শ্লথ বিশ্ব অর্থনীতি এবং আমেরিকার শুল্ক নীতির জেরে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি অনিশ্চিত। কিন্তু তার মধ্যেও গত এপ্রিল-জুনে ভারতীয় অর্থনীতি পোক্ত ছিল বলে সোমবার অর্থনীতি সংক্রান্ত মাসিক রিপোর্টে দাবি করেছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। অথচ এ দিনই মোদী সরকারের জাতীয় পরিসংখ্যান দফতরের দেওয়া হিসাবে সামনে এল উল্টো ছবি। দেখা গেল, গত মাসে দেশে শিল্পের উৎপাদন বেড়েছে বটে। তবে তার বৃদ্ধির হার আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নেমে গিয়েছে ১.৫ শতাংশে। যা ১০ মাসে সর্বনিম্ন। মন্থর এপ্রিল-জুন ত্রৈমাসিকে শিল্পবৃদ্ধির হারও। গত বছর যা ছিল ৫.৪%, তা-ই এ বার নেমেছে ২ শতাংশে। যা ১১টি ত্রৈমাসিক অর্থাৎ ৩৩ মাসের তলানিতে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, অর্থনীতি নিয়ে মোদী সরকারের দাবিকেই কার্যত প্রশ্নের মুখে ফেলেছে এই পরিসংখ্যান।
রিপোর্টে অর্থ মন্ত্রক বলেছে, মাথা নামানো মূল্যবৃদ্ধি এবং ভাল বর্ষার হাত ধরে ভারতীয় অর্থনীতি দৃঢ় পদক্ষেপে চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) পা রেখেছে। কিন্তু একাংশের বক্তব্য, চাহিদা এবং আর্থিক কর্মকাণ্ড বাড়লে শিল্পবৃদ্ধির হার এতটা নামত না। শিল্পোৎপাদনের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, খনন এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের উৎপাদন কমে যাওয়াই মূলত সার্বিক হারকে টেনে নামিয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত যার অন্যতম কারণ। বিশেষত জুনের দ্বিতীয়ার্ধে জলের জন্যই পণ্ড হয়েছে খনন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজ। গত বছর জুনে শিল্পবৃদ্ধির হার ছিল ৪.৯% আর গত মে মাসে তা থমকায় ১.৯ শতাংশে (সংশোধিত)।
জুনে কল-কারখানায় উৎপাদন অবশ্য আগের বছরের ৩.৫% থেকে সামান্য বেড়ে হয়েছে ৩.৯%। তবে অনেকেই মনে করাচ্ছেন, কর্মসংস্থান বাড়াতে, বাজারে চাহিদায় গতি আনতে এবং আর্থিক বৃদ্ধির হারকে ঠেলে তুলতে উৎপাদনের চাকা আরও দ্রুত গড়ানো দরকার। অর্থনীতিবিদ অজিতাভ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘খনন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন কমায় ধাক্কা খেতে পারে সিমেন্ট, ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ইত্যাদি ক্ষেত্রও। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে উন্নতির জন্য যেগুলি গুরুত্বপূর্ণ।’’
শিল্পের একাংশের বক্তব্য, সমস্যা স্বীকার না করলে সমাধান বেরোবে না। দেশের অর্থনীতি যে ফের ঝিমিয়ে পড়ছে, সেটা স্পষ্ট। অর্থ মন্ত্রকের রিপোর্টে অবশ্য ঋণ বৃদ্ধি শ্লথ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এটাও বলা হয়েছে, বিশ্ব অর্থনীতির ঢিমে গতি, বিশেষত আমেরিকার পরিস্থিতি (যা গত জানুয়ারি-মার্চে ০.৫% সঙ্কুচিত) এ দেশের রফতানির চাহিদা কমাতে পারে। শুল্ক নিয়ে অনিশ্চয়তা বাণিজ্যে তো ঝুঁকি তৈরি করছেই। শ্লথ ঋণ বৃদ্ধির হার এবং লগ্নি এ দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হারকেও কমিয়ে দিতে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)