ফাইল চিত্র।
রাজস্ব আয় ঠেকেছে তলানিতে। অথচ করোনার আবহে খরচ বাড়ছে লাফিয়ে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রকে ভরসা দিতে সেই ডিভিডেন্ডের ঝাঁপি নিয়েই পাশে দাঁড়াল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বিপজ্জনক হারে চওড়া হতে থাকা রাজকোষ ঘাটতি মেরামত করতে সরকারকে ২০১৯-২০ সালের জন্য ৫৭,১২৮ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল তারা। যদিও অর্থনীতির অবস্থা এবং ঘাটতির অঙ্ক যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে এই টাকা পেয়েও ভরাডুবি সামলানো যাবে না বলেই আশঙ্কা খোদ অর্থ মন্ত্রকের আধিকারিকদের একাংশের।
শুক্রবার আরবিআইয়ের পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সারা বছরের খরচ মিটিয়ে অতিরিক্ত যে টাকা হাতে আছে তা থেকেই ৫৭,১২৮ কোটি কেন্দ্রকে দেওয়া হবে। আর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ব্যালান্সশিটে উল্লিখিত মোট আর্থিক সম্পদের ৫.৫% আপৎকালীন খরচের ঝুঁকি সামলানোর (কনটিনজেন্সি রিস্ক বাফার) জন্য হাতে রাখবে তারা। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে কেন্দ্র ডিভিডেন্ড হিসেবে পেয়েছিল ১.২৩ লক্ষ কোটি।
ডিভিডেন্ড মেটানোর পরেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তহবিলের অতিরিক্ত টাকা তাদের হাতে তুলে দিতে চাপ দেওয়া নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল এর আগে। তা নিয়ে এক সময় যথেষ্ট জলঘোলা হয়। বিরোধীদের তোপের মুখেও পড়ে কেন্দ্র। অভিযোগ ওঠে শীর্ষ ব্যাঙ্কের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের। অনেকের মতে, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সিন্দুক থেকে বাড়তি অর্থের জন্য চাপই কেন্দ্রের সঙ্গে প্রাক্তন গভর্নর উর্জিত পটেলের বিরোধের অন্যতম কারণ। তার পরই ওই পদে আসেন প্রাক্তন আর্থিক বিষয়ক সচিব ও নোটবন্দির পরে পরিস্থিতি সামলানো শক্তিকান্ত দাস। পরবর্তী কালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডিভিডেন্ড ও উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারকে দেওয়ার প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের সামনে মাথা নোয়ানো নিয়ে প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয়েছে তাঁকে। তবে শেষে শীর্ষ ব্যাঙ্কের তহবিলের ভাগ দেওয়া নিয়ে স্থায়ী ব্যবস্থা তৈরি হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালানের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ মেনেই।
২০২০-২১ সালের বাজেট পেশের সময় রাজকোষ ঘাটতি মেটানোর জন্য আর্থিক সংস্থানের যে সব সূত্রের কথা উল্লেখ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন, তার অন্যতম ছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৬০,০০০ কোটির ডিভিডেন্ড। কিন্তু বর্তমান আর্থিক সঙ্কটের সময়ে তার থেকেও বেশি টাকা শীর্ষ ব্যঙ্ক দেবে বলে আশা ছিল সরকারি আধিকারিকদের। আরবিআই পর্ষদের এ দিনের বৈঠকে অবশ্য তার আভাস মেলেনি। তবে একাংশের দাবি, কোভিড সমস্যার মোকাবিলায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কও আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করেছে। ফলে খরচ বেড়েছে তাদেরও।
এ দিনের বৈঠকে করোনাজনিত আর্থিক সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কথা বলেছে, দেশ ও আন্তর্জাতিক আর্থিক ক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জগুলির পাশাপাশি কেন্দ্র ও তাদের করা পদক্ষেপগুলি নিয়েও।
ইতিমধ্যেই যা আভাস মিলেছে, তাতে গত চার দশকের মধ্যে চলতি অর্থবর্ষে প্রথম দেশের জিডিপি শূন্যের নীচে নামতে চলেছে। খোদ শীর্ষ ব্যাঙ্ক সঙ্কোচনের ইঙ্গিত দিয়েছে। সরকারের রাজস্ব আয় কমছে। অথচ করোনা যুঝতে গিয়ে পুরো অর্থবর্ষে রাজকোষ ঘাটতি যা হবে বলে অনুমান, প্রথম ৬ মাসেই তার ৮৩.২ শতাংশে পৌঁছেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy