গত দু’দিনে বরং ২০০০ টাকার নোটের বদলে সোনা কেনার পরিমাণ কিছুটা কম ছিল। প্রতীকী ছবি।
রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ২০০০ টাকার নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়ার ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে গয়নার বাজারে সোনা, রুপো কেনার ব্যাপারে খোঁজখবর বাড়তে শুরু করেছে। স্বর্ণশিল্প মহলের দাবি, টানা অনুসন্ধান চলছে ফোনে। শনিবার বিভিন্ন দোকানে খুঁটিনাটি জানতে চেয়ে ভিড়ও জমিয়েছেন বহু মানুষ। তবে ওইটুকুই। সাড়ে ছয় বছর আগে নোটবন্দির পরে দামি ধাতুর বাজারে উদ্বেগের যে কেনাকাটা দেখা গিয়েছিল সেই উন্মাদনা একেবারেই নেই, রবিবার জানিয়েছে গয়না বিক্রেতাদের সংগঠন অল ইন্ডিয়া জেম অ্যান্ড জুয়েলারি ডোমেস্টিক কাউন্সিল (জিজেসি)।
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার কথা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে সোনা কিনতে ঝাঁপিয়েছিলেন বহু মানুষ। সূত্রের দাবি, গত দু’দিনে বরং ২০০০ টাকার নোটের বদলে সোনা কেনার পরিমাণ কিছুটা কম ছিল। এর প্রধান কারণ কড়া কেওয়াইসি নীতি। তবে একাংশ জানাচ্ছে, কিছু গয়নার দোকান এই সুযোগে সোনার দাম ৫% থেকে ১০% পর্যন্ত বেশি নিয়েছে। খবর, ২০০০ টাকার নোটের বদলে ১০ গ্রাম সোনা প্রায় ৬০,২০০ টাকার পরিবর্তে ৬৬,০০০ টাকায় বেচেছে অনেকে। কলকাতায় শনিবার ১০ গ্রাম খুচরো পাকা সোনার দাম ছিল ৬১,৭০০ টাকা, বাট ৬১,৪০০ টাকা। এক কেজি রুপোর দর ছিল ৭৩,২০০ টাকা।
জিজেসি-র চেয়ারম্যান সায়ম মেহরা জানান, খোঁজখবর বেড়েছে ঠিকই। তবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ২০০০-এর নোট প্রত্যাহার করতে চার মাস দিয়েছে। হাতে এতটা সময় থাকায় সোনা কেনার হুড়োহুড়ি নেই। শনিবার দোকানে ভিড় কিছুটা বেশি হয়। কিন্তু সেটাও স্থায়ী হয়নি। অনেকের হয়তো ইচ্ছে ছিল। কিন্তু কিনতে পারেননি কড়া কেওয়াইসি নিয়মের জেরে।
একাংশের অবশ্য দাবি, নোটবন্দি হয়েছিল রাতারাতি। বেআইনি ভাবে জমানো টাকা দিয়ে সোনা কেনার জন্য তাই দৌড়োদৌড়ি পড়েছিল। ২০০০ টাকা পাল্টানোর নিয়ম সোজা। গয়না কিনতে গেলে বরং প্রশ্নের মুখে পড়তে হতে পারে। আসল কারণ এটাই।
উল্লেখ্য, ১৯ মে আরবিআই বাজার থেকে ২০০০ টাকার নোট তোলার কথা ঘোষণা করেছে। জানিয়েছে, কারও হাতে ওই নোট থাকলে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া যাবে বা যে কোনও ব্যাঙ্কে গিয়ে শর্তসাপেক্ষে অন্য নোটে বদলানো যাবে। ব্যাঙ্কগুলিকেও অবিলম্বে তা দেওয়া বন্ধ করতে বলেছে তারা।
মেহরার দাবি, ‘‘সাধারণত বড় নোটনগদ লেনদেনে ব্যবহার হয়। কিন্তু গয়নায় নগদ লেনদেন সামান্য। অধিকাংশ ক্রেতা ডিজিটালে টাকা মেটান। সোনা ও গয়নার ব্যবসায় ২০০০-এর নোট ফেরানোর প্রভাব তেমন ভাবে না পড়ার সেটাও কারণ।’’
তবে কিছু গয়না বিক্রেতার এই সুযোগে বেশি দাম হাঁকার সমালোচনা করছে স্বর্ণশিল্পেরই একাংশ। পিএনজি জুয়েলার্সের সিএমডি সৌরভ গ্যাডগিলবলেন, ‘‘বেশি দামে সোনা বিক্রি করে থাকতে পারে অসংগঠিত কিছু ক্ষেত্র। সংগঠিত গয়না বিক্রেতারা এই ধরনের কাজ করেন না।’’ নেমিচাঁদ বামালয়া অ্যান্ড সন্স-এর বাছরাজ বামালয়ার দাবি, ২০০০-এর নোট দিয়ে সোমবার থেকে সোনার কেনার ঝোঁক বাড়তে পারে। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, আয়কর এবং কালো টাকা প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী কেওয়াইসি-র নিয়ম মেনেই ক্রেতাকে সোনা বিক্রি করা হয়।
শিল্পের প্রায় সকলেরই দাবি, সোনা-রুপো কেনার ঝোঁক বাড়বেই। তবে সাধারণ মানুষের হাতে ২০০০ টাকার নোটের সংখ্যা খুব কম। আর তা-ই এই ঘোষণার সঙ্গে ৫০০, ১০০০ টাকা বন্দের বড় ফারাক গড়ে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy