Advertisement
E-Paper

ওর্যাকলের লগ্নি তালিকায় বাদ রাজ্য

বেঙ্গালুরু, মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লির কাছে আগেই হেরে গিয়েছে কলকাতা। তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে হায়দরাবাদ ও পুণে। তথ্যপ্রযুক্তিতে লগ্নির গন্তব্য হিসেবে এ বার কলকাতাকে হারিয়ে দিল বিজয়ওয়াড়া ও তিরুঅনন্তপুরমও।

গার্গী গুহঠাকুরতা

শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০৩:০৯

বেঙ্গালুরু, মুম্বই, চেন্নাই, দিল্লির কাছে আগেই হেরে গিয়েছে কলকাতা। তাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে হায়দরাবাদ ও পুণে। তথ্যপ্রযুক্তিতে লগ্নির গন্তব্য হিসেবে এ বার কলকাতাকে হারিয়ে দিল বিজয়ওয়াড়া ও তিরুঅনন্তপুরমও।

বস্তুত, শুধু কলকাতা নয়, মাইক্রোসফটের সঙ্গে পাল্লা দেওয়া সফটওয়্যার সংস্থা ওর‌্যাকলের সম্প্রসারণ মানচিত্রে ঠাঁই পেল না গোটা পশ্চিমবঙ্গই। সম্প্রতি ভারতে সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে ৩,৮২৩ কোটি ডলার ব্যবসা করা ওর‌্যাকল। বেঙ্গালুরুতে দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্যাম্পাসের পাশাপাশি স্টার্ট-আপ সংস্থার জন্য দেশ জুড়ে ৯টি ইনকিউবেশন সেন্টার (আঁতুড়ঘর) গড়ে তুলবে তারা। সব মিলিয়ে লগ্নি দাঁড়াবে ৪০ কোটি ডলার। কিন্তু বিপুল পুঁজির ছিটেফোঁটাও এ রাজ্যের ভাগ্যে জোটেনি।

চেন্নাই, গুড়গাঁও, বেঙ্গালুরু, মুম্বই, নয়ডা, হায়দরাবাদ, পুণে, তিরুঅনন্তপুরম, বিজয়ওয়াড়ায় তৈরি হচ্ছে ওই আঁতুড়ঘর। তালিকায় কলকাতা নেই। সংস্থার প্রধান সাফ্রা কাট্জ আনুষ্ঠানিক ভাবে এই পরিকল্পনা ঘোষণা করে জানান, তথ্যপ্রযুক্তির স্টার্ট-আপ ও অন্যান্য সফটওয়্যার, প্রশিক্ষণ ও পরিকাঠামোর জোগান দেবে আঁতুড়ঘরগুলি।

শুধু পুঁজি না-আসা নয়, ওর‌্যাকলের মতো ব্র্যান্ডের লগ্নির দৌড়ে পিছিয়ে হতাশ রাজ্যের স্টার্ট-আপ শিল্পমহল। তাদের মতে, মেধা, বাণিজ্য পরিকল্পনা, পুঁজি ও পরিকাঠামোর মেলবন্ধনের অভাবেই স্টার্ট-আপ সংস্থার বাড়বাড়ন্ত নেই এ রাজ্যে। সমস্যার সমাধানসূত্র হিসেবে ন্যাসকমের হাত ধরেছে রাজ্য সরকার। তৈরি হয়েছে ইনকিউবেশন সেন্টার। বিশেষজ্ঞদের মতে বেঙ্গালুরু বা দিল্লির স্টার্ট-আপ পরিকাঠামো ও পরিবেশের সঙ্গে পাল্লা দিতে এ ধরনের কেন্দ্রের সংখ্যা বেশি হওয়া জরুরি। সে ক্ষেত্রে ওর‌্যাকলের ইনকিউবেশন সেন্টার পশ্চিমবঙ্গের জন্য বড় প্রাপ্তি হতে পারত।

অপ্রাপ্তির কারণ হিসেবে উঠে এসেছে সেই ভাবমূর্তির সমস্যা। কখনও ইনফোসিস ও উইপ্রোকে সেজ তকমা দেওয়া নিয়ে রাজ্যের বিরোধী অবস্থান। কখনও রাজ্যেরই এক মন্ত্রীর মুখে রতন টাটাকে প্রকারান্তরে ‘পাগল’ বলা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড়। জাতীয় স্তরের একটি বণিকসভার কর্তার মতে, এ ধরনের ঘটনাই রাজ্যের ছবিটা মলিন করেছে বারবার। তারই জেরে বড় সংস্থার বাণিজ্যিক পরিকল্পনায় উঠে আসতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ। অথচ যে-পুঁজির জোরে স্টার্ট-আপ তৈরি হয়, সেই মেধা-সম্পদের অভাব এখানে নেই।

তবে ওর‌্যাকলের সিদ্ধান্তে বিস্মিত নয় সংশ্লিষ্ট শিল্প। এক শিল্প-কর্তার ক্ষোভ, জানুয়ারিতে স্টার্ট-আপ নীতি ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তামিলনাড়ু, কর্নাটক, রাজস্থান, কেরলের মতো গুটি কয়েক রাজ্য ছাড়া এই নীতি নেই অন্যান্য রাজ্যের। অথচ সেই বাড়তি সুবিধার কথা তুলে ধরার জন্য মুম্বইয়ে কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক আয়োজিত শিল্প সম্মেলন মেক ইন ইন্ডিয়া উইক-এর মতো মঞ্চ ব্যবহার করতে উৎসাহ দেখায়নি রাজ্য। তাঁর অভিযোগ, প্রতিযোগিতার বাজারে সুযোগ কাজে না-লাগালে এ ভাবেই লগ্নি হারাতে হবে।

এক দিকে বেসরকারি পুঁজি হারাচ্ছে রাজ্য। অন্য দিকে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ ভাবে তথ্যপ্রযুক্তির একই ধরনের পরিকাঠামো গড়ার প্রকল্পও হিমঘরে। ২০০৭ থেকে চিপ ডিজাইনিং-এর বিশেষ পরিকাঠামো ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টার প্রকল্প নিয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে। কিন্তু লাল ফিতের ফাঁসে আটকে তা এখনও পরিকল্পনা স্তরের বাইরে বেরোয়নি। ১২০ কোটি টাকার প্রকল্পে ২৪তলা বাড়িতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও গবেষণাগার গড়ে ওঠার কথা। স্টার্ট-আপকে চিপ তৈরির ‘সফটওয়্যার টুল’-ও ভাড়া দেওয়ার কথা ছিল। মন্দা ও প্রশাসনিক গড়িমসির পরে প্রকল্পে এখনও বাধা তথ্যপ্রযুক্তি ও নগরোন্নয়ন দফতরের বিরোধ। জমি হস্তান্তরের সময়ে দেয় ‘ট্রান্সফার ফি’ সংক্রান্ত বিতর্কে হাত গুটিয়ে নেয় লগ্নিকারী নির্মাণ সংস্থাও। সব মিলিয়ে এখনও ঝুলে এই প্রকল্প।

invesment oracle west bengal state
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy