Advertisement
E-Paper

অভিমানে নীলকণ্ঠ, তবু প্রশ্নে নীরবতাই

স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্ণধাররা। কিন্তু এই শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত পোড় খাওয়া পেশাদাররা বলছেন, নিঃসন্দেহে উর্জিতের এই নীরবতা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত বিভিন্ন দিক থেকে ধেয়ে আসা অভিযোগের জবাব দিতেই।

প্রজ্ঞানন্দ চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৮ ০২:৩৪
উর্জিত পটেল

উর্জিত পটেল

কতটা ক্ষোভ জমলে তবে সরব হওয়া যায়?

‘স্বচ্ছ ব্যাঙ্ক’ অভিযানে যদি তাঁদের নীলকণ্ঠও হতে হয়, তবে তাঁরা সেই বিষ পানে রাজি! বুধবার উর্জিত পটেলের এই মন্তব্যে তোলপাড় ব্যাঙ্কিং শিল্প। তুফান চায়ের কাপে। সর্বত্র ঘুরপাক খাচ্ছে প্রশ্ন, তবে কি নিখাদ অভিমানেই ওই কথা বললেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর? নইলে কেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের উপর তাঁদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ না থাকার কথা অত বিশদে ব্যাখ্যা করলেন তিনি? বোঝালেন, যে নজরদারিতে ঢিলেমির জন্য অভিযোগের আঙুল উঠছে, আসলে তার সমস্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ারই নেই তাঁদের!

স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে মুখ খুলতে চাননি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্ণধাররা। কিন্তু এই শিল্পের সঙ্গে দীর্ঘ দিন যুক্ত পোড় খাওয়া পেশাদাররা বলছেন, নিঃসন্দেহে উর্জিতের এই নীরবতা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত বিভিন্ন দিক থেকে ধেয়ে আসা অভিযোগের জবাব দিতেই। কিন্তু তাঁদের অনেকের মতে, ‘‘দেরি হয়ে গেল। অনেক আগেই মুখ খোলা উচিত ছিল গভর্নরের।’’ একই সঙ্গে তাঁরা মনে করছেন, যা-ই বলুন, নীরব কেলেঙ্কারির দায় পুরোপুরি এড়াতে পারেন না উর্জিত।

সকলেই জানেন যে, উর্জিত অনেক বিষয়েই পূর্বসূরি রঘুরাম রাজনের উল্টো। রাজন ছিলেন সংবাদমাধ্যমের সামনে যে কোনও বিষয়ে কথা বলতে স্বচ্ছন্দ। ঠোঁটকাটা, চাঁছাছোলা যুক্তিতে বিশ্বাসী। সেখানে ঋণনীতি ছাড়া প্রায় কখনও উর্জিত সে ভাবে সাংবাদিকদের সামনে আসেন না। কথা বলেন কম। বিতর্কিত মন্তব্য থেকে সাধারণত তিনি শত হাত দূরে। এমনকী সরকারি কাজেও চূড়ান্ত গোপনীয়তায় বিশ্বাসী। শোনা যায়, অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার সময়ে তাঁর সহকর্মীরাও না কি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জানতে পারেন না যে, কোন উড়ানে দিল্লি যাবেন। এ হেন উর্জিতের বিস্ফোরক মন্তব্যে তাই দানা বেঁধেছে জল্পনা। অনেকে বলছেন, নোটবন্দির সময়েও যিনি সে ভাবে মুখ খোলেননি, তাঁর এই ভাষায় বয়ান তাৎপর্যপূর্ণ তো বটেই।

তিনি যে ক্ষুব্ধ এবং কেন নীলকণ্ঠ হতে রাজি, বক্তৃতায় অবশ্য তা নিয়ে কোনও রাখঢাক করেননি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই প্রাক্তনী। স্পষ্ট বলেছেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সিংহভাগ অংশীদারি কেন্দ্রের পকেটে। আইন অনুযায়ী, নিয়ন্ত্রণের অধিকারও তাদের। বেসরকারি ব্যাঙ্কে গণ্ডগোল দেখলে যে ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের রয়েছে, তা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের বেলায় নেই। কোনও ডিরেক্টরকে সরানোর এক্তিয়ার নেই। দু’টি ব্যাঙ্ককে মিশতে বাধ্য করার সাধ্য নেই। এমনকী পরিচালন পর্ষদ ভেঙে দেওয়া কিংবা ব্যাঙ্কের লাইসেন্স কেড়ে নেওয়ারও ক্ষমতা নেই।

অনেকে বলছেন, এ ভাবে ঢাল- তলোয়ার ছাড়া যুদ্ধ জিততে না পারার কথা ওঠাতেই ফোঁস করেছেন উর্জিত। অভিমানে বলেছেন, ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে স্বচ্ছ করতে সব গালি হজম করতে তাঁরা রাজি। তৈরি নীলকণ্ঠ হতেও। সেই সঙ্গে অবশ্য নজরদারিতে ব্যাঙ্কগুলির নিজেদের গাফিলতির দিকেও আঙুল তুলেছেন তিনি।

কিন্তু একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি বলছেন, ‘‘শেষ পর্যন্ত মুখ খুললেন। কিন্তু অনেক আগেই তা করা উচিত ছিল।’’ উল্লেখ্য, নোটবন্দি নিয়ে তিনি মুখে কুলুপ এঁটে থাকায় প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। ওই প্রাক্তন কর্তার মতে, সরকার যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে প্রভাব খাটায় ও পরিচালনায় নাক গলায়, তাতে সন্দেহ নেই। এ-ও ঠিক যে, সেখানে শীর্ষ ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণ কম। কিন্তু তা বলে ঢিলে নজরদারির দায় তারা এড়াতে পারে না। তা ছাড়া, পিএনবি-তে বিদেশি মুদ্রার লেনদেন তাদের চোখ এড়াল কী করে? কেন্দ্র তো সেখানে মাথা গলায় না। ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্‌জিকিউটিভ ডিরেক্টর বি কে দত্তের প্রশ্ন, প্রতি ব্যাঙ্কে আরবিআই বছরে দু’বার খতিয়ে দেখে। তা হলে সেখানে প্রতারণা ধরা পড়ল না কেন?

ইউনাইটেড ব্যাঙ্কের প্রাক্তন সিএমডি ভাস্কর সেনের বক্তব্য, ব্যাঙ্ক পরিচালনার বিষয়ে নজরদারির দায়িত্ব রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। সেখানে কোনও ত্রুটি ধরা পড়লে, তারা যেমন নিজেরা ব্যবস্থা নিতে পারে, তেমনই সরকারের নজরেও তা আনতে পারে। তা হলে দায় এড়ানো যাবে কী ভাবে?

উর্জিত বলেছিলেন, ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র এ ভাবে অনিয়মের শিকার হলে রাগ হয়, যন্ত্রণা হয়। আহত বোধ করেন তাঁরা। ব্যাঙ্কিং শিল্প তা মানছে। কেন্দ্র যে ভাবে দায় ঝেড়ে ফেলতে চাইছে, তা-ও সমর্থন করছেন না বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু তা বলে সব দায় থেকে শীর্ষ ব্যাঙ্ককে রেহাই দিতেও নারাজ তাঁরা। তা সে উর্জিত যত অভিমানীই হোন।

Urjit Patel RBI Governor PNB Nirav Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy