Advertisement
E-Paper

ঘাটতি বাঁধতে জিয়নকাঠি

লোকসভা ভোটের আগে মানুষের মন জিততে অন্তর্বর্তী বাজেটেও উপুড়হস্ত হয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু তেমনই চোখ রাঙাচ্ছে রাজকোষ ঘাটতি মাত্রাছাড়া হওয়ার আশঙ্কা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৫৯
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ডের বৈঠকে যোগ দেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ডের বৈঠকে যোগ দেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

কানায় কানায় আশা পূরণ।

লোকসভা ভোটের আগে মানুষের মন জিততে অন্তর্বর্তী বাজেটেও উপুড়হস্ত হয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু তেমনই চোখ রাঙাচ্ছে রাজকোষ ঘাটতি মাত্রাছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম হাতিয়ার হিসেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ২৮ হাজার কোটি টাকা অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড পাওয়ার আশার কথা অনেক দিন ধরেই বলে আসছে কেন্দ্র। শেষমেশ তা মিটিয়ে সেই অঙ্কই অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড হিসেবে দেওয়ার কথা ঘোষণা করল শীর্ষ ব্যাঙ্ক। প্রশ্ন উঠছে, তবে কি কেন্দ্রের চাপের কাছে মাথা নোয়াল তারা?

সোমবার দিল্লিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কেন্দ্রীয় বোর্ডের বৈঠকে যোগ দেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। আলোচনার পরে তিনি এবং শীর্ষ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস বলেন, অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। শক্তিকান্ত বলেন, কেন্দ্রীয় বোর্ডে এই সিদ্ধান্ত হয় না। তা হয় ব্যাঙ্কের বোর্ড বৈঠকে। বাজেটে যে সব জনমোহিনী ঘোষণা হয়েছে, তার টাকা রয়েছে কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে জেটলির জবাব, ‘‘রাজস্ব আদায় দেখেই বাজেটে হিসেব কষা হয়েছে।’’ কিন্তু তার পরেই অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ডের ঘোষণা।

ডিভিডেন্ড কথা

• কেন্দ্রকে ২৮,০০০ কোটি টাকা অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড দেবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
• এই নিয়ে পর পর দু’বছর এমন অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড পাচ্ছে কেন্দ্র।
• গত আর্থিক বছরে (২০১৭-১৮) মোট ৫০,০০০ কোটি টাকা ডিভিডেন্ড দিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার মধ্যে ১০,০০০ কোটি কোষাগারে এসেছিল ২০১৮ সালের ২৭ মার্চ। অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড হিসেবে।
• ৩১ মার্চের আগেই এই টাকা হাতে এলে রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যের মধ্যে (জিডিপির ৩.৪%) বেঁধে রাখতে সুবিধা হবে সরকারের।

বিতর্ক কোথায়?

• রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর্থিক বছর ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন। প্রথা হল, সেই অর্থবর্ষ শেষে যাবতীয় হিসেব-নিকেশ সারার পরে সাধারণত অগস্ট নাগাদ উদ্বৃত্তের ভাগ হিসেবে ডিভিডেন্ড দেওয়ার কথা ঘোষণা করে শীর্ষ ব্যাঙ্ক।
• আরবিআই আইনের ৪৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী, ফেরত মিলবে না বা ফেরত পাওয়া নিয়ে সংশয় আছে— এমন সমস্ত ধারের জন্য টাকা তুলে রাখা, কর্মীদের বেতন ও পেনশন, ডেপ্রিসিয়েশন খাতে বরাদ্দ ইত্যাদির পরে মুনাফার বাকি অংশ কেন্দ্রকে দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই কারণেই বছরের শেষে পুরো হিসেব হওয়া জরুরি।
• অভিযোগ, ভোটের আগে জনমোহিনী প্রকল্পে টাকা বরাদ্দ করতে গিয়ে ঘাটতিতে লাগাম পড়াতে নাভিশ্বাস কেন্দ্র। আর সেই কারণেই অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ডের জন্য ক্রমাগত চাপ বাড়াচ্ছিল তারা। যাতে সেই টাকা মার্চের মধ্যেই হাতে আসে। তা কাজে লাগিয়ে সম্ভব হয় ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ।
• অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, তবে কি সেই চাপে মাথা নোয়াতে বাধ্য হল শীর্ষ ব্যাঙ্ক?

এ দিনও জেটলির দাবি ছিল, ডিভিডেন্ডের অঙ্ক স্বাধীন ভাবে ঠিক করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। কিন্তু আর্থিক বিষয়ক সচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ বাজেটের পরেই বলেন, শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাছ থেকে বাড়তি ২৮ হাজার কোটির আশা করছে কেন্দ্র। ওই অর্থই অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ড হিসেবে পাচ্ছে তারা।

অগস্টে ডিভিডেন্ড মিলেছিল ৪০ হাজার কোটি টাকা। এ বার আরও ২৮ হাজার কোটি (মোট ৬৮ হাজার কোটি) হাতে আসায় ঘাটতির সংশোধিত লক্ষ্য (৩.৪%) ছুঁতে কিছুটা সুবিধা হবে বলে মনে করছেন অনেকে। বিশেষত যেখানে বাজেটে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫৪,৮১৭ কোটি মিলবে বলে ধরা হয়েছিল। প্রাক্তন অর্থসচিব আর গোপালন বলেন, ‘‘গত বছর চালু অন্তর্বর্তী ডিভিডেন্ডের প্রথা যে এ বছরও রাখা হবে, তাতে আশ্চর্য কী?’’

অনেকে বলছেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে বাড়তি অর্থের জন্য চাপ প্রাক্তন গভর্নর উর্জিত পটেলের বিদায়ের অন্যতম কারণ। তার পরই আসেন প্রাক্তন আর্থিক বিষয়ক সচিব এবং ‘নোটবন্দি সামলানো’ শক্তিকান্ত। অনেকের মতে, এখন ‘মাথা নোয়ানো’ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারেন তিনি।

Reserve bank of India Dividend RBI
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy