আয়করে ছাড় দেওয়ায় মধ্যবিত্তরা যতটা সুরাহা পাবেন, বড়লোকরা তার থেকে অনেক কম সুরাহা পাবেন বলে আজ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দাবি করলেন।
এ বারের বাজেটে মূলত দু’ভাবে আয়করে সুরাহা দেওয়া হয়েছে। এক, নতুন কর ব্যবস্থায় আয়করের হারে রদবদল করা হচ্ছে। তার ফলে আয়করের বোঝা এমনিতেই কমেছে। দুই, ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে যে আয়কর দিতে হয়, তাতে ছাড় বা ‘রিবেট’ দেওয়া হবে। তার ফলে যাদের আয় মাসে ১ লক্ষ টাকা বা বছরে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত, তাদের কোনও আয়কর দিতে হবে না।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম বাজেট নিয়ে রাজ্যসভার আলোচনায় অভিযোগ তুলেছিলেন, সরকার শুধুই মধ্যবিত্তকে সুরাহা দেওয়ার কথা বলছে। কিন্তু বাস্তবে ধনী, অতি ধনীরাও অনেক সুরাহা পাবেন। তাঁর যুক্তি ছিল, মাত্র ৩.২ লক্ষ মানুষ আয়কর জমা করেন। ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত করে দেওয়ার ফলে ৮০-৮৫ লক্ষ মানুষ আয়করের আওতার বাইরে চলে যাবেন। ২.৫ কোটি মানুষের করের বোঝা কমবে। এই ২.৫ কোটির মধ্যে ২.২৭ শতাংশ মানুষের আয় ১ কোটি টাকার বেশি। ২৬২ জনের আয় ১০০ কোটি টাকার বেশি। ২৩ জনের আয় ৫০০ কোটি টাকার বেশি। আম আদমি পার্টির সাংসদ রাঘব চড্ডার অভিযোগ, কারও আয় ১২ লক্ষ টাকার থেকে সামান্য বেশি হলেই পুরো আয়কর দিতে হবে।
আজ অর্থমন্ত্রী বলেন, ১২ লক্ষ টাকার সামান্য বেশি আয় হলে আয়কর দিতে হবে না। সেখানে বাড়তি সুবিধা বা ‘মার্জিনাল রিলিফ’ দেওয়া হয়। কারও আয় ১২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা হলে এত দিন ৬১,৫০০ টাকা আয়কর দিতে হচ্ছিল, এখন তাঁকে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। ১২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা আয় হলে এত দিন ৬৭,৫০০ টাকা আয়কর দিতে হত। এখন তাঁর করের বোঝা ৫০ হাজার টাকা কমে যাবে। ১২ লক্ষ ৭৫ হাজার টাকা আয় পর্যন্ত এই সুবিধা মিলবে।
আয়কর কাঠামোর পরিবর্তনের ফলে ধনীদের থেকে মধ্যবিত্তরা অনেক বেশি সুরাহা পাবেন বলেও অর্থমন্ত্রীর দাবি। তাঁর দাবি, কারও আয় ১২ লক্ষ টাকার অনেক বেশি হলে তিনি কোনও ‘রিবেট’ পাবেন না ঠিকই। কিন্তু আয়কর কাঠামোর রদবদলের ফলে সুরাহা পাবেন। কিন্তু আয় বাড়ার সঙ্গে সুরাহার হারও কমবে। কারও আয় বছরে ২৪ লক্ষ টাকা হলে তাঁর করের বোঝা ৩ লক্ষ টাকা থেকে প্রায় ২৬ শতাংশ কমে ১.১০ লক্ষ টাকা হবে। ৫০ লক্ষ টাকা আয় হলে ৯.২৪ শতাংশ আয়করের বোঝা কমবে। ১ কোটি টাকার বেশি আয় হলে আয়করের বোঝা ৪.০৮ শতাংশ কমবে। ১০০ কোটি টাকা আয় হলে মাত্র ০.০৩৭% কম আয়কর দিতে হবে। ২৫০ কোটি টাকার আয়ে ০.০১৫% ও ৫০০ কোটি টাকা আয় হলে ০.০০৭% কম আয়কর দিতে হবে। যার অর্থ ধনী, অতিধনীদের থেকে মধ্যবিত্তরা অনেক বেশি সুরাহা পাবেন।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)