গত ৬ জুন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আশাতীতভাবে রেপো রেট (যে সুদে আরবিআই ব্যাঙ্কগুলিকে ঋণ দেয়) ৫০ বেসিস পয়েন্ট ছাঁটাই করেছিল। মাত্র চার মাসে মোট ১০০ পয়েন্ট কমানোর পরে বলেছিল, আপাতত সুদ ছাঁটাই শেষ। কিন্তু আগামী দিনেও তার আশা জিইয়ে রাখল মে মাসে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার। যা নেমেছে ২.৮২ শতাংশে, ৭৫ মাসে সর্বনিম্ন। ফলে আগস্টে না হলেও অক্টোবর বা ডিসেম্বরে আরবিআই আরও সুদ কমাতে পারে।
রেপো ১০০ বেসিস পয়েন্ট নামায় সুদের হার কমছে ঋণ এবং জমা, দু’ক্ষেত্রেই। ঋণগ্রহীতারা উপকৃত হচ্ছেন। কিন্তু বিপাকে সুদনির্ভর সাধারণ মানুষ। গত কয়েক দিনে ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলি (এনবিএফসি) আমানতে সুদ বেশ খানিকটা করে কমিয়েছে। আশঙ্কা, জুলাই থেকে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিও সেই পথে হাঁটবে।
স্টেট ব্যাঙ্কে জমা টাকায় সর্বাধিক সুদের হার নেমেছে ৬.৭ শতাংশে (প্রবীণদের ৭.৩%)। এইচডিএফসি ব্যাঙ্কে কয়েক মাস আগেও বয়স্করা সর্বাধিক পেয়েছেন ৭.৯%। এখন ৭.১%। তা-ও ২১ মাসের কম মেয়াদে। বড় মেয়াদে সুদ আরও কম। অর্থাৎ টাকা পয়সার ব্যাপারে অতীতে কষা অনেক অঙ্কই ভুল প্রমাণিত হতে চলেছে। নতুন করে কষতে হবে। সুদের হার এমন ভাবে কমেছিল ২০২০-তে কোভিড হানার পরে। তবে দুশ্চিন্তা নিয়ে ঘর করলে চলবে না। আয় যাতে তেমন না কমে, তার উপায় বার করতে হবে। পাল্টাতে হবে লগ্নির কৌশল। এ জন্য অতীতের সনাতন ধ্যান ধারণা থেকে কিছুটা বেরিয়ে আসা ভাল। সে জন্য মাথায় রাখতে হবে—
- নতুন প্রজন্মের কিছু ব্যাঙ্ক জমায় বড় সরকারি-বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির তুলনায় সাধারণত ২৫ থেকে ৫০ বেসিস পয়েন্ট বেশি সুদ দেয়। সব তফশীলভুক্ত ব্যাঙ্কেই জমা ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুরক্ষিত।
- ভারত সরকারের পরিবর্তনশীল সুদের ঋণপত্র বা ফ্লোটিং রেট বন্ডে (আরবিআই বন্ড) এখনও সুদ ৮.০৫%। আগামী দিনে কমলেও, এখানে সুরক্ষার পাশাপাশি সুদের হারও বাজারের তুলনায় ভাল থাকারই কথা। যা জাতীয় সঞ্চয়পত্রের (এনএসসি) সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই বন্ডে সুদ সব সময়েই এনএসসি র তুলনায় ৩৫ বেসিস পয়েন্ট বেশি থাকে। এনএসসিতে এখন ৭.৭%। ফলে এই হার ভবিষ্যতে ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমানো হলেও আরবিআই বন্ডে সুদ মিলবে ৭.৫৫% হারে। তবে ৭ বছর মেয়াদি এই বন্ড আগাম ভাঙ্গানোর শর্ত বেশ কঠিন।
- সরকারের স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলিতে সুদের হার এখনও আকর্ষণীয়। প্রবীণদের বিশেষ প্রকল্পে দেওয়া হচ্ছে ৮.২%। অন্যান্যগুলিতেও বাজারের তুলনায় ভাল। প্রতি তিন মাস অন্তর সব স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে সুদের হার পর্যালোচনা করা হয়। রেপো এতটা কমায় অনুমান জুলাই থেকে এগুলিতেও সুদ কমানো হতে পারে। অর্থাৎ হাতে লগ্নিযোগ্য তহবিল থাকলে জুনের মধ্যেই উপযুক্ত প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে কয়েক বছর বেশি সুদের সুবিধা পাওয়া যাবে।
- যাঁদের অল্প ঝুঁকিতে আপত্তি নেই, তাঁদের জন্যে আছে মিউচুয়াল ফান্ডের ব্যালান্সড অথবা হাইব্রিড ফান্ড। একটু বড় মেয়াদে এই ধরনের প্রকল্পে ১২% বা তারও বেশি আয় সম্ভব।
(মতামত ব্যক্তিগত)
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)