Advertisement
E-Paper

চিন্তা বাড়িয়ে উধাও ১৪ আনা

বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর এখন ঊর্ধ্বমুখী। তাই এই বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখতে হিমসিম খেতে হচ্ছে জোটলিকে। আর্থিক সমীক্ষা যদি হাওয়া মোরগ হয়, তাহলে ঘাটতিতে রাশ কিছুটা শিথিল করার ইঙ্গিতও যেন এ দিন দিয়ে রাখলেন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:০৭
অভিমুখ: কোথায় দাঁড়িয়ে অর্থনীতি? বাজেটেই বা জোর কীসে? দু’য়েরই ইঙ্গিত বয়ে সংসদে আর্থিক সমীক্ষা পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তার আগে প্রধানমন্ত্রীর পাশে। পিটিআই

অভিমুখ: কোথায় দাঁড়িয়ে অর্থনীতি? বাজেটেই বা জোর কীসে? দু’য়েরই ইঙ্গিত বয়ে সংসদে আর্থিক সমীক্ষা পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। তার আগে প্রধানমন্ত্রীর পাশে। পিটিআই

পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা পকেটে পুরে এত দিন বেশ নিশ্চিন্তেই ছিলেন অরুণ জেটলি। রাজকোষ ঘাটতি নিয়েও অনেক দিন অর্থমন্ত্রীর তেমন চিন্তা ছিল না। কারণ, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম নেমে গিয়েছিল তলানিতে। ফলে ভারতের সেই খাতে আমদানি খরচ কমে গিয়েছিল অনেকখানি। আর সেই সুযোগে তেলের উপর উৎপাদন শুল্ক বাড়িয়ে রাজকোষ ভরছিলেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের ইঙ্গিত, আশা ছিল, অন্তত আরও কিছু দিন এমনটাই চলবে। কিন্তু সেই সুখের দিনে তাল কেটেছে। বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর এখন ঊর্ধ্বমুখী। তাই এই বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে রাজকোষ ঘাটতিকে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখতে হিমসিম খেতে হচ্ছে জোটলিকে। আর্থিক সমীক্ষা যদি হাওয়া মোরগ হয়, তাহলে ঘাটতিতে রাশ কিছুটা শিথিল করার ইঙ্গিতও যেন এ দিন দিয়ে রাখলেন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন।

সুব্রহ্মণ্যন এ দিন মেনে নিয়েছেন, ‘‘ব্যারেল প্রতি অশোধিত তেলের দাম যে এত তাড়তাড়ি ফের ৫৫-৬০ ডলার পেরিয়ে যাবে, তা আমরা আঁচ করতে পারিনি।’’ এক দিকে আমদানি খরচ বেড়েছে। অন্য দিকে, অশোধিত তেলের দাম বাড়ার পরেও পেট্রোল-ডিজেলের দাম যাতে নাগালের মধ্যে থাকে, তার জন্য উৎপাদন শুল্ক কমানোর দাবি উঠেছে। ফলে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার সুবিধে ফুরোতেই এখন রাজকোষ ঘাটতি বেঁধে রেখে বৃদ্ধির হারকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চিন্তা বেড়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকারের।

এ দিন আর্থিক সমীক্ষা ইঙ্গিত দিল, এ বছর রাজকোষ ঘাটতি কিছুটা লাগামছাড়া হতে পারে। ঘাটতিকে ধাপে ধাপে বাগে আনার যে প্রক্রিয়া চলছিল, তাতে ‘বিরতি’র সম্ভাবনা না কি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

আগামী ১ ফেব্রুয়ারির বাজেটই ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। ফলে গ্রাম-গরিবের জন্য দরাজ হাতে টাকা ঢালতে হবে জেটলিকে। এ দিকে জিএসটি থেকে আয় এখনও আশানুরূপ নয়। মোট ঘাটতির লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫.৫ লক্ষ কোটি টাকা। নভেম্বরেই তা ৬.১ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে। ফলে রাজকোষ ঘাটতি লক্ষ্যমাত্রার (জিডিপির ৩.২%) মধ্যে বেঁধে রাখা যাবে না বলে জল্পনা চলছিল অনেক দিন ধরেই। সমীক্ষা বস্তুত সেই জল্পনাতেই সিলমোহর বসিয়েছে।

সাফল্যের দাবি

• নোট বাতিল আর জিএসটির প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে অর্থনীতি

• চলতি অর্থবর্ষে সম্ভাব্য বৃদ্ধি ৬.৭৫%। আগের পূর্বাভাসের (৬.৫%) থেকে বেশি

• আগামী আর্থিক বছরে ৭%-৭.৫% বৃদ্ধির পূর্বাভাস

• নোটবন্দির পরে প্রত্যক্ষ করদাতা বেড়েছে ১৮ লক্ষ। জিএসটিতে পরোক্ষ করদাতা বেড়েছে ৫০%

• খুচরো বাজারে গড় মূল্যবৃদ্ধি এই অর্থবর্ষে ৩.৩%। ছ’বছরে সবচেয়ে কম

• বেড়েছে রেটিং। উন্নতি সহজে ব্যবসার র‌্যাঙ্কিংয়েও

ঝুঁকি যেখানে

• দ্রুত বাড়ছে অশোধিত তেলের দাম। তাতে কঠিন হবে ঘাটতিতে লাগাম। ধাক্কা খাবে জিডিপি। মুখ তুলতে পারে মূল্যবৃদ্ধিও


শেয়ার বাজারে বড় ধস নামলে, জোর ধাক্কা অর্থনীতিতে


মাত্রাছাড়া দূষণে পরিবেশের ভোলবদল

সামনে লক্ষ্য

কৃষিকে চাঙ্গা করা


এয়ার ইন্ডিয়া বেসরকারিকরণ


ব্যাঙ্কে দ্রুত মূলধন। ঋণ খেলাপে রাশ।


দ্রুত পথে আনা ধারে ডুবে থাকা সংস্থাকেও


তেলের দাম চড়া থাকলে এবং শেয়ার বাজার টালমাটাল হলে, তা সামাল দিতে আলাদা নীতি


বিনিয়োগ বৃদ্ধির রাস্তা তৈরি


ব্যবসার পথ মসৃণ করতে বিচার ব্যবস্থায় ঢিলেমিতে রাশ


কর সংক্রান্ত মামলা এড়াতে সরকারি পদক্ষেপ


দূষণ রুখতে কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতা

চোখ টেনেছে


মেয়েদের প্রতি বৈষম্য ও হিংসা থামানোর প্রতীক হিসেবে সমীক্ষার মলাটের রং গোলাপি!


ছেলে না হওয়া পর্যন্ত জারি সন্তান জন্ম দেওয়ার প্রবণতা! ছেলে-মেয়ে সমান দেখা বহু দূর

সুব্রহ্মণ্যন মনে করিয়েছেন, এটি ভোটের বছর। তাই ঘাটতির এমন কোনও লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া উচিত নয়, যা বিশ্বাসযোগ্য হবে না। উৎপাদন শুল্ক কমানো হবে কি না, সরকার ভোটের বছরে ঘাটতি বাড়িয়েও বাড়তি খরচ করবে কি না, সে সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। কিন্তু দু’য়ের মধ্যে ভারসাম্য রেখে চলাই যুক্তিসঙ্গত বলে তাঁর দাবি।

তবে তাঁর যুক্তি, তেলের দাম বাড়লেও ঘাটতি লাগামের মধ্যে রাখাটাই অর্থনীতির নিয়ম। কারণ জ্বালানি খরচ বেড়ে গেলে, মানুষের হাতে অন্যত্র খরচের মতো টাকা কম থাকবে। ফলে বাজারে কেনাকাটা কমবে। জ্বালানির দামের সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির হারও পাল্লা দিয়ে বাড়বে। তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও সুদ কমাবে না। বরং বাড়াতে চাইবে। তা ছাড়া, আমদানির খরচ বেড়ে গেলে, বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ঘাটতিও মাথা চাড়া দেওয়ার আশঙ্কা।

উপদেষ্টার ব্যাখ্যা, প্রতি ব্যারেলে ১০ ডলার করে দাম বাড়ার মানে, জিডিপি ০.২ থেকে ০.৩ শতাংশ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়া। সেই সঙ্গে বিদেশি মুদ্রার আয়-ব্যয়ের ঘাটতি ৯০০ থেকে ১ হাজার কোটি ডলার বেড়ে যাওয়া।

বস্তুত মোদী সরকার ভেবেছিল, আমেরিকার তুলনায় সস্তার শেল অয়েল বাজারে চলে আসবে। সৌদি আরবও তেল উৎপাদন কমাবে না। হয়েছে তার ঠিক উল্টো। মার্কিন সংস্থাগুলি শেল অয়েলে মুনাফার অঙ্ক কষছে। সৌদি আরব তেল উৎপাদনে রাশ টেনেছে। সব মিলিয়ে চলতি আর্থিক বছরের প্রথম ন’মাসে অশোধিত তেলের দাম গত বছরের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেড়েছে।

যদিও এর আগে এ প্রসঙ্গে স্টেট ব্যাঙ্কের গবেষণা শাখা জানিয়েছিল, চলতি অর্থবর্ষে বাজেট অনুমানের তুলনায় অনেক কম করের টাকা কোষাগারে এলেও সেই ঘাটতির অনেকটাই পূরণ করে দেবে বিলগ্নিকরণ। আগের বাজেটে এই খাতে ৭২,৫০০ কোটি ঘরে তোলার কথা বলেছিল কেন্দ্র। দেখা যাচ্ছে, তা হতে পারে ৯০ হাজার কোটি। এই বাড়তি আয় ঘাটতিকে কিছুটা অন্তত ঢেকে দেবে বলে আশা অনেকের।

Economic Survey 2018 Crude Oil GDP Price Rise 2018 Budget Expectations বাজেট প্রত্যাশা ২০১৮ Budget 2018 বাজেট ২০১৮ Arun Jaitley Narendra Modi Arvind Subramanian অরুণ জেটলি অরবিন্দ সুব্রহ্মণ্যন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy