এক-দেড় মাস ধরে দেশ জুড়ে দাপট বেড়েছে অতিমারির। এই সঙ্কটের মধ্যে পেট্রল-ডিজেলের দর বাড়তে থাকায় চড়ছে মানুষের ক্ষোভের আঁচও। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আগে দেশে দর বৃদ্ধির জন্য বিশ্ব বাজারের অশোধিত তেলের দামকেই দায়ী করেছিলেন। অথচ সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, এরই মধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে অশোধিত তেলের দর কমেছে ৪ ডলারেরও বেশি। কিন্তু দেশে তেলের দরে তার কোনও প্রতিফলন দেখা যায়নি। মোদী সরকারও তা নিয়ে উচ্চবাচ্যও করছে না। এরই মধ্যে উল্টে রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়ে চলেছে পেট্রল-ডিজেলের দাম। রবিবারও ফের দুই জ্বালানির দাম বেড়েছে। তাই প্রশ্ন উঠছে, করোনায় যখন কাজকর্মে নিয়ন্ত্রণের জেরে আমজনতার বড় অংশের পকেটে টান পড়ছে, তখন কেন দাম কমিয়ে সেই সুবিধা দিল না কেন্দ্র বা তেল সংস্থাগুলি?
দেশে জ্বালানির বেশি দামের কথা উঠলেই বিশ্ব বাজারের দরের প্রসঙ্গ বারবার টেনে আনতে দেখা যায় তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান ও অন্যান্য নেতা-মন্ত্রীদের। যুক্তি দেন, তেল রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেক ভারতের দিকটা ভেবে দেখে না। যে কারণে অন্য দেশ থেকে সস্তায় তেল কেনার কথা ভাবতে হচ্ছে ভারতকে। অথচ দেখতে গেলে গত ক’মাসে অশোধিত তেলের দর খুব বেশি ওঠাপড়া করেনি। গত ২৯ মার্চ ও ২১ এপ্রিল ব্রেন্ট ক্রুডের দর ব্যারেলে ৬৫ ডলারের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করেছে। ৪ এবং ১২ মে তা ছিল ৬৯ ডলার। ১৭ তারিখ তা আরও বেড়ে হয় ৬৯.৬০ ডলার। ২০ মে কমে দাঁড়ায় ৬৫.০৫ ডলারে। এখন তা ৬৬ ডলারের সামান্য বেশি। কিন্তু সেই সুবিধা মানুষের কাছে কেন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়ে চুপ তাঁরা।
বিরোধীরা বারবার মনে করাচ্ছেন, ২০১৪ সালে ইউপিএ জমানায় অশোধিত তেল ১০৮ ডলার পর্যন্তও উঠেছিল। কিন্তু তখন দেশে দাম এত বেশি ছিল না। কিন্তু পাঁচ রাজ্যে ভোট পর্ব মেটার পর থেকে এখন পেট্রল সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে। অনেক জায়গাতেই ডিজেল ছাড়িয়েছে ৯০ টাকা। কলকাতায় আজ ইন্ডিয়ান অয়েলের পাম্পে লিটারে ১৬ পয়সা বেড়ে পেট্রল বিক্রি হচ্ছে ৯৩.২৭ টাকায়। ২৭ পয়সা দামি হয়ে ডিজেলের দর পড়ছে ৮৬.৯১ টাকা। যদিও এর মাঝে অশোধিত তেলের দর সামান্য যেমন বেড়েছে, তেমনই কমেছে বেশি হারে।
তার উপরে করোনাকালে তেলের চাহিদা কমছে। যার জেরে ইতিমধ্যেই মার্চের চেয়ে এপ্রিলে সংস্থাগুলি ১.২% তেল শোধন কমিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বিভিন্ন রাজ্যে কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য শোধনাগারগুলি পূর্ণ ক্ষমতায় চলছে না। তাদের অর্ধেক ক্ষমতা পর্যন্ত কাজের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এতে সংস্থাগুলির খরচ কমায় লাভ হলেও, আমজনতার সুরাহা কিসে হবে, তার জবাব মেলেনি এখনও।