১০০০
৮৪
১,৬৮,০০০
২,১৬,৯২৯
* রেকারিং ডিপোজিটের সুদ ৭% ধরে। । সব হিসেব টাকায়।
কৈশোরের লগ্নি
ছোটবেলায় বলেছি হাতে আসলেই টাকা ভাঁড়ে ফেলার বা সেভিংস অ্যাকাউন্টে রাখার কথা। তেমনই কৈশোরে পা দিয়ে তৈরি করতে হবে লগ্নির মানসিকতা। অনেক সময়েই বাবা-মায়েরা মনে করেন, এই বয়সে আবার লগ্নি কী শিখবে! ফলে দেখা যায় পরে গিয়ে দায়িত্ব না-চাপলে তার অভ্যাসও তৈরি হয় না। কিন্তু শেষে গিয়ে যখন দায়িত্ব চাপে, তত দিনে অনেক দেরি হয়ে যায়।
তাই মোটামুটি ১৩ বছরের পর গিয়ে সেভিংসের থেকে আর একটু এগিয়ে ভাবতে হবে। সে জন্য খোলা যেতে পারে রেকারিং বা পিপিএফ। সেভিংসের টাকা রাখার মধ্যে দিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের বিভিন্ন পরিষেবার সঙ্গে হাতেখড়ি হয়েছে আগেই। আজকাল বেশির ভাগ ব্যাঙ্কেই ছোটদের নেট ব্যাঙ্কিং বা কার্ড ব্যবহারেরও অনুমতি দেওয়া হয়। ফলে সেগুলিতে সড়গড় হওয়া যাবে। এ বার ওই নেট ব্যাঙ্কিংয়েই খুলে দিন রেকারিং। মোটামুটি নবম-দশম শ্রেণিতে গিয়ে পুজোর সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়ার টাকাটা জোগাড় হয়ে যাবে সেখান থেকেই। আবার হাতে টাকা এলেই খরচ করে ফেলার প্রবণতা কমবে। উৎসাহ তৈরি হবে জমানোয়।
কলেজে পা দিয়ে
এখন বহু ছেলেমেয়েই হাতখরচ বাবদ প্রতি মাসে বাবা-মায়ের কাছ থেকে ভাল টাকা পায়। অনেকে আবার নিজে পড়া চালানোর সঙ্গেই টিউশনি করে বা আংশিক সময়ে কাজ করে টাকা রোজগার করে। টাকা হাতে আসে আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকেও। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তার প্রায় পুরোটা খরচ হয়ে যায়। কিন্তু সেই টাকা থেকেই কিছুটা করে সরিয়ে রাখলে বড় তহবিল তৈরি করা সম্ভব। তখন হয়তো দেখা যাবে, পড়ার সময়ে ফটোকপি করা বা বই কেনার জন্য বাবা-মাকে বলতে হচ্ছে না। তেমনই পুজো, বেড়াতে যাওয়ার সময়ে করা যাচ্ছে হাত খুলে খরচও। আবার চাইলে কয়েক বছর ধরে জমিয়ে কেনা যাবে দামি জিনিসও।
যেমন ধরুন, কেউ ১৭-১৮ বছর বয়স থেকে ব্যাঙ্কে বা ডাকঘরে মাসে ৫০০ টাকা করে জমাতে শুরু করলেন। এ ভাবে বছরে জমবে ৬,০০০ টাকা (সুদ বাদে)। পাঁচ বছর জমাতে পারলে তা দাঁড়াবে ৩০,০০০ টাকায়। ওই টাকার সঙ্গে সুদ ও নিজের আর কিছু টাকা যোগ করলে বেশি ভাল একটা ল্যাপটপ কেনা সম্ভব। আর যদি মাসে হাতে আসার টাকার মধ্যে ৫০০ টাকার বদলে ১,০০০ রাখা যায়, তা হলে দ্বিগুণ টাকা হাতে আসবে। যা দিয়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে বেরিয়ে আসাও যাবে। বাবা-মায়ের উপরেও চাপ তৈরি হবে না। আবার নিজে কিছু করার আনন্দও আসবে।
গৃহবধূর সঞ্চয়
এতো গেল না-হয় ছোটদের সঞ্চয়ের কথা। কিন্তু তাদের সেই অভ্যাস যিনি তৈরি করবেন, সেই মায়েরাও হাতে আসা অল্প টাকা দিয়েই গড়ে তুলতে পারেন তহবিল। হাতখরচ, উপহার হিসেবে পাওয়া টাকা বা সংসার খরচ থেকে বাঁচানো সম্বলটুকুই তাঁদের ছোট শখ-আহ্লাদ মেটানোর চাবিকাঠি। যার জোরে প্রতিটি ছোটখাটো প্রয়োজনে বারবার হাত পাতার দরকার পড়ে না। ছোটবেলা থেকে সঞ্চয়ের অভ্যেস থাকলে তো কথাই নেই। তা হলে আপনি জানেন কোথায় কী ভাবে টাকা রাখা যায়। কিন্তু না-জানলে এখনও সময় রয়েছে। এ বারের পুজোয় হবে
না। কিন্তু পুজোর পরেই তৈরি করতে হবে নিজেকে। এ জন্য—
• প্রথমেই সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। কারণ বাড়িতে টাকা রাখাই যায়, কিন্তু তাতে সুদ মেলে না। আবার তা খরচও হয়ে যায়।
• হাতে বাড়তি টাকা থাকলেই তা জমা করে দিতে হবে ওই অ্যাকাউন্টে।
• দেখে নিন কোন খরচ কমাতে পারলে মাসের শেষে কিছু টাকা বাঁচানো যাবে।
• প্রতি মাসেই যে সংসার খরচের পরে একই টাকা থাকবে, তা নয়। কিন্তু যদি হাতখরচ পান, তার অন্তত ১০%-২০% নিয়মিত জমানোর ব্যবস্থা করুন। খুলতে পারেন ৩-৫ বছরের রেকারিং। এমনিতে রেকারিংয়ে প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অঙ্ক জমাতে হয়। তবে অনেক ব্যাঙ্কে এখন বিভিন্ন অঙ্ক জমার ব্যবস্থাও থাকে। অর্থাৎ, চাইলে এক মাসে সেখানে ৫০০ টাকা দিলেন। কিন্তু পরের মাসে ১,০০০ টাকা দিতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে প্রথমে যে টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, প্রতি মাসে অন্তত সেই টাকা দিতেই হয়। তাই শুরুতেই খুব বেশি টাকা দিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলবেন না। পরে হাতে টাকা না-থাকলে সমস্যা হতে পারে।
• আর যদি সাধারণত রেকারিং খোলেন, তা হলে সেভিংস থেকেই টাকা কেটে নেওয়ার ব্যবস্থাও করতে পারেন। এতে ব্যাঙ্কে গিয়ে টাকা জমার ঝক্কি কমবে। আজকাল প্রায় সকলেই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন। সেখানেই অ্যাপ বা নেট ব্যাঙ্কিং শিখে নিতে পারলে ব্যাঙ্কে দৌড়তে হবে না।
• আর একটু বড় মেয়াদে জমানোর কথা ভাবলে মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি করতে পারেন। খুব কম মেয়াদের জন্য এই পথে হাঁটবেন না।
• অনেক গৃহবধূরই লগ্নি, ব্যাঙ্কের কাজকর্ম নিয়ে সে ভাবে জ্ঞান থাকে না। এই সুযোগে তা-ও জেনে যাবেন। তা পরে নিজের তো কাজে লাগবেই, বাচ্চাকেও শেখাতে পারবেন।
খরচে রাশ
উপরের বলা কথাগুলি তখনই ফল দেবে যদি খরচে রাশ টানা যায়। হাতে টাকা এলেই, আমার কোনও দায়-দায়িত্ব নেই ভেবে দেদার খরচা করে ফেললাম, এই ধরনের মানসিকতার পরিবর্তন করা দরকার। গৃহবধূদের তা-ও কিছুটা জমানোর প্রবণতা থাকে, কিন্তু স্কুল-কলেজে পড়ার সময়ে টাকা সরিয়ে রাখার কথা ভাবতে প্রায় কেউ-ই চায় না। তখন নজর থাকে দামি মোবাইল, বাইরে খাওয়া, ব্র্যান্ডেড জামাকাপড়ের দিকে। অথচ, কিছু ক্ষেত্রে মিতব্যয়ী হলে মন্দ নয়! হাতে টাকা এলে নিশ্চয় শখ-আহ্লাদ মেটাতে তা খরচ করবেন। কিন্তু তাতে খানিকটা লাগাম থাকাই ভাল।
উপরি পাওনা
উপরে বলা সাইকেলের জন্য কথা সঞ্চয়ের হাতেখড়ির একটা উদাহরণ মাত্র! কিন্তু বড় হয়ে চাকরি জীবন শুরুর পরে ছোটবেলার সেই ভাঁড়ে টাকা জমানোর অভ্যাসই পরবর্তী জীবনের পাথেয় হবে। বাজে খরচ করার প্রবণতা কমবে। বরং হাতে অতিরিক্ত টাকা এলেই তা জমিয়ে রাখতে ইচ্ছে করবে। আর প্রতি পদক্ষেপে জমানো সেই টাকাই দেখা যাবে কোনও প্রয়োজনে বা বিপদে কাজ লাগছে। তাই প্রথমে খুব বেশি টাকা নিয়মিত লগ্নি করা হয়তো হবে না, কিন্তু সেটা শুরু করা উচিত। অন্তত নিজের শখ পূরণের জন্য হলেও।
লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ
(মতামত ব্যক্তিগত)