Advertisement
E-Paper

রাজনের চিন্তা লগ্নিতে ভাটা, আস্থা বিদেশি বিনিয়োগে

সুদ কমেছে। সংস্কারের রাস্তায় অটল থাকার প্রতিশ্রুতিও বারবার দিয়ে চলেছে কেন্দ্র। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজছে না। ভাটার টান সেই রয়েই যাচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগে।

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৫ ০২:১৭

সুদ কমেছে। সংস্কারের রাস্তায় অটল থাকার প্রতিশ্রুতিও বারবার দিয়ে চলেছে কেন্দ্র। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভিজছে না। ভাটার টান সেই রয়েই যাচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগে। আর লগ্নিতে এই ভাটাই বৃদ্ধির চাকায় গতি বাড়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন। তবে তাঁর আশা, আগামী দিনে এই সমস্যার সমাধান আসতে পারে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি আর পরিকাঠামো উন্নয়নে জোর দেওয়ার হাত ধরে।

শুক্রবার হংকংয়ে এক অনুষ্ঠানে রাজন বলেন, ‘‘বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুশ্চিন্তার সব থেকে বড় কারণ শ্লথ লগ্নি। বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ার লক্ষণ নেই। বরং তা বেশ কিছুটা কমেছে। একই দশা সরকারি লগ্নিরও।’’ অর্থাৎ, বিনিয়োগের বটুয়া আলগা করতে এ দেশের কর্পোরেট মহলের দ্বিধা আর্থিক বৃদ্ধির হার আরও উপরে নিয়ে যাওয়ার পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

দীর্ঘ দিন ধরে রাজনের কাছে শিল্পমহলের দাবি ছিল, অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরাতে সুদ কমান তিনি। তাতে মূলধন জোগাড়ের খরচ কমবে। কল-কারখানা গড়তে কিংবা বিভিন্ন প্রকল্প সম্প্রসারণে টাকা ঢালতে উৎসাহিত হবে সংস্থাগুলি। কিন্তু গত ঋণনীতিতে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সুদের হার এক ধাক্কায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে দেওয়ার পরেও বেসরকারি লগ্নিতে জোয়ার আসেনি।

অনেকে বলছেন, সুদ কমেছে ঠিকই। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ টানার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে জমি-জট। জমি অধিগ্রহণ বিল সংসদে আটকে যাওয়ায়, আপাতত এই বিষয়ে নতুন আইন তৈরি হওয়া বিশ বাঁও জলে। ফলে শিল্পমহলও ধোঁয়াশায় যে, প্রকল্প পরিকল্পনার পরে জমি না-পেলে, টাকা তাঁরা ঢালবেন কোথায়? তার উপর আজ দীর্ঘ দিন ধরে তীরে এসে তরী আটকে আছে পণ্য-পরিষেবা কর (জিএসটি) বিলের। অনেকেই মনে করেন, এই বিল পাশ হলে লগ্নির ঝাঁপি উপুড় করতে তৈরি হবে অনেক সংস্থাই। বিশেষত ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলি।

তবে চিন্তার এই কারণ তুলে ধরার পাশাপাশি আশার কথাও শুনিয়েছেন শীর্ষ ব্যাঙ্কের কর্ণধার। তাঁর মতে, ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের অঙ্ক বৃদ্ধি এবং পরিকাঠামো উন্নয়নে কেন্দ্রের জোরই লগ্নি-সমস্যার সমাধান করতে পারে। কারণ, তাতে অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়বে। ফলে ওই দু’য়ের হাত ধরে ফের বিনিয়োগ বাড়াতে উৎসাহিত হবে বেসরকারি সংস্থাগুলি। উল্লেখ্য, জানুয়ারি থেকে জুন— এই ছ’মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ভারতে বিদেশি লগ্নি বেড়েছে ৩০%। পৌঁছেছে ১,৯৪০ কোটি ডলারে। এ দিন রাজনও বলেছেন, শুধু মৌখিক প্রতিশ্রুতিতে আটকে না থেকে সত্যিই বিদেশি বিনিয়োগ আসছে ভারতে।

বৃদ্ধির গতি বাড়াতে বিদেশি লগ্নি আর সংস্কার যে তুরুপের তাস, তা বারবার বলেছে কেন্দ্রও। এমনকী চলতি সপ্তাহেই দুবাইয়ে গিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানিয়েছিলেন, অর্থনীতিকে ১০% বৃদ্ধির কক্ষপথে নিয়ে যেতে ওই দুই অস্ত্রেই শান দেবেন তাঁরা। দাবি করেছিলেন, ভারতের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের লগ্নি করতে চলেছে পশ্চিম এশিয়ার সভরেন ওয়েলথ্‌ ফান্ডগুলি (আর্থিক তহবিল)।

ভারতে পরিকাঠামোয় টাকা ঢালাকে আকর্ষণীয় করতে জাতীয় পরিকাঠামো ও লগ্নি তহবিল গড়েছে কেন্দ্র। সরকারের দাবি, ২০ হাজার কোটি টাকার ওই তহবিলের মাধ্যমে সহজে বিনিয়োগ করা যায় বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্পে। যেখানে ৫১% অংশীদারি বিদেশি বা বেসরকারি সংস্থার হাতে থাকে। আর বাকি ৪৯% থাকে কেন্দ্রের হাতে। ওই তহবিলে লগ্নি টানতে মোদী সরকার মরিয়া। কারণ তারা মনে করে, পরিকাঠামোয় বিপুল লগ্নির হাত ধরেই পুরোদমে চাকা ঘুরতে শুরু করবে অর্থনীতির। বিদেশি লগ্নি টানতে সম্প্রতি এক বারে ১৫টি ক্ষেত্রে তার পথ প্রশস্তও করেছে তারা।

হংকঙে রাজনের কথাতেও স্পষ্ট যে, অর্থনীতির ই়ঞ্জিনে জ্বালানি জোগাতে বিপুল বিদেশি বিনিয়োগ, পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং তার জন্য সরকারি উদ্যোগকেই লগ্নি-সমস্যার সমাধান বলে মনে করছেন তিনি।

raghuram rajan rbi governor drop public private investment
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy