নোটের আকালেও আবাসন শিল্পের বাজি সেই নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত বাজার।
এই বাজার ধরতে দেশ জুড়ে প্রায় সব নির্মাণ সংস্থাই নতুন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে। নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাইয়ের প্রেসিডেন্ট গীতাম্বর আনন্দের দাবি, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে এ ধরনের প্রকল্প ঘোষণার সংখ্যা বাড়বে। কম দামি বাড়ি তৈরির দিকে নজর দিচ্ছে জাতীয় স্তরের বিভিন্ন নির্মাণ সংস্থাও। শাপুরজি পালোনজি, ওয়াধওয়া গোষ্ঠী, মহীন্দ্রা লাইফস্পেসেস, টাটা হাউসিং— তালিকায় রয়েছে সকলেই। এমনকী এমজি গোষ্ঠীর মতো বিলাসবহুল ফ্ল্যাট নির্মাতাও এই প্রথম মুম্বইয়ের মধ্যবিত্ত বাজার ধরতে ঝাঁপাচ্ছে।
গত প্রায় তিন মাসে নোট বাতিলের ধাক্কায় হুড়মুড়িয়ে পড়েছে ফ্ল্যাটের বিক্রি। দেশ জুড়ে বিক্রি কমেছে ৪৪%। বিশেষজ্ঞ সংস্থা নাইট ফ্র্যাঙ্কের অন্যতম প্রধান সঙ্গীতা শর্মা দত্তের দাবি, বিলাসবহুল ও দামি বাড়ির বিক্রিতে অনেক সময়ে নগদ লেনদেনের পরিমাণ বেশি থাকে। নোট বাতিলের পরে সেই বাজারে বিক্রির হার স্বাভাবিক ভাবেই কমেছে। আঁচ লেগেছে কলকাতার বাজারেও। তবে অন্যান্য শহরের তুলনায় কলকাতার ছবি কিছুটা কম মলিন। দিল্লিতে কমেছে ৫৩% বিক্রি। মুম্বই ৫০%, বেঙ্গালুরু ৪৫%, আমদাবাদ ৪৩%, হায়দরাবাদ ৪০%, পুণে ও চেন্নাই যথাক্রমে ৩৫ ও ৩১%। কলকাতায় কমেছে ২০%।
কলকাতার এই তুলনামূলক ভাল ছবির মূলে রয়েছে মধ্যবিত্ত বাজার। ক্রেডাই (বেঙ্গল)-এর কর্তা সুশীল মোহতার দাবি, নোটে টান পড়লেও চাহিদায় টান পড়েনি। তার মূল কারণ কলকাতার বাজার ফাটকাবাজদের নয়। তিনি বলেন, ‘‘খুব দামি ফ্ল্যাটের বাজার কিছুটা ফাটকাবাজদের দখলে থাকে। তাই বাজার পড়তির দিকে থাকলে সেগুলি বিক্রি হয় কম। কিন্তু মধ্যবিত্ত ক্রেতা প্রয়োজনেই ফ্ল্যাট কেনেন। কলকাতার সিংহভাগ ক্রেতাই মধ্যবিত্ত।’’ সরকারি তথ্যও বলছে আবাসনের ৯০% চাহিদা তৈরি করে মধ্যবিত্ত ক্রেতা।
পরিস্থিতির দিকে নজর রেখে তৈরি হচ্ছে নতুন বিপণন কৌশলও। যেমন বিজিএ রিয়্যালটি কম দামের আবাসন প্রকল্পে ‘ডাউনপেমেন্ট’-এর উপরে ৮.৫% সুদ দিচ্ছে। সংস্থার প্রধান রাজীব ঘোষ জানান, সাধারণ মানুষের ঋণের বোঝা কমাবে এই প্রকল্প। তাঁর দাবি, দ্রুত কেনার সিদ্ধান্ত নিতেও সাহায্য করবে এ ধরনের সুযোগ-সুবিধা। একই ভাবে সিদ্ধা গোষ্ঠী জানিয়েছে, ভবিষ্যতে দাম কমলে সেই দামই ক্রেতাদের থেকে নেবে তারা। অর্থাৎ এখন যে-দামেই ফ্ল্যাট ‘বুকিং’ হোক, পরে দাম কমে গেলে, সেই কম দামই ক্রেতার থেকে নেওয়া হবে।
নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত আবাসন তৈরির উপরে জোর দিচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারও। ৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণের সুদের উপর চালু হচ্ছে ৩% ভর্তুকি। ১২ লক্ষ টাকার সুদে থাকছে ৪% সরকারি ভর্তুকি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, কম দামি আবাসন তৈরির উপরে আরও সুবিধা আসন্ন বাজেটে থাকতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম পরিকাঠামো শিল্পের তকমা পাওয়া। এই প্রাপ্তিযোগ ঘটলে, নির্মাণ সংস্থাগুলি সহজেই প্রকল্পের জন্য কম সুদে ঋণ পাবে। ফলে প্রকল্প থেকে লাভের টাকা ঘরে তোলার প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে।
তথ্য পরিসংখ্যানও মধ্যবিত্ত বাজারের পক্ষে সওয়াল করছে। নাইট ফ্র্যাঙ্কের সমীক্ষা বলছে, দেশ জুড়ে বিলাসবহুল ও দামি বাড়ির বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে। কলকাতায় যত দামি বাড়ি বিক্রি হয়নি, সেগুলির ক্রেতা খুঁজতে কমপক্ষে ৩১ মাস সময় লাগবে। এই মুহূর্তে কলকাতায় ৩৭,৪০০টি ফ্ল্যাট বিক্রি হয়নি। এর অধিকাংশই দামি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy