজিস্ট্রি অব সিকিউরিটাইজেশন অ্যাসেট রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড সিকিউরিটি ইন্টারেস্ট অব ইন্ডিয়া (সিইআরএসএআই অথবা সারসাই)।

গ্রাহক পরিষেবায়: বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সারসাইয়ের সেতু বন্ধনের দায়িত্বে রয়েছে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের শাখা সংস্থা ডটএক্স ইন্টারন্যাশনাল। একই সঙ্গে সারসাই-এর হয়ে আমার-আপনার মতো গ্রাহককেও পরিষেবা দেবে তারা। ওয়েবসাইট: www.ckycindia.in। ফোন নম্বর: (০২২) ৬১১০-২৫৯২।

নথি না-থাকলে

এর আগে উল্লেখ থাকা ছ’টি নথির কোনওটিই যদি গ্রাহকের কাছে না-থাকে, সে ক্ষেত্রে সিকেওয়াইসি-র নিয়ম মেনে তাঁর তথ্য জমা রাখা যাবে না। কিন্তু তা সত্ত্বেও অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে। সে ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের ১ জুলাই প্রকাশ করা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বিজ্ঞপ্তি মেনে নির্দিষ্ট নথি জমা দিতে হবে। সেই অ্যাকাউন্টগুলিকে ‘সিমপ্লিফায়েড মেজার্স অ্যাকাউন্ট’ বা ‘স্মল অ্যাকাউন্ট’ বলা হয় (যেমন, জন-ধন অ্যাকাউন্ট)। এগুলির ফর্মেই ইংরাজি ‘এল’ অথবা ‘এস’ অক্ষর দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে।

এই সব অ্যাকাউন্টে কেওয়াইসি নম্বর পাওয়া যাবে, কিন্তু সব ধরনের লেনদেন করা যাবে না। যেমন, প্যান কার্ড না-থাকলে স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন করতে পারবেন না।

পুরনো গ্রাহকের জন্য

নতুন গ্রাহকের জন্য প্রথম থেকেই সি-কেওয়াইসির নিয়ম চালু হয়েছে। ফলে ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে লেনদেন শুরুর সময়ে তাঁদের সি-কেওয়াইসির আবেদনপত্রই পূরণ করতে হবে। কিন্তু পুরনো গ্রাহকদের জন্য এখনও পর্যন্ত আগের কেওয়াইসি-র নিয়মই বজায় রয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে তাঁদেরও নতুন ব্যবস্থার আওতায় আনা হবে।

সে ক্ষেত্রে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিই সরাসরি যোগাযোগ করবে ও জানাবে আর কী কী তথ্য জমা দিতে হবে।

নিয়ম মেনে সব তথ্য ইতিমধ্যেই জমা দেওয়া থাকলে সরাসরি নতুন ব্যবস্থায় বদলে যাবে কেওয়াইসি।

পুরনো গ্রাহকদের নতুন ব্যবস্থায় আনার ক্ষেত্রে যদি কোনও সমস্যা হয়, তা হলে তাঁরা যোগাযোগ করতে পারেন গ্রাহক পরিষেবার দায়িত্বে থাকা ডটএক্স ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে।

তথ্য বদলালে

এক বার সি-কেওয়াইসিতে নথিভুক্তির পরেও কোনও তথ্য পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন, কেউ বাড়ি পাল্টালে ঠিকানা বদলে যাবে। সে ক্ষেত্রে যে-কোনও একটি ব্যাঙ্ক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করলেই চলবে। তারাই আপনার সেই পরিবর্তিত তথ্য বৈদ্যুতিন তথ্যভাণ্ডারে তুলে রাখবে। এক বার সেই কাজ সম্পূর্ণ হলে, অন্যান্য ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক পরিষেবা সংস্থার কাছেও তা পৌঁছে যাবে।

লেখক ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের এডিটর অ্যান্ড কমিউনিকেশন্স হেড(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KYC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE