E-Paper

জরিমানায় বদল, গ্রাহক চাইলে স্থির ঋণের সুদও, ঋণগ্রহীতাদের সুরাহায় একগুচ্ছ নির্দেশ আরবিআইয়ের

শীর্ষ ব্যাঙ্কের নির্দেশ অনুযায়ী, সুদের হার পুনর্বিন্যাসের সময়েই খুলতে হবে স্থায়ী সুদে বদলের সুযোগ। ব্যাঙ্কিং মহলের দাবি, কার্যকর হওয়ার দিন ধার্য থাকা হারেই তা বাঁধা হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৩ ০৬:১১
An image of Loan

—প্রতীকী চিত্র।

ঋণের চড়া সুদে বিপাকে অনেকেই। কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে মাসিক কিস্তির (ইএমআই) অঙ্ক গোনা, সময়ে ধার শোধও। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার ঋণগ্রহীতাদের কিছুটা অন্তত সুরাহা দিতে ব্যাঙ্ক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য একগুচ্ছ নির্দেশ জারি করল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক।

শীর্ষ ব্যাঙ্কের নির্দেশ অনুযায়ী, যে কোনও গ্রাহক পরিবর্তনশীল সুদে ঋণ নিয়ে থাকলেও, তাঁকে সেই ধার স্থায়ী সুদের হারে শোধের সুযোগ দিতে হবে। সে জন্য কোনও চার্জ নেওয়া হলে, শুরুতেই তা জানাতে হবে স্পষ্ট। কোনও কারণে কেউ ইএমআই দিতে না পারলে, জরিমানা হিসেবে বাড়তি সুদ না চাপিয়ে বরং থোক টাকা গোনার সুযোগ দিতে হবে। সুদ বাড়লে, সেই বেড়ে যাওয়া সুদ মেটাতে মাসিক কিস্তির অঙ্ক নাকি ধার শোধের মেয়াদ নাকি এই দু’টিই মিলিয়ে-মিশিয়ে বাড়ানো সুবিধাজনক হবে, তা ঋণগ্রহীতার সঙ্গে কথা বলেই ঠিক করতে হবে। সুযোগ দিতে হবে যে কোনও সময়ে পুরো বা আংশিক আগাম শোধের।

শুধু তা-ই নয়, আগামী দিনে ধার মঞ্জুর করার সময়ে সুদ বাড়লে, গ্রাহকের উপর কতটা চাপ পড়তে পারে (মাসিক কিস্তি এবং শোধের মেয়াদের সম্ভাব্য বৃদ্ধি সম্পর্কে) তা-ও গ্রাহককে পরিষ্কার জানাতে বলা হয়েছে। জরিমানা হিসাবে বাড়তি সুদ না নিয়ে থোক টাকা নেওয়ার বিষয়টি ১ জানুয়ারি থেকে চালু করতে হবে ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে। বাদবাকি নিয়ম কার্যকর করার ব্যবস্থা করতে হবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে।

ব্যাঙ্কিং মহলের দাবি, পরিবর্তনশীল সুদ মানে ব্যাঙ্ক তার হার বাড়ালে ঋণগ্রহীতাকে বেশি গুনতে হবে। কমালে তাঁদের আর্থিক বোঝা কমবে। স্থির সুদে ঋণ নেওয়ার অর্থ, তা কোনও পরিস্থিতিতেই বদলাবে না। বাজারে সুদ বাড়লেও বইতে হবে না তার চাপ। চড়তে থাকা সুদের জমানায় যা গ্রাহকের পক্ষে কিছুটা নিশ্চিন্তির। বর্তমানে গৃহঋণ-সহ প্রায় সব ধারই দেওয়া হয় পরিবর্তনশীল সুদে।

সংশ্লিষ্ট মহলের অবশ্য বক্তব্য, নতুন নিয়মে সুদ কমলে গ্রাহক তাতে স্থায়ী সুদের হার বেঁধে অনেকখানি সুবিধা নিতে পারবেন ঠিকই। তবে বর্তমানে চড়া সুদে যাঁরা খাবি খাচ্ছেন, তাঁদের সমস্যা মিটল না। কারণ খরচের বহর কমার ব্যবস্থা হয়নি। শুধু সুদের হার আরও বাড়লে, তার ধাক্কা থেকে বাঁচানোর পথ তৈরি করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আনাজ-সহ চড়া খাদ্যপণ্যের হাত ধরে ফের খুচরো মূল্যবৃদ্ধি চড়ছে। তাকে রুখতে সুদ যে আরও বাড়তে পারে, তারই ইঙ্গিত আরবিআইয়ের এই নির্দেশে। সাম্প্রতিক ঋণনীতিতে পরিবর্তনশীল সুদকে স্থায়ী সুদে বদলের মতো প্রস্তাব দিয়ে এর জমি তৈরি করে রেখেছিল তারা। কত বার স্থায়ী এবং পরিবর্তনশীল সুদকে বদলানো যাবে, তার উল্লেখ থাকতে হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পর্ষদের তৈরি নীতিতে।

শীর্ষ ব্যাঙ্কের নির্দেশ অনুযায়ী, সুদের হার পুনর্বিন্যাসের সময়েই খুলতে হবে স্থায়ী সুদে বদলের সুযোগ। ব্যাঙ্কিং মহলের দাবি, কার্যকর হওয়ার দিন ধার্য থাকা হারেই তা বাঁধা হবে। আরবিআই বলেছে, কোনও সাধারণ ঋণগ্রহীতা মাসিক কিস্তি দিতে না পারলে বা ঋণের চুক্তির শর্ত ভাঙলেও তাঁর উপরে জরিমানা হিসাবে বাড়তি সুদ চাপানো যাবে না। শুধু থোক টাকা চাওয়া যেতে পারে। তবে সেই টাকার অঙ্কও নির্ধারণ করতে হবে যুক্তিসঙ্গত ভাবে। একাংশ বলছেন, ওই জরিমানা যাতে বিপুল না হয় সেটাই নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে আরবিআই। যে কারণে তারা বলেছে, এমন ক্ষেত্রে শিল্পমহলের থেকে যে টাকা নেওয়া হয় তার থেকে বেশি হতে পারবে না। অন্য অংশের প্রশ্ন, বিষয়টি আপেক্ষিক। কার জন্য কত টাকা জরিমানা যুক্তিসঙ্গত সেটা ঠিক করা হবে কী করে? তার মাপকাঠিই বা কী? আরবিআইয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বার্তা, কিছু ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্রেফ আয় বাড়াতে জরিমানা বাবদ অতিরিক্ত সুদ আদায় করছে। তা আটকাতেই নিয়ম বদলানো হল। তবে তা ক্রেডিট কার্ড, বৈদেশিক বাণিজ্য বা ব্যবসার জন্য নেওয়া ঋণের মতো কিছু ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক বলেছে, ঋণ শোধ নিয়ে গ্রাহকদের অনেক অভিযোগ জমা পড়ছে। একেই সুদ বাড়ায় একাংশ বিপাকে পড়েছেন। তার উপর কিছু ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বাড়তি টাকা আদায়ের জন্য তাদের কেউ কেউ গ্রাহকের সঙ্গে আলোচনা না করেই বাড়িয়ে দিচ্ছে ঋণ শোধের মেয়াদ। অনেকে আবার ইএমআইয়ের অঙ্ক বাড়াচ্ছে। যা বহন করাই কঠিন হচ্ছে অনেকের পক্ষে। এই পরিস্থিতিতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের নির্দেশ অন্তত কিছু মানুষের ভরসা হতে পারে বলে মনে করছে বিশেষজ্ঞ মহল।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Bank Loans Reserve Bank of India (RBI) Bank Interest

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy