আদানিদের শেয়ারে লগ্নি করা মরিশাসের কিছু তহবিলের বিরুদ্ধে ভুয়ো সংস্থা হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল আগেই। আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী হিন্ডেনবার্গ গৌতম আদানির সংস্থাগুলির শেয়ারেরদাম কারচুপি করে বাড়ানো হয়েছে বলে রিপোর্ট আনার পরে সেই সন্দেহ আরও দানা বাঁধে। কিন্তু ভারতের বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি এখনও কেন মরিশাস ভিত্তিক ওই তহবিলগুলির প্রকৃত মালিকানা খুঁজে বার করতে পারেনি, রবিবার সেই প্রশ্ন তুললেন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। এ ক্ষেত্রে তাদের তদন্তকারী সংস্থাগুলির সাহায্য প্রয়োজন কি না, সেটাও জানতে চেয়েছেন তিনি।
তবে শুধু এখানেই থেমে থাকেননি রাজন। এক প্রশ্নের উত্তরে চাঁছাছোলা ভাষায় বলেছেন, বেসরকারি ব্যবসা ও পারিবারিক সংস্থাগুলিকে অবশ্যই উৎসাহ দেওয়া উচিত। তবে তারা যেন সকলের জন্য সমান প্রতিযোগিতার জমি কেড়ে মহা শক্তিধর না হয়ে ওঠে, সেটা খেয়াল রাখা দরকার। আদানি গোষ্ঠীর নাম না করলেও, সরকারের সঙ্গে শিল্প গোষ্ঠীর দহরম-মহরম নিয়ে আপত্তি তুলেছেন সরাসরিই।
আদানিদের বিরুদ্ধে বেআইনি আর্থিক লেনদেন এবং কৃত্রিম ভাবে শেয়ারের দাম বাড়ানোর অভিযোগ সামনে আসের পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠতা নিয়ে নিয়মিত কটাক্ষ করছে বিরোধীরা। আজ রাজন বলেন, নীতিপ্রণেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সূত্রে কোনও একটি ব্যবসায়িক পরিবারের বাড়তি সুবিধা পাওয়ার প্রবণতা দেশের পক্ষে ভাল নয়।
আদানি কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পরে প্রশ্ন উঠেছে, বেসরকারি পারিবারিক সংস্থাগুলির উপরে নজরদারি বাড়াতে কেন্দ্রের কী পদক্ষেপ করা উচিত? প্রাক্তন গভর্নরের বক্তব্য, ‘‘এই বিষয়টি সংস্থার পরিচালনায় নজরদারির নয়। বরং সরকার এবং শিল্পের মধ্যে অস্বচ্ছ যোগাযোগ কমানো নিয়ে এবং নিয়ন্ত্রকগুলিকে নিজেদের কাজ ঠিক মতো করায় উৎসাহ দেওয়ার।’’ তাঁর বার্তা, ‘‘প্রতিটি সংস্থাকে বৃদ্ধির সুযোগ করে দিতে হবে দক্ষতা অনুযায়ী, কারও সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে নয়।’’
এ দিকে শেয়ার দরে পতনের মধ্যেই আদানির সংস্থাগুলির চিন্তা বাড়াচ্ছে ঋণ শোধের চাপ। ২০১৯ সালের ১.১১ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে যা পৌঁছেছে ২.২১ লক্ষ কোটিতে। সম্প্রতি বিদেশে রোড শো-তে সংস্থালগ্নিকারীদের জানিয়েছে, ২০২৪-এ ফেরত দিতে হবে প্রায় ২০০ কোটি ডলার (প্রায় ১৬,৫০০ কোটি টাকা)।
হিসাব বলছে, ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০২২ পর্যন্ত আদানিরা বিদেশি মুদ্রায় ১০০০ কোটি ডলারের (প্রায় ৮২,৫০০ কোটি টাকা) বেশি ঋণ নিয়েছে। গত বছর ১১৫ কোটির বন্ডের মেয়াদ শেষ হয়েছে। আর পরের বছরে আদানি পোর্টস অ্যান্ড এসইজ়েডের ৬৫ কোটি, আদানি গ্রিন এনার্জির ৭৫ কোটি এবং ৫০ কোটি ডলারের বন্ডের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)